হজ্জ ও ওমরাহ ওয়াজিব হওয়ার শর্তাবলী
প্রত্যেকটি মুসলিম, বোধশক্তি সম্পন্ন, প্রাপ্ত বয়ষ্ক, স্বাধীন এবং সামর্থ্যবান ব্যক্তির উপর হজ্জ ও ওমরাহ ফরয। মহিলাদের ক্ষেত্রে ৬ষ্ঠ শর্ত যুক্ত হবে; আর তা হচ্ছে, তাদের সাথে মাহরাম পুরুষ থাকতে হবে।
* অতএব, ইসলাম গ্রহণের পূর্বে কোন কাফের হজ্জ এবং ওমরার আদেশে আদিষ্ট নয়; বরং কাফের অবস্থায় কেউ তা আদায় করলেও শুদ্ধ হবে না। কেননা কাফের সর্বপ্রথম শরী‘আতের উছূল (أصول) বা ঈমান আনয়নে আদিষ্ট। তবে উছূল বা মৌলিক বিষয়ের সাথে শরী‘আতের অন্যান্য ফুরূ বা শাখা-প্রশাখায় তারা আদিষ্ট কিনা সে ব্যাপারে মতানৈক্য থাকলেও সঠিক কথা হচ্ছে, তারা মূল উছূলের অনুগামী হয়ে শরী‘আতের অন্যান্য ফুরূ বা শাখা-প্রশাখা প্রতিপালনেও আদিষ্ট। মহান আল্লাহ বলেন,
﴿وَوَيۡلٞ لِّلۡمُشۡرِكِينَ ٦ ٱلَّذِينَ لَا يُؤۡتُونَ ٱلزَّكَوٰةَ وَهُم بِٱلۡأٓخِرَةِ هُمۡ كَٰفِرُونَ ٧﴾ [فصلت: ٦، ٧]
‘আর মুশরিকদের জন্য রয়েছে দুর্ভোগ, যারা যাকাত দেয় না এবং পরকালকে অস্বীকার করে’ (ফুছছিলাত, ৬-৭)।
অনুরূপভাবে জাহান্নামে কাফেরদের বক্তব্য তুলে ধরে আল্লাহ বলেন,
﴿ قَالُواْ لَمۡ نَكُ مِنَ ٱلۡمُصَلِّينَ ٤٣ وَلَمۡ نَكُ نُطۡعِمُ ٱلۡمِسۡكِينَ ٤٤ وَكُنَّا نَخُوضُ مَعَ ٱلۡخَآئِضِينَ ٤٥ وَكُنَّا نُكَذِّبُ بِيَوۡمِ ٱلدِّينِ ٤٦ حَتَّىٰٓ أَتَىٰنَا ٱلۡيَقِينُ ٤٧ ﴾ [المدثر: ٤٣، ٤٧]
‘তারা বলবে, আমরা ছালাত আদায় করতাম না, অভাবগ্রস্তকে আহার্য্য দিতাম না। আমরা সমালোচকদের সাথে সমালোচনা করতাম। আর আমরা মৃত্যুবধি প্রতিফল দিবসকে অস্বীকার করতাম’ (মুদ্দাছছির ৪৩-৪৭)। অন্যত্র মহান আল্লাহ বলেন,
﴿ فَلَا صَدَّقَ وَلَا صَلَّىٰ ٣١ وَلَٰكِن كَذَّبَ وَتَوَلَّىٰ ٣٢ ﴾ [القيامة: ٣١، ٣٢]
‘সে বিশ্বাস করেনি এবং ছালাত আদায় করেনি; পরন্তু মিথ্যারোপ করেছে ও পৃষ্ঠ প্রদর্শন করেছে’ (ক্বিয়ামাহ ৩১-৩২)। শরী‘আতের ‘ফুরূ’ (فروع) বা শাখা-প্রশাখাতে তাদেরকে সম্বোধন করার অর্থ হল, উছূল এবং ফুরূ ত্যাগ করার কারণে তাদেরকে অতিরিক্ত শাস্তি দেওয়া হবে। আর এ কারণেই মুসলিমগণ যেমন জান্নাতে মর্যাদার দিক দিয়ে সমান হবে না, তেমনি কাফেররাও জাহান্নামের নিম্ন স্তরে অবস্থানের দিক দিয়ে সমান হবে না। আর কুফরীর ধরন বিভিন্ন হওয়ার কারণে জাহান্নামে তাদের অবস্থানও বিভিন্ন হবে। যেমনঃ একজন মুনাফিক্ব, অগ্নিপূজক ও ইয়াহুদী-খৃষ্টানের স্বাভাবিক কুফর এবং তাদের অন্য আরেক জন কর্তৃক কোনো মুসলিমকে আল্লাহ্র রাস্তা থেকে বাধা প্রদানের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। আর সেজন্যই মহান আল্লাহ বলেন,
