ইদ্দত পালন ব্যতিত বিয়ের হুকুম
প্রশ্ন: আমাতুল্লাহ আমার পরিচিত এক বোন। সে তার স্বামীকে কোর্টের মাধ্যমে ডিভোর্স দিয়ে ইদ্দত পালন না করেই তার পূর্বপরিচিত আব্দুল্লাহ নামের এককজন পুরুষকে বিয়ে করে দীর্ঘ কয়েক বছর যাবত তার সঙ্গে ঘর-সংসার করে আসছে। আমি শুনেছি যে, ইদ্দত পালন ছাড়া বিবাহ বৈধ হয় না। যদি বৈধ না হয় তাহলে এখন তাদের করণীয় কী এবং এই বোন ইদ্দত পালন করবে কীভাবে? উল্লেখ্য যে, বর্তমান স্বামীর সঙ্গে বৈবাহিক জীবন যাপন করতে এই বোনের আগ্রহ রয়েছে। এখন সে কি তার বর্তমান স্বামীকে দ্বিতীয়বার বিবাহ করতে পারবে?
উত্তর: প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী আব্দুল্লাহর সাথে আমাতুল্লাহর এ বিবাহটি শুদ্ধ হয়নি। কেননা ইদ্দত পালন ব্যতিত অন্য কোনো পুরুষের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া জায়েয নেই। এতো বছর একত্রে বসবাস করাও তাদের জন্য হারাম হয়েছে। তাদের কর্তব্য হলো, এখনই আলাদা হয়ে যাওয়া এবং আল্লাহ তাআলার নিকট তাদের এই কৃতকর্মের জন্য তওবা-ইস্তেগফার করা। তবে যেহেতু আমাতুল্লাহ উল্লেখিত আব্দুল্লাহর সঙ্গে বৈবাহিক জীবন যাপনে আগ্রহী তাই তালাকের পূর্ণ ইদ্দত (তিনটি মাসিক স্রাব) অতিবাহিত হলে সে আব্দুল্লাহর সঙ্গে নতুনভাবে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে দাম্পত্য জীবন যাপন করতে পারবে।
উল্লেখ্য যে, কারো কারো ধারণা হলো, স্বামী যদি স্ত্রীকে তালাক প্রদান করে তাহলেই কেবল স্ত্রী ইদ্দত পালন করবে, স্ত্রী যদি স্বামীকে সঙ্গত কারণে কোর্টের মাধ্যমে ডিভোর্স দেয় তাহলে তাকে ইদ্দত পালন করতে হয় না। তাদের এই ধারণা একদমই ঠিক নয়। এটি নিতান্তই একটি ভুল ধারণা। বরং কুরআন ও সুন্নাহর বক্তব্য হলো, স্বামী স্ত্রীকে তালাক দিক আর স্ত্রী স্বামীকে আইন সম্মতভাবে কোর্টের মাধ্যমে ডিভোর্স দিক বা খোলা তালাক নিক একই কথা। উভয় অবস্থাতেই স্ত্রীকে সুনির্দিষ্ট ইদ্দত পালন করতেই হবে।
আল্লাহ্ তাআলা বলেন: وَالْمُطَلَّقَاتُ يَتَرَبَّصْنَ بِأَنفُسِهِنَّ ثَلَاثَةَ قُرُوءٍ
আর তালাকপ্রাপ্তা নারী নিজেকে অপেক্ষায় রাখবে তিন হায়েয পর্যন্ত। { সূরা আল বাকারা: ২২৮}
আল্লাহ্ তাআলা আরোও বলেন: وَلَا تَعْزِمُوا عُقْدَةَ النِّكَاحِ حَتَّىٰ يَبْلُغَ الْكِتَابُ أَجَلَهُ
আর তোমরা ইদ্দত সমাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত বিবাহ করার কোনো ইচ্ছা করো না। {সূরা আল বাকারা: ২৩৫}
হাদীসে এসেছে: عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، جَعَلَ الْخُلْعَ تَطْلِيقَةً بَائِنَةً.
ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খোলাকে এক তালাকে বাইন সাব্যস্ত করেছেন। {সুনানে দারা কুতনী, হাদীস নং-৪০২৫, মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-১৮৪৪৮, মুজামে আবী ইয়ালা, হাদীস নং-২৩০, আসসুনানুল কুবরা লিলবায়হাকী, হাদীস নং-১৪৮৬৫}
ইসলামী আইন শাস্ত্রের বিভিন্ন গ্রন্থে এসেছে:
لا يجوز للرجل أن يتزوج زوجة غيره، وكذالك المعتدة سواء كانت العدة عن طالق، أو وفاة (الفتاوى الهندية-1/280)
ومنها ان لا تكون معتدة الغير لقوله: ولا تعزموا عقدة النكاح حتى يبلغ الكتاب أجله أى ما كتب عليها من التربص (بدائع الصنائع.
أَمَّا نِكَاحُ مَنْكُوحَةِ الْغَيْرِ وَمُعْتَدَّتِهِ فَالدُّخُولُ فِيهِ لَا يُوجِبُ الْعِدَّةَ إنْ عُلِمَ أَنَّهَا لِلْغَيْرِ لِأَنَّهُ لَمْ يَقُلْ أَحَدٌ بِجَوَازِهِ فَلَمْ يَنْعَقِدْ أَصْلًا. (رد المحتار-4/274، البحر الرائق-4/242)
(সূরা আল বাকারা, আয়াত: ২৩৫, আহকামুল কুরআন ১/৫৯৬, বাদায়েউস সানায়ে ৩/৩২৩, আলবাহরুর রায়েক ৪/১৪৩, আদ্দুররুল মুখতার ৩/৪০৯-৪১০, ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২৮০, আদ্দুররুল মুনতাকা ২/৮৯, ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৩৩০, আলবাহরুর রায়েক ৩/১৭২, বযলুল মাজহুদ ৩/২৮৮, আওযাজুল মাসালিক ১০/১০৯)