“সন্তানাদি ও অর্থ-সম্পদ তোমাদের জন্য পরীক্ষা” এ কথার ব্যাখ্যা কী?
প্রশ্ন: কুরআন থেকে আমরা জানতে পারি যে, পার্থিব জীবনের ধন-সম্পদ এবং সন্তান-সন্ততি আমাদের জন্য ফেতনাস্বরূপ। প্রশ্ন হল, এখানে ফেতনা বলতে কোন ফেতনাকে বুঝানো হয়েছে? বা কেন ফেতনা বলা হয়েছে?
উত্তর: ফিতনা (فتنة) শব্দটির একাধিক অর্থ রয়েছে। যেমন: পরীক্ষা, দাঙ্গা, গোলযোগ, বিপদ, কষ্ট, পরীক্ষা, সম্মোহন ও আকর্ষণ ইত্যাদি। [ড. ফজলুর রাহমান রচিত আরবী-বাংলা অভিধান]
আল্লাহ তাআলা বলেন, إِنَّمَا أَمْوَالُكُمْ وَأَوْلَادُكُمْ فِتْنَةٌ
“তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি তো কেবল (ফিতনা) পরীক্ষাস্বরূপ।” [সূরা আনফাল, আয়াত: ২৮, ও সূরা তাগাবুন। আয়াত: ১৫]
আল্লাহ তাআলা আরও বলেন, وَنَبْلُوكُم بِالشَّرِّ وَالْخَيْرِ فِتْنَة
“আর আমি তোমাদেরকে মন্দ ও ভাল দিয়ে পরীক্ষা করি।” [সূরা আন্বিয়া: ৩৫]
আয়াতে ফিতনা দ্বারা উদ্দেশ্য:
ইবনে কাসির রহ. আয়াতে বর্ণিত ফিতনা শব্দের অর্থ করতে গিয়ে বলেন, أي: اختبار وامتحان منه لكم অর্থাৎ “পরীক্ষা করা, যাচায় বা পরখ করা।” মহান আল্লাহ তোমাদেরকে এগুলো দিয়েছেন যেন তিনি জানতে পারেন যে, তোমরা এসব পেয়ে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় কর ও তার আনুগত্য কর না কি এগুলোতে ব্যতিব্যস্ত হয়ে তার থেকে দূরে সরে পড়।” [তাফসিরে ইবনে কাসির]
অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা ধন-সম্পদ, সন্তান-সন্ততি। ভালো-মন্দ, সুখ-দুখ এসব দ্বারা বান্দাকে পরীক্ষা করতে চান। তিনি দেখতে চান, কারা এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয় আর কারা ব্যর্থ হয়। (যদিও কুরআনে অন্য অর্থেও এর ব্যাবহার রয়েছে) অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে সন্তান-সন্ততি এবং অর্থ-সম্পদ দিয়ে পরীক্ষা করতে চান যে, এ সব পেয়ে কি আমরা আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করি, না এগুলো পেয়ে আত্ম অহমিকায় ডুবে যাই, এবং শেষ পর্যন্ত এ সব পার্থিব নিয়ামতের পেছনে পড়ে এ সব নিয়ামত দানকারী স্বয়ং মহান আল্লাহর ইবাদত ও আনুগত্যের কথাই ভুলে যাই!
অনুরূপভাবে সন্তানদের উন্নত জীবন ও ক্যারিয়ার গঠনে ইসলাম বাধা দেয় না। কিন্তু তা করতে হবে আল্লাহর দ্বীনের উপর প্রতিষ্ঠিত থেকে। দ্বীন থেকে দুরে সরে গিয়ে সন্তানদেরকে গড়ে তুললে এরাই তাদের পিতামাতাকে পদপিষ্ট করে জাহান্নামের আগুনে নিয়ে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট হবে। এ সন্তানরাই কিয়ামতের দিন তাদের গোমরাহির জন্য তাদের অভিভাবকদেরকে দায়ী করবে।
মোটকথা, সন্তান-সন্ততি এবং অর্থ-সম্পদ আল্লাহর পক্ষ থেকে আমাদেরকে দেয়া হয়েছে পরীক্ষা করার উদ্দেশ্যে। সুতরাং আমরা যদি এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে চাই, তাহলে সর্তক হতে হবে যেন, এগুলো আমাদেরকে দ্বীন থেকে দূরে সরিয়ে না দেয়, বরং এগুলোই যেন আমাদের জান্নাতে যাওয়ার কারণ হয়।
আল্লাহ আমাদের তাওফিক দান করুন। আমীন।