তাওহীদের পরিচয় ও প্রকারভেদ
তাওহীদের সংজ্ঞা:
তাওহীদের শাব্দিক অর্থ: তাওহীদ শব্দটি (وح د) ধাতু থেকে এসেছে। এর অর্থ আল্লাহর একত্ববাদ।
ইসলামী পরিভাষায় তাওহীদের অর্থ হল: আল্লাহ্ তাআলাকে তাঁর সুমহান জাত (সত্বা) সর্বসুন্দর নাম ও সিফাত (গুণরাজি-বৈশিষ্ট্যে) এবং তাঁর অধিকার,কর্ম ও কর্তৃত্বে এক,একক ও অদ্বিতীয় ষোষণা ও সাব্যস্ত করা,এবং এসব ক্ষেত্রে নিজের কথা,কাজ ও বিশ্বাসের দ্বারা আল্লাহ্র একত্ববাদকে অক্ষুন্ন রাখা।
তাওহীদের প্রকার:
তাওহীদ তিন প্রকার।
১। তাওহীদে রুবুবিয়্যাহ (প্রভুত্বে আল্লাহর একত্ব)।
২। তাওহীদে আসমা ওয়াস সিফাত (নামসমূহ ও গুণাবলীতে আল্লাহর একত্ব)।
৩। তাওহীদে উলুহিয়্যাহ (বান্দার ইবাদত,উপাসনা একমাত্র আল্লাহর নির্দিষ্ট করা)।
তাওহীদে রুবুবিয়্যাহ:
বান্দাকে সুনিশ্চিতভাবে এ কথা জানা ও স্বীকার করা যে, আল্লাহ হলেন এককভাবে সকল বস্তুর মালিক ও পালনকর্তা। নিশ্চয়ই তোমাদের রব (পালনকর্তা) আল্লাহ। (সূরা আরাফ-৫৪), তিনি সকল কিছুর সৃষ্টিকর্তা। আল্লাহই সকল কিছুর স্রষ্টা। (সূরা রাদ-১৬), তিনি সমগ্র বিশ্বকে এককভাবে পরিচালনা করছেন। তিনি আকাশ থেকে যমীন পর্যন্ত সকল কার্য পরিচালনা করেন। (সূরা সাজদাহ-৫), আসমান ও যমীনের সার্বভৌমত্ব একমাত্র আল্লাহর, আর আসমান ও যমীনের সার্বভৌমত্ব আল্লাহরই, আর তিনি সকল কিছুর উপর ক্ষমতাবান। (সূরা আল ইমরান-১৮৯)।
অর্থাৎ সার্বভৌমত্বে,সৃষ্টিতে, প্রভুত্বে ধন-সম্পদে,লালন-পালনে,কর্তৃত্বে ইত্যাদির ক্ষেত্রে একমাত্র আল্লাহ্ই অধিপতি ও মালিক।এতে তাঁর কোন শরীক বা অংশীদার নেই। এককভাবে তিনিই প্রভু।
তাওহীদে আসমা ওয়াস সিফাত:
বান্দাকে এই বিশ্বাস করতে হবে যে,মহান আল্লাহর সুন্দরতম নামসমূহ এবং পরিপূর্ণ গুণাবলী রয়েছে। আর আল্লাহ্র জন্য রয়েছে সুন্দর নামসমূহ, তোমরা সেগুলোর মাধ্যমে তাঁকে ডাকো। আর যারা তাঁর নামের বিকৃতি ঘটায় তাদের বর্জন কর,অচিরেই তাদের কৃতকর্মের প্রতিফল দেয়া হবে। (সূরা আরাফ-১৮০)
তাঁর এই নামসমূহ এবং গুণাবলীতে কোনরূপ পরিবর্তন-পরিবর্ধন করা যাবে না এবং এগুলোর কল্পিত কোনো আকৃতি যেমন স্থির করা যাবে না,তেমনি কোনো সৃষ্টির সাথে সেগুলোর কোনরূপ সাদৃশ্য বিধানও করা যাবে না।
অপূর্ণাঙ্গতা থেকে মুক্ত ও পবিত্র। আমাদেরকে আরো বিশ্বাস করতে হবে যে,মহান আল্লাহর মত আর কেউ নেই, আর কেউই তাঁর সমকক্ষ নয়। (সূরা ইখলাস-৪), আর তাঁর সদৃশ্য কোন কিছুই নেই। ليس كمثله شيئ কোন কিছুই তাঁর অনুরূপ নয়, (সূরা শূরা-১১)
