কওমি শিক্ষার্থীদের বিদেশে উচ্চশিক্ষা: সংকট ও সমাধান

কওমি শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষা গ্রহণের উদ্দেশ্যে বিদেশে যাওয়ার প্রবণতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষ করে কওমী সনদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির পর বিদেশে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে কওমি শিক্ষার্থীদের মাঝে ব্যাপক আগ্রহ-উদ্দীপনার সঞ্চার হয়েছে। যদিও ইতিপূর্বে বহু কওমি শিক্ষার্থী ব্যক্তিগত উদ্যোগ ও প্রচেষ্টায় দেশ-বিদেশের প্রতিশ্ষ্ঠিত বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সুনামের সঙ্গে উচ্চশিক্ষা সমাপ্ত করে কর্মজীবনে উজ্জ্বল ভূমিকা রেখেছেন। কারণ কওমি সনদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির পরও এই সার্টিফিকেট দিয়ে উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে কিছু জটিলতা রয়ে গেছে—

এক. দাওরায়ে হাদীসের সনদকে ইসলামিক স্টাডিজ ও আরবী সাহিত্যে স্বতন্ত্র মাস্টার্স এর মান দেয়া হয়েছে। এটাকে বলা হয় “ওয়ান স্টপ মাস্টার্স”। এর মানে হলো, এর আগে নীচের একাডেমিক ধাপগুলো যথাক্রমে- পিইসি, এসএসসি, এইচএসসি ও অনার্স এর মতো শিক্ষাস্তরগুলোর সরকারী স্বীকৃতি ও সনদ নেই। এগুলো ছাড়াই সরাসরি মাস্টার্স পাস।

দুই. বিশ্বের প্রায় সকল দেশে উচ্চতর শিক্ষা (অনার্স) অর্জনের জন্য এইচএসসিকে মৌলিক যোগ্যতা ধরা হয়। মাস্টার্সের জন্য অনার্স এবং পিএইচডির জন্য মাস্টার্স/এমফিল সনদের প্রয়োজন হয়। কওমিতে এই সার্টিফিকেটগুলো না থাকার কারণে শিক্ষার্থীরা বিদেশে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। সুতরাং উল্লেখিত সার্টিফিকেটগুলোর ব্যবস্থা বা সরকারী স্বীকৃতিও অত্যাবশ্যক।

তিন. আন্তর্জাতিকভাবে মাস্টার্স ডিগ্রি প্রদানের দায়িত্ব স্বীকৃত কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের। কোনো শিক্ষাবোর্ড থেকে এ ডিগ্রি প্রদান করা হয় না। কিন্তু কওমী সনদকে স্বতন্ত্র মাস্টার্স ডিগ্রির মান দেয়া হয়েছে একটি বোর্ডের অধীনে। বোর্ড কর্তৃক মাস্টার্স ডিগ্রি প্রদান সর্বজন স্বীকৃত নয়।

এর বাইরে আরোও নানা জটিলতা ও অসঙ্গতি রয়েছে। যেমন আন্তর্জাতিক স্বীকৃত পাঠ্যক্রম ও পাঠদান পদ্ধতির অনুপস্থিতি, সনদের নাম ও ফর্মেটে স্বীকৃত নিয়মের অননুসরণ, গ্রেডিং পদ্ধতি ফলো না করাসহ বিভিন্ন কারণে দাওরায়ে হাদীসের সনদের মান আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এখনো পর্যন্ত মাস্টার্সের স্বীকৃত মানদন্ডে উত্তীর্ণ হয় নি। ফলে এই সনদের এই স্বীকৃতি বহি:বিশ্বে এখনো গ্রহনযোগ্যতা পায়নি এবং তা দিয়ে উচ্চশিক্ষার কোনো সুযোগ তৈরি হয়নি।

তাছাড়া আল-হাইয়াতুল উলইয়ার পক্ষ থেকেও অন্যান্য দেশের শিক্ষা মন্ত্রণালয় কিংবা স্বতন্ত্রভাবে কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে এই সনদ দিয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের ব্যাপারে এখনো পর্যন্ত কোনো মুআদালা বা শিক্ষাচুক্তি করা হয় নি। বিদেশে শিক্ষার্থী ভর্তির যেহেতু এটিও একটি স্বীকৃত নিয়ম তাই আমি মনে করি আল-হাইয়াতুল উলইয়াসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যদি আন্তরিকভাবে চেষ্টা করেন তাহলে অন্তত সৌদি আরব, কাতার, মিশর, লিবিয়া, বাহরাইন ও মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশে হলেও কওমি শিক্ষার্থীরা দাওরায়ে হাদীসের সনদ দিয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পাবে।

বিদেশে উচ্চশিক্ষা অর্জন প্রতিটি কওমি শিক্ষার্থীদের অধিকার। রাষ্ট্রের দায়িত্ব তাদেরকে এ সুযোগ করে দেয়া । আমি আশা করি বিদেশে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে কওমি শিক্ষার্থীদের সকল সমস্যা ও সংকট নিরসনে সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

যাকারিয়্যা মাহমূদ মাদানী
বি.এ. (অনার্স), এম.এ, এমফিল: মদীনা বিশ্ববিদ্যালয়, সৌদি আরব ও
আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম।
প্রিন্সিপাল: মানাহিল মডেল মাদরাসা ও
মাদরাসাতুল মাদীনাহ লিল বানাত, মিরপুর, ঢাকা।
পরিচালক: ভয়েস অব ইসলাম।
[email protected]

এ সম্পর্কিত আরও পোস্ট

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to top button