﴿ ٱلَّذِينَ كَفَرُواْ وَصَدُّواْ عَن سَبِيلِ ٱللَّهِ زِدۡنَٰهُمۡ عَذَابٗا فَوۡقَ ٱلۡعَذَابِ بِمَا كَانُواْ يُفۡسِدُونَ ٨٨ ﴾ [النحل: ٨٨]
‘যারা কাফের হয়েছে এবং আল্লাহ্র পথে বাধা সৃষ্টি করেছে, আমি তাদেরকে আযাবের পর আযাব বাড়িয়ে দেব। কারণ, তারা অশান্তি সৃষ্টি করত’ (নাহ্ল ৮৮)। হাফেয ইবনে কাছীর (রহেমাহুল্লাহ) বলেন, ‘অর্থাৎ তাদের কুফরীর কারণে শাস্তি দেওয়া হবে, আর লোকদেরকে হক্বের পথ থেকে বাধা দানের কারণে দ্বিগুণ শাস্তি দেওয়া হবে’। মহান আল্লাহ বলেন,
﴿ إِنَّ ٱلَّذِينَ كَفَرُواْ بَعۡدَ إِيمَٰنِهِمۡ ثُمَّ ٱزۡدَادُواْ كُفۡرٗا لَّن تُقۡبَلَ تَوۡبَتُهُمۡ وَأُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلضَّآلُّونَ ٩٠ ﴾ [ال عمران: ٩٠]
‘যারা ঈমান আনার পর কুফরী করেছে এবং কুফরীতে বৃদ্ধি ঘটিয়েছে, কস্মিনকালেও তাদের তওবা ক্ববুল করা হবে না। আর তারাই হচ্ছে পথভ্রষ্ট’ (আলে ইমরান ৯০)। অন্য আয়াতে এসেছে,
﴿ إِنَّ ٱلَّذِينَ كَفَرُواْ وَظَلَمُواْ لَمۡ يَكُنِ ٱللَّهُ لِيَغۡفِرَ لَهُمۡ وَلَا لِيَهۡدِيَهُمۡ طَرِيقًا ١٦٨ إِلَّا طَرِيقَ جَهَنَّمَ خَٰلِدِينَ فِيهَآ أَبَدٗاۚ﴾ [النساء: ١٦٨، ١٦٩]
‘যারা কুফরী করেছে এবং যুলম করেছে, আল্লাহ কখনও তাদেরকে ক্ষমা করবেন না এবং সরল পথ দেখাবেন না। তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের পথ। সেখানে তারা বাস করবে অনন্তকাল’ (নিসা ১৬৮-১৬৯)।
* অনুরূপভাবে কোনো পাগলও হজ্জ ও ওমরার নির্দেশের আওতাভুক্ত নয়। সেজন্য কোনো পাগল হজ্জ ও ওমরা আদায় করলেও হতবুদ্ধি হওয়ার কারণে তা তার পক্ষ থেকে শুদ্ধ হবে না। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«رُفِعَ الْقَلَمُ عَنْ ثَلاَثَةٍ عَنِ النَّائِمِ حَتَّى يَسْتَيْقِظَ وَعَنِ الصَّبِىِّ حَتَّى يَحْتَلِمَ وَعَنِ الْمَجْنُونِ حَتَّى يَعْقِلَ»
‘তিন শ্রেণীর ব্যক্তির উপর থেকে কলম উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে: ঘুমন্ত ব্যক্তি ঘুম থেকে জাগ্রত না হওয়া পর্যন্ত, অপ্রাপ্ত বয়ষ্ক ছেলে-মেয়ে প্রাপ্ত বয়ষ্ক না হওয়া পর্যন্ত এবং পাগল বিবেক-বুদ্ধি ফিরে না পাওয়া পর্যন্ত’ (আবূ দাঊদ, হা/৪৪০৩, হাদীছটি আলী (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) থেকে বুখারী ও মুসলিমের শর্তানুযায়ী ছহীহ সূত্রে বর্ণিত; আয়েশা (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা) এবং ইবনে আব্বাস (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) থেকেও এ মর্মে হাদীছ বর্ণিত হয়েছে)।
অনুরূপভাবে অপ্রাপ্ত বয়ষ্ক বালক-বালিকা এবং দাসের উপরেও হজ্জ-ওমরা ওয়াজিব নয়। তবে তারা যদি এতদুভয়টি আদায় করে, তাহলে তা তাদের পক্ষ থেকে শুদ্ধ হবে এবং যারা তাদেরকে হজ্জ ও ওমরা করিয়েছে, তারা সাওয়াব প্রাপ্ত হবে। ইবনে আব্বাস (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) বলেন,
«رَفَعَتِ امْرَأَةٌ صَبِيًّا لَهَا فَقَالَتْ يَا رَسُولَ اللَّهِ أَلِهَذَا حَجٌّ قَالَ نَعَمْ وَلَكِ أَجْرٌ»
‘এক মহিলা তার বাচ্চাকে উঁচু করে ধরে বললেন, হে আল্লাহ্র রাসূল! এর কি হজ্জ হবে? তিনি বললেন, হ্যাঁ! আর তুমি নেকী পাবে’ (মুসলিম, হা/৩২৫৪)। ইমাম বুখারী সায়েব ইবনে ইয়াযীদ (রাদিয়াল্লাহু আনহুমা) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন,
«حُجَّ بِى مَعَ رَسُولِ اللَّهِ – صلى الله عليه وسلم – وَأَنَا ابْنُ سَبْعِ سِنِينَ»
‘সাত বছর বয়সে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে আমাকে নিয়ে হজ্জ করা হয়েছিল’ (হা/১৮৫৮)। তবে তাদের পক্ষ থেকে হজ্জ-ওমরা শুদ্ধ হলেও প্রাপ্ত বয়ষ্ক হওয়ার পরে এবং দাসমুক্তির পরে সামর্থ্যবান হলে তাদেরকে আবার তা আদায় করতে হবে। ইবনে আব্বাস (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) বলেন,
«احْفَظُوا عَنِّي، وَلاَ تَقُولُوا: قَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ، أَيُّمَا عَبْدٍ حَجَّ بِهِ أَهْلُهُ، ثُمَّ أُعْتِقَ فَعَلَيْهِ الْحَجُّ، وَأَيُّمَا صَبِيٍّ حَجَّ بِهِ أَهْلُهُ صَبِيًّا، ثُمَّ أَدْرَكَ فَعَلَيْهِ حَجَّةُ الرَّجُلِ»
‘আমার পক্ষ থেকে তোমরা মুখস্থ করে নাও, তবে তোমরা বলো না যে, ইবনে আব্বাস বলেছেন, (তা হচ্ছে এই যে): কোনো দাসকে তার পরিবার-পরিজন হজ্জ করালে, দাসমুক্তির পর তার উপর আবার তা ওয়াজিব হবে। অনুরূপভাবে যে কোনো অপ্রাপ্ত বয়ষ্ক ছেলে-মেয়েকে তার পরিবার-পরিজন বাল্যাবস্থায় হজ্জ করাল, প্রাপ্ত বয়ষ্ক হওয়ার পর তার উপর তা আবার ওয়াজিব হবে’ (ইবনু আবী শায়বাহ, হা/১৪৮৭৫, সনদ ‘ছহীহ’, উল্লেখ্য যে, ইবনু আবী শায়বাহ ইমাম বুখারী ও মুসলিমের উস্তাদ এবং তাঁর সনদ তাঁদের শর্তের অনুরূপ; বায়হাক্বী মারফূ সূত্রে হাদীছটি বর্ণনা করেন, ৪/৩২৫)। ইবনে আব্বাস (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা)-এর উক্তি ‘আমার পক্ষ থেকে তোমরা মুখস্থ করে নাও, তবে তোমরা বলো না যে, ইবনে আব্বাস বলেছেন’ প্রমাণ করে যে, হাদীছটি রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে মারফূ সূত্রে বর্ণিত।
