কোয়ারেন্টাইন জীবনে বাড়ছে দাম্পত্য কলহ: ভালো থাকবেন যেভাবে

বিশ্বজুড়ে করোনা ভাইরাসের কারণে মানুষ এখন ঘরে বন্দি জীবন যাপন করছে। জীবনের সবকিছু স্থবির হয়ে পড়েছে। পুরুষরা আগে সারাদিন বাইরে থাকতেন লকডাউনের কারণে এখন সবাই ঘরে কোয়ারেন্টাইনে। ইতিমধ্যে অভিযোগ ওঠছে পারিবারিক কলহের। দাম্পত্য জীবনে মান-অভিমানের। স্বামীরা বাসা-বাড়ীতে থাকার কারণে স্ত্রীরা বাড়তি চাপে আছেন। কেউ কেউ নিরব নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। অন্যদিকে অনেক পুরুষের অভিযোগ তারা বউদের বিভিন্ন নির্যাতন-নিপীড়ন আর হুমকি-ধমকির মধ্যে আছেন। স্ত্রীরা তাদেরকে নির্যাতন করছেন। কিন্তু তারা চক্ষুলজ্জা আর পরিবারের কথা চিন্তা করে কাউকে বলতে পারছেন না। নীরবে সহ্য করে যাচ্ছেন।

এসবের পিছনে আপনার কী মনে হয়? আমার মনে হয় মানুষ দাম্পত্যের মূল সুত্রটাই ভুলে গেছে। দাম্পত্যের মূল সুত্র হল একটি টেকসই সম্পর্ক। একটিবটেকসই সম্পর্কের ভিত হলো, পারস্পরিক আস্থা ও ভালোবাসা। আস্থা ও ভালোবাসাকে জিয়ে রাখে পারস্পরিক বোঝাপড়া ও সম্মান। আর সেক্রিফাইস এ সবগুলোকে আরো মজবুত ও নির্মল করে তোলে।

আসুন আমরা কোয়ারান্টাইন জীবনে আল্লাহ্ তা’আলার কাছে কায়মনোবাক্যে প্রার্থনা, ইবাদত ও যিকির আযকারের পাশাপাশি কিছু বিষয় মেনে চলি। এতে আশা করা যায় আল্লাহ্‌র রহমতে আমাদের দাম্পত্য জীবন সুখকর ও আনন্দদায়ক হবে।

তাহলে শুরু করা যাক। প্রথমেই আপনাকে দুটি মন্ত্র মুখস্ত রাখতে হবে। ‘সুখে থাকবো সুখে রাখবো’, ‘ভালো থাকবো ভালো রাখবো’। সুখে থাকার জন্য এ দুটি মন্ত্র অনেক শক্তিশালী ও কার্যকর। সাথে কিছু টিপসও মনে রাখুন, প্রতিবাদ না করে একটু চুপ থাকুন। সবসময় কথায় কথায় উত্তর দিবেন না। স্বামী-স্ত্রীর প্রেমময় সম্পর্ক ভালো রাখার সুন্দর উপায় হলো একজন রেগে গেলে অন্যজন চুপ থাকা। চুপ থাকলে কেউ হেরে যায় না। কারো মানসম্মান কমে যায়না। আপনি চুপ থাকলে অহেতুক রাগের কারণে এক সময় সে অনুতপ্ত হবে। মনে রাখতে হবে, রাগ থেকে কেবল চরম ঘৃণা আর ক্ষোভই বের হয়, প্রেম ও ভালোবাসা বের হয় না। যেমন পুড়ে যাওয়া কাঠ থেকে কেবল আগুন আর ছাই বের হয়, চন্দনