“বাংলাদেশ মাদরাসা অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ)” এর আত্মপ্রকাশ
মাদরাসা কল্যাণমূলক জাতীয় সংগঠন “বাংলাদেশ মাদরাসা অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ)” আত্মপ্রকাশ করেছে। বাংলাদেশে সমন্বিত (কম্বাইন্ড) সিলেবাসের প্রাইভেট মাদরাসাগুলোর সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা, তত্ত্বাবধান এবং এগুলোর পাঠ্যসূচীসহ বিভিন্ন কর্মসূচীর ক্ষেত্রে মাদরাসাগুলোর মাঝে সামঞ্জস্য ও ঐক্য বহাল রাখার লক্ষ্যে মাসব্যাপী প্রায় দুই শতাধিক মাদরাসার পরিচালক ও দায়িত্বশীলের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক ও মতবিনিময়ের পর গত শুক্রবার মাদরাসাতুত তারবিয়্যাহ আল-ইসলামিয়া, কাঁঠালবাগ, মিরপুর-২, ঢাকায় প্রায় শতাধিক মাদরাসা প্রিন্সিপালদের একটি বিশেষ আলোচনা ও মতবিনিময় সভার মধ্য দিয়ে বহু কাঙ্ক্ষিত “বাংলাদেশ মাদরাসা অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ)”-এর এই আত্মপ্রকাশ ঘটে।
সকলের সর্বসম্মতিক্রমে ও কণ্ঠভোটের মাধ্যমে জামিআতুল বানাত আল-ইসলামিয়া ও মানাহিল মডেল মাদরাসার প্রিন্সিপাল মুফতি যাকারিয়্যা মাহমূদ মাদানী সভাপতি নির্বাচিত হন। সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন মাওলানা খালিকুজ্জামান তারা।
এ ছাড়া পনের সদস্য এই কমিটিতে মুফতি আব্দুল মুমিন কাসেমী সিনিয়র সহ-সভাপতি, মুফতি আব্দুল হামিদ ও মুফতি নাসির উদ্দিন মেখলী সহ-সভাপতি, হাফেয মাওলানা আব্দুল্লাহ যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক, মুফতি হিফজুর রহমান সাংগঠনিক সম্পাদক, মুফতি সাইদুল ইসলাম সিরাজী যুগ্ন সাংগঠনিক সম্পাদক, মাওলানা আহসান হাবীব অর্থ সম্পাদক, হাফেয মাওলানা ইবরাহীম খলীল কাউসারী দপ্তর সম্পাদক, হাফেয কারী মোয়াজ্জেম হুসাইন প্রচার সম্পাদক, মাওলানা আবদুল্লাহ আল-মামুন যুগ্ন প্রচার সম্পাদক, মাওলানা মুহাম্মদ শাহ্ জাহান শিক্ষা সম্পাদক, মাওলানা এহসানুল আমীন ও মাওলানা নজরুল ইসলাম নির্বাহী সদস্য নির্বাচিত হন।
সভায় বৃহত্তর মিরপুরের নয়টি থানায় নয়টি আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। দেশের শীর্ষস্থানীয় ওলামা-মাশায়েখদের সমন্বয়ে একটি খাছ পরামর্শ কমিটি ও আরেকটি উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করা হয়। আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া পরবর্তী তাদের নাম প্রকাশ করা হবে।
সভার শুরুতে পবিত্র কালামে পাক থেকে তেলাওয়াত করেন মুফতি ইবরাহীম খলীল। সভার সঞ্চালনায় ছিলেন কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সদস্য মুফতি হিফযুর রহমান।
এ্যাসোসিয়েশনের সদ্য নির্বাচিত কেন্দ্রীয় সভাপতি মুফতি যাকারিয়্যা মাহমূদ মাদানী সংগঠনের বিস্তারিত পরিচিতি, এর লক্ষ্য-উদ্দেশ্য এবং সাংগঠনিক ঐক্যের গুরুত্ব ও তাৎপর্যের উপর গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করেন। তিনি শিক্ষা-সংস্কার, মহোত্তম নীতিচেতনার সঞ্চার, পরিচ্ছন্ন মানসিকতা গঠনে সংগঠনের নানা কর্মসূচি পালনসহ সর্বোপরি একটি সুন্দর ও আদর্শ কল্যাণরাষ্ট্র বিনির্মাণে নানামুখী কর্মকাণ্ডের কথা তুলে ধরেন।
তিনি তার বক্তব্যে বলেন, ঐক্যবদ্ধ শক্তিই সাফল্যের মেরুদণ্ড। ইসলামে মুসলমানদের পারস্পরিক সম্পর্ক ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বের। এই ঐক্যের সুফল সুবিদিত। এর বিপরীতে বিভেদ ও অনৈক্যের নানাবিধ কুফলের কথা কারো অজানা নয়।
মহান আল্লাহ্ বলেন, وَاعْتَصِمُوا بِحَبْلِ اللَّهِ جَمِيعًا وَلَا تَفَرَّقُوا
‘তোমরা সকলে আল্লাহর রজ্জুকে দৃঢ়ভাবে ধারণ কর এবং বিভেদ করো না। (সূরা আলে-ইমরান : ১০৩)
হযরত নুমান ইবন বাশীর (রা) বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: الجماعة رحمة والفرقة عذاب “ঐক্য হলো রহমত এবং বিভক্তি হলো আযাব।” (মুসনাদ আহমদ)
তিনি আরও বলেন, ইতিহাস ও অভিজ্ঞতা এটি বারবার প্রমাণ করেছে যে, যদি কোনো দল, জামাত ও জনসমষ্টি সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধশালী হতে চায়, তবে তাদেরকে ঐক্যবদ্ধ ও নিজেদের মধ্যে সুদৃঢ় বন্ধন গড়ে তুলতে হবে। ঐক্যের কোনো বিকল্প নেই।
ঐক্য ছাড়া কোনো জাতি রাজনৈতিক, কুটনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে সফলতা অর্জন করতে পারে না। ঐক্যবদ্ধ শক্তিই বড় শক্তি।
তিনি বলেন, সময় এসেছে আমাদের সোজা হয়ে দাঁড়াবার। আমাদের এবার দাড়াতেই হবে। নিজেদের স্বার্থ সংরক্ষণে সোচ্চার হতে হবে। হীনমন্যতায় ভোগা যাবে না। সাহসের সঙ্গে দুর্বার গতিতে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। ভয় পাওয়া যাবে না। মেঘ দেখে কেউ করিস নে ভয়, আড়ালে তার সূর্য হাসে, হারা শশীর হারা হাসি অন্ধকারেই ফিরে আসে।
তিনি আরও বলেন, আমরা কোনো ব্যক্তি ও সংগঠনের প্রতিপক্ষ নই, শত্রু নই। কারো সঙ্গে আমাদের কোন বৈরিতা নেই। সকলের কাজ ও প্রচেষ্টাকে শ্রদ্ধা করি। “বাংলাদেশ মাদরাসা অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ)” নতুন কোনো বার্তা ও মিশন নিয়ে আবির্ভূত হয়নি। এসেছে ঐক্য ও সংহতির বার্তা নিয়ে। বন্ধুত্বের বাণী নিয়ে। তিনি বলেন, বেফাক ও হাইআতুল উলইয়া আমাদের জাতীয় শিক্ষাবোর্ড। ইত্তেফাক আমাদের পথপ্রদর্শক। হযরত ওলামায়ে কেরাম আমাদের সারে তাজ মুরুব্বী। সুতরাং এ নিয়ে বিভ্রান্তির কোনও সুযোগ নেই। কেউ কোনো অসত্যপ্রচারে কান দিবে না।
সভায় কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মাওলানা খালিকুজ্জামান তারা বলেন, আমাদের মাদরাসগুলোর দায়িত্বশীলদের মধ্যে একতা, সম্প্রীতি, ভ্রতৃত্ব ও সৌহার্দপূর্ণ সর্ম্পক সুদৃঢ় করতে হবে। একটি শক্তিশালী ইউনিটি গড়ে তুলতে হবে। তিনি বাংলাদেশ মাদরাসা অ্যাসোসিয়েশনের মাধ্যমে দেশের সকল কম্বাইন্ড সিলেবাসের মাদরাসাসমূহকে সম্ভাব্য সকল প্রকার সাহায্য সহযোগিতা প্রদানের আশ্বাস দেন। তিনি বলেন, “বাংলাদেশ মাদরাসা অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ)” প্রাইভেট মাদরাসা ও তার দায়িত্বশীলদের সুখ-দুঃখ ও বিপদাপদে সবসময় পাশে থাকবে, ইন শা আল্লাহ্।
কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মুফতি হিফযুর রহমান সভায় সংগঠনের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও কর্মপন্থা তুলে ধরেন। কেন্দ্রীয় যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক হাফেয মাওলানা আবদুল্লাহ সংগঠনের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আলোকপাত করেন। কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক হাফেয কারী মোয়াজ্জেম হুসাইন প্রাইভেট মাদরাসাসমূহের সমস্যা, সংকট ও তা থেকে উত্তরণের পথ ও পন্থা নিয়ে আলোচনা করেন। অন্যান্য কেন্দ্রীয় দায়িত্বশীলগণও আলোচনায় অংশ নেন।
সভায় বৃহত্তর মিরপুরের সকল থানার আহ্বায়ক কমিটির নাম ঘোষণা করা হয়, এবং কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষ থেকে ফুলের তোড়া দিয়ে তাদের বরণ করে নেয়া হয়। পরে তারাও আলোচনায় অংশ নেন। তারা তাদের আলোচনায় প্রাইভেট তথা সমন্বিত সিলেবাসের মাদরাসাসমূহের সংকট ও সম্ভাবনার কথা আলোচনা করেন। সভায় উপস্থিত বিভিন্ন মাদরাসার পরিচালক ও দায়িত্বশীলগণ উম্মুক্ত আলোচনা পর্বে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা পূর্বক তাদের মতামত ও পরামর্শ তুলে ধরেন। যারা আলোচনা করার সুযোগ পান নি তারা নোটে তাদের মতামত ও পরামর্শ লিখে জমা দেন।
সভার শেষে ইসলাম, দেশ ও জাতির মঙ্গলের জন্য বিশেষ দোয়া ও সভাপতির ধন্যবাদ জ্ঞাপনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।