হজ্জ ও ওমরার ক্ষেত্রে সামর্থ্যবান বলতে দৈহিক ও আর্থিক উভয় সামর্থ্যকে বুঝানো হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন,
﴿وَلِلَّهِ عَلَى ٱلنَّاسِ حِجُّ ٱلۡبَيۡتِ مَنِ ٱسۡتَطَاعَ إِلَيۡهِ سَبِيلٗاۚ ﴾ [ال عمران: ٩٧]
‘আর যে ব্যক্তি সামর্থ্য রাখে, তার উপর আল্লাহ্র সন্তুষ্টির জন্য এ ঘরের হজ্জ করা ফরয’ (আলে ইমরান ৯৭)। অতএব, বার্ধক্য জনিত কারণে অথবা সুস্থ হওয়ার আশা করা যায় না এমন অসুস্থতার কারণে কেউ হজ্জ ও ওমরা আদায়ে অপারগ হলে তা তার উপর ওয়াজিব নয়। অনুরূপভাবে শারীরিক সামর্থ্য আছে কিন্তু অর্থ নেই এমন ব্যক্তির উপরেও হজ্জ-ওমরা ওয়াজিব নয়। তবে শারীরিকভাবে অপারগ ব্যক্তির নিকটে অর্থ থাকলে তাকে অবশ্যই কারো মাধ্যমে বদলী হজ্জ করিয়ে নিতে হবে। উল্লেখ্য যে, বদলী হজ্জ বা ওমরা আদায়কারীকে আগে নিজের পক্ষ থেকে তা আদায় করতে হবে। আবূ রাযীন উক্বায়লী (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকটে এসে বললেন, হে আল্লাহ্র রাসূল! আমার পিতা বৃদ্ধ মানুষ। তিনি হজ্জ, ওমরা বা সফর কোনটিই করতে সক্ষম নয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘তুমি তোমার পিতার পক্ষ থেকে হজ্জ এবং ওমরা আদায় করে দাও’ (হাদীছটি ‘হজ্জ ও ওমরা ওয়াজিব’ অনুচ্ছেদে গত হয়ে গেছে)। ফাযল ইবনে আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন, ‘বিদায় হজ্জের বছরে খাছ‘আম গোত্রের এক মহিলা এসে বললেন, ‘হে আল্লাহ্র রাসূল! আমার বৃদ্ধ পিতার উপর হজ্জ ফরয হয়েছে; কিন্তু তিনি সফর করতে সক্ষম নন। এক্ষণে তাঁর পক্ষ থেকে আমি হজ্জ আদায় করে দিলে কি তা তার পক্ষ থেকে আদায় হয়ে যাবে? তিনি বললেন, হ্যাঁ’ (বুখারী, হা/১৮৫৪; মুসলিম, হা/৩২৫২)। হাদীছটি আরো প্রমাণ করে যে, পুরুষের পক্ষ থেকে মহিলাও বদলী হজ্জ করতে পারে।
কারো আর্থিক সামর্থ্য থাকা অবস্থায় সে মারা গেলে তার রেখে যাওয়া সম্পদ থেকে হজ্জের খরচের সমপরিমাণ অর্থ নিয়ে হজ্জ করেছে এমন কাউকে দিয়ে বদলী হজ্জ করিয়ে নিতে হবে। বুরায়দাহ ইবনুল হাছীব (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু)-এর হাদীছে এসেছে, এক মহিলার মা মারা গেলে তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করেন, আমার মা কখনও হজ্জ করেন নি, আমি কি তার পক্ষ থেকে হজ্জ আদায় করব? তিনি বললেন, হ্যাঁ, তার পক্ষ থেকে হজ্জ কর’ (মুসলিম, হা/২৬৯৭)।
কোন মহিলার দৈহিক ও আর্থিক সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও হজ্জে তার সাথে মাহরাম পুরুষ না থাকা পর্যন্ত তাকে সামর্থ্যবান গণ্য করা হবে না। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«لَا تُسَافِرِ الْمَرْأَةُ إِلَّا مَعَ ذِي مَحْرَمٍ وَلَا يَدْخُلُ عَلَيْهَا رَجُلٌ إِلَّا وَمَعَهَا مَحْرَمٌ»
