বৃটিশ খেদাও আন্দোলন, সাতচল্লিশ ও একাত্তর এবং আজকের ফোর টুয়েন্টি বিলাস!
এক: প্রগতিশীল, সুশীল, সেক্যুলার, নাস্তিক, অসাম্প্রদায়িক, বুদ্ধিজীবী, বিজ্ঞজন, বিশিষ্টজন, সমাজবাদী, সাম্যবাদী, নারীবাদী এসবই ফাও। ভাউতাবাজি। ধোকাবাজী। সবই ধান্দা। মূলে সবাই সুবিধাবাদী। এ সমস্ত সস্তা বুলীর তবলা বাজানোর বিপরীতে আসলে এরা সবাই ইসলাম ও মুসলিম বিদ্বেষী। দাদা বাবুদের তলপিবাহক। মুক্তিযুদ্ধ ও বঙীয় মৌলিকত্বের নামে চেতনা ব্যবসায়ী। শরাব ও থলথলে খোলা মাংস আর বিরিয়ানির প্যাকেট পর্যন্তই এদের চেতনা।
এরা আবার কথায় কথায় ইসলামপন্থী ও আলেম সমাজকে কটাক্ক করে। টকশোতে ঘেউ ঘেউ করে। পাকিস্তানের আদর্শপন্থী ও দালাল বলে, কিন্তু বাবুরা এটা ভুলে যায় যে, দেশ স্বাধীনের আগে আলেম ওলামারা নন বরং তারাই পাকিস্তানের দালালী করেছেন। তাদের উচ্ছিষ্ট ভক্ষণ করেছেন। চাকরির নামে চামচামি করেছেন। না হয় যখন মুক্তিযুদ্ধ চলছিলো, যখন নিরস্ত্র নিরীহ বাঙ্গালীদের উপর পাক হানাদার বাহিনী অতর্কিতে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলো, খুন ও ধর্ষণ করেছিলো অসহায় বাঙ্গালী নারীদের, বাড়ি-ঘর জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ভয় ও ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে ছিলো হানাদাররা, যখন সারা দেশে বাঙ্গালীরা মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলো, তখন কীভাবে এদেশে সেই খুনি ও লুটেরাদের অফিস গুলো খোলা ছিলো? কারা সেইসব অফিসে চাকরি করেছেন? তৎকালীন সময়ে সবগুলো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় কারা খোলা রেখে পাকিস্তানের বেতন নিয়ে এদেশের মাটি ও মানুষের সাথে বেইমানী ও গাদ্দারী করেছিলো? অথচ ইতিহাস স্বাক্ষী, সেই সময় দেশের প্রায় সব মাদরাসা গুলো বন্ধ ছিলো। বহু আলেম ওলামা মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে অকাতরে দেশের জন্য জীবন বিলিয়ে দিয়েছিলেন। বিভিন্ন ভাবে তারা মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য-সহযোগিতা করেছেন। সংগঠিত করেছেন। আশ্রয় দিয়েছেন।
সুতরাং বাবুরা একটু থামেন। ধান্দা অনেক করেছেন। চেতনা অনেক দেখিয়েছেন, না হয় আপনাদের চেতনার আসল রূপ বের হয়ে গেলে পালানোর পথও পাবেনা, লুঙ্গি ভিজে যাবে।
দুই: ৪২০। ফোর টুয়েন্টি। বর্তমানে দেশের সেরা টপিক। এ নিয়ে সামাজিক সাইটগুলোতে চলছে তোলপাড়। এটি এখন ব্যাপক বিনোদন মূলক বস্তু! সব রকমের হিসাব-নিকাশ কষার পরেও দিনশেষে ৪২০ এর ফলাফল যেমন সবসময় শূন্যই হয় এখানেও সেই একই রেজাল্ট। শেষে শূন্যই। কি আজব মিল!
৪২০ এর এই ধূর্ত ও ধুরন্ধররা আজ আল্লামা শফীদের (আলেম সমাজ) বিরুদ্ধে বিবৃতি দেয়, অথচ এরা জানেনা যে এই আহমদ শফীরা যদি সেদিন তাদের পিতা-মাতার বিয়ে না পড়াতেন তাহলে এরা হতো আজ পিতৃ পরিচয়হীন অবৈধ জারজ সন্তান। হারামজাদা। অবশ্য আল্লামা শফীদের কল্যাণে এরা জাগতিক ও ধর্মীয় ভাবে বৈধ সন্তানের স্বীকৃতি পেলেও আসলে আদতে এরা আদর্শিক জারজ, জ্ঞানপাপী ও ঐতিহাসিক হারামজাদা। জাতির হিসাবে থাকলেও জাতে ওঠতে পারেনি। এরা জন্মদাতা পিতাকে অস্বীকারের মতোই নিজেদের জাতীয় ইতিহাস ও ঐতিহ্যকেও অস্বীকার করে। আজ যদি ব্রিটিশদের গোলামী থেকে আলেম ওলামারা ভারত উপমহাদেশকে স্বাধীন না করতেন তাহলে কখনোই পাকিস্তান ও তৎপরবর্তী আজকের এই স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় হতোনা। লালসবুজের এই পতাকা পৃথিবীর মানচিত্রে ঠাই পেতোনা। কখনই না। ইতিহাস স্বাক্ষী, বৃটিশ খেদাও আন্দোলনে লক্ষ লক্ষ ওলামায়ে কেরাম শহীদ হয়েছেন। বালাকোটের প্রাঙ্গণে হাজার হাজার আলেমকে ফাঁসি দিয়ে গাছে গাছে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিলো, সেদিন এই গাদ্দারদের উত্তরসূরীরা বৃটিশদের গোলামীতেই ব্যস্ত ছিলো। এরপর ৪৭ এ অখণ্ড ভারত বা স্বতন্ত্র মুসলিম রাষ্ট্র পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পক্ষেও এই চেতনা ব্যবসায়ীদের দেখা যায়নি। সর্বশেষ ৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধেও এদের চিরচেনা সেই চরিত্রের কোন পরিবর্তন হয়নি। পাকিস্তানের এই দোসররা কখনই মুক্তিযুদ্ধকে সমর্থন করেইনি বরং মুক্তিযুদ্ধকে নস্যাৎ করার জন্য ব্যাপক ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তে মেতে উঠেছিলো এই ইতররা। সেই ধারাবাহিকতায়ই বৃটিশ খেদাও আন্দোলন থেকে আজ পর্যন্ত এই গোলামের বংশধররা ভিনদেশী প্রভূদেরই বার বার গোলামী করেছে, আজো করছে।
কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস, যারা ছিলো একদা স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্তের বিরোধী তারা আজ হয়ে গেলো স্বাধীনতার দাবীদার, স্বপক্ষের শক্তি! আর যারা স্বাধীনতার বীজ বপন করেছিলেন, দেশ স্বাধীন করেছিলেন, স্বাধীনতার সাদ এনে দিয়ে ছিলেন তারা আজ হয়ে গেলেন স্বাধীনতা বিরোধী। যারা আজীবন মানবতার গান গেয়েছেন আজ তারা হয়ে গেলেন মানবতা বিরোধী! ইতিহাসের প্রকৃত উত্তরাধিকারীদের নির্মোহ জীবন ও নিভৃত নীরবতার সুযোগে নাদান গোষ্ঠি ও ইতিহাসের আস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত ও পতিত এই খড়কুটোরাই আজ মুক্তিযুদ্ধের মহাজন, চেতনার ফেরিওয়ালা! সত্যিই ইতিহাস বড় বিচিত্রিকর, তার চেয়েও বড় বিচিত্রকর ইতিহাসের ইতিহাস!
তিন: স্বার্থান্বেষী নাস্তিক্যবাদী এই অপশক্তির এই নির্লজ্জ ও নোংরা আস্ফালন দেখে আমি বিস্মিত নই। এরা সমাজ ও রাষ্ট্রের আগাছা। জাস্ট সময় মতো একটু গোঁড়া থেকে কেটে পরিষ্কার করে দিলেই জঞ্জাল কেটে যাবে। তবে শঙ্কার জায়গাটা হলো, তথাকথিত এই সুশীল ও বুদ্ধিজীবীরা মিডিয়ার আনুকূল্যে ইসলামের নামে ভুয়া মৌলবাদ ও সন্ত্রাসের যে মিথ্যা প্রোপাগান্ডা ছড়ানোর মাধ্যমে দেশ জাতি ও বিশ্বকে অসত্য ও বিভ্রান্তিকর একটি ম্যাসেজ দিতে সক্ষম হচ্ছে সেটি। যা হয়তো বহুকাল বহমান থাকবে রাষ্ট্র ও সমাজের রন্দ্রে রন্দ্রে। সময়ের বিবর্তনে অস্তিত্ত রক্ষার নিমিত্তে ঈমানী তাগিদে এক সময় হয়তো আবারো প্রয়োজন হবে আরো একটি ব্রিটিশ খেদাও আন্দোলনের, একটি ৪৭ এর কিংবা আরো একটি ৭১ এর।
লেখক: মুফতি যাকারিয়্যা মাহমূদ মাদানী
বি. এ. অনার্স, এম. এ, এমফিল: মদীনা বিশ্ববিদ্যালয়, সৌদি আরব
প্রিন্সিপাল: মানাহিল মডেল মাদরাসা, মিরপুর, ঢাকা
পরিচালক: ভয়েস অব ইসলাম ও ইসলামিক গাইডেন্স।
(রাত ৪:০০ টা, ১৪ ই শাবান, ১৪৩৮ হিঃ, ১১ই এপ্রিল, ২০১৭ ইং)