তাওহীদে উলুহিয়্যাহ:
ইবাদত, দো‘আ বা প্রার্থনার ক্ষেত্রে আল্লাহর একত্ববাদের বিশ্বাসকে তাওহীদুল উলুহিয়্যাহ ওয়াল ইবাদাহ বলা হয়। ইবাদতের যোগ্য ইলাহ একমাত্র আল্লাহ্ তাআলা। إِنَّمَا إِلَهُكُمُ اللَّهُ কেবলমাত্র আল্লাহই তোমাদের উপাস্য। (সূরা তহা-৯৮)
সুতরাং সকল প্রকারের ইবাদত একমাত্র আল্লাহর জন্য। اعْبُدُوا اللَّهَ رَبِّي وَرَبَّكُمْ আল্লাহর ইবাদত কর,যিনি আমার রব ও তোমাদের রব। (সূরা মায়িদা-৭২)। يَا أَيُّهَا النَّاسُ اعْبُدُوا رَبَّكُمُ হে মানুষ সকল! তোমরা তোমাদের রবের ইবাদত কর। (সূরা আল বাকারা-২১)
অর্থাৎ উপাসনা, ইবাদত, দো‘আ, সালাত, সিজদা, সাহায্য, আশা, ভরসা ইত্যাদির মাধ্যমে আল্লাহকে এক বলে বিশ্বাস করা, মেনে নেয়া ও সকল প্রকার ইবাদত একমাত্র আল্লাহর জন্যই নিরংকুশ করাই হল তাওহীদুল উলুহিয়্যাহ।
এবং ইবাদতে তার সাথে অন্য কাউকে শরীক বা অংশীদার করা যাবে না। وَاعْبُدُوا اللَّهَ وَلا تُشْرِكُوا بِهِ شَيْئًا আর তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর আর তার সাথে কোন কিছুকে শরীক কর না। (সূরা নিসা-৩৬)
উপাসনা, ইবাদত, দো‘আ, সালাত, সিজদা, আনুগত্য, সাহায্য, আশ্রয়, আশা, ভরসা, কোরবানী ও মান্নতসহ যাবতীয় ইবাদত একমাত্র আল্লাহর জন্যই করতে হবে। কোন একটি ইবাদত আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো উদ্দেশ্যে সম্পাদন বা নিবেদন করা যাবে না।
যে ব্যক্তি আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো উদ্দেশ্যে, কোন একটি মাত্র ইবাদত নিবেদন করবে শরীয়তের দৃষ্টিতে সে মুশরিক বলে বিবেচিত হবে আর তার আবাসস্থল জাহান্নাম।
مَنْ يُشْرِكْ بِاللَّهِ فَقَدْ حَرَّمَ اللَّهُ عَلَيْهِ الْجَنَّةَ وَمَأْوَاهُ النَّارُ
নিশ্চয় যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে শরীক করে,তার জন্য আল্লাহ অবশ্যই জান্নাত হারাম করে দিয়েছেন এবং তার বাসস্থান হল জাহান্নাম আর যালিমদের কোন সাহায্যকারী নেই। (সূরা মায়িদা-৭২)
তাওহীদের ফলাফল:
আল্লাহ্ তাআলা বলেন,
الَّذِينَ آمَنُوا وَلَمْ يَلْبِسُوا إِيمَانَهُمْ بِظُلْمٍ أُولَئِكَ لَهُمُ الأمْنُ وَهُمْ مُهْتَدُون
যারা ঈমান এনেছে আর নিজ ঈমান যুলূম (মানে শিরক) দ্বারা সংমিশ্রণ করেনি,তাদের জন্যেই রয়েছে নিরাপত্তা আর তারাই হেদায়াতপ্রাপ্ত। (সূরা আনআম-৮২)