‘মাহরাম পুরুষের সাথে ছাড়া কোন মহিলা সফর করবে না। কোন পুরুষ কোন মহিলার নিকটে তার মাহরামের অনুপস্থিতিতে যাবে না। এক ব্যক্তি বললেন, হে আল্লাহ্র রাসূল! আমি অমুক সৈন্য দলের সাথে যুদ্ধে যেতে চাই, কিন্তু আমার স্ত্রী চায় হজ্জে যেতে? রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, «اخْرُجْ مَعَهَا» তুমি তোমার স্ত্রীর সাথে যাও’ (বুখারী, হা/১৮৬২; মুসলিম, হা/৩২৭২, ইবনে আব্বাস (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) থেকে বর্ণিত)। উক্ত হাদীছে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রশ্নকারীকে যুদ্ধ ছেড়ে তার স্ত্রীর সাথে হজ্জের সফরে যেতে বললেন। কোন মহিলা মাহরাম ছাড়া হজ্জ সম্পাদন করলে তার হজ্জ শুদ্ধ হবে। তবে মাহরাম ছাড়া সফর করার কারণে সে গোনাহগার হবে। কেননা মাহরাম সঙ্গে থাকা হজ্জ ওয়াজিব হওয়ার শর্ত, হজ্জ শুদ্ধ হওয়ার শর্ত নয়। অবশ্য মক্কাবাসী কোনো মহিলা নিরাপদ ও বিশ্বস্ত যে কোন সফর সঙ্গীর সাথে হজ্জ করতে পারে। কেননা মক্কা থেকে হজ্জ করলে কোনো সফরের প্রয়োজন পড়ে না। অতএব, সেখানে মাহরামেরও কোনো প্রশ্ন আসে না।
আর একজন মহিলার মাহরাম হচ্ছে, তার স্বামী এবং বংশ ও অন্য যে কোন বৈধ সূত্রে তার জন্য স্থায়ীভাবে বিবাহ বন্ধন হারাম এমন পুরুষ। বংশ সূত্রে স্থায়ী মাহরাম পুরুষের উদাহরণ হচ্ছে, মহিলার পিতা, ছেলে, ভাই, চাচা, মামা। অন্য দু’টি ‘বৈধ সূত্রে’ কেউ স্থায়ী মাহরাম হতে পারেঃ ১. দুগ্ধপান সম্পর্কিত সূত্রে, যেমন: মহিলার দুধপান সম্পর্কীয় পিতা, ছেলে, ভাই, চাচা, মামা; ২. বৈবাহিক সূত্রে, যেমন: মহিলার শ্বশুর, তার স্বামীর অন্য স্ত্রীর ছেলে, তার মায়ের অন্য স্বামী- যার সাথে তার মায়ের মিলন ঘটেছে, মেয়ের জামাই।
‘বৈধ সূত্র’ দ্বারা নিজ স্ত্রীর বিরুদ্ধে যেনার অভিযোগকারী স্বামীকে (যাতে লি‘আন হয়ে তাদের মধ্যে পৃথকীকরণ হয়েছে এমন লোককে) মাহরামের তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। কেননা অভিযুক্ত স্ত্রী ঐ স্বামীর জন্য চিরদিনের জন্য হারাম হবে এবং সে তার মাহরাম হতে পারবে না। যেসব পুরুষ কোনো মহিলার জন্য অস্থায়ীভাবে হারাম, তারাও মাহরাম হতে পারবে না। যেমন: স্ত্রীর বোন, তার ফুফু, তার খালা, স্ত্রীর ভাই ও বোনের মেয়ে। কেননা কোনো পুরুষ কোনো মহিলার জন্য মাহরাম হওয়ার শর্ত হল, তাদের উভয়ের মধ্যে চিরদিনের জন্য বৈবাহিক বন্ধন হারাম হতে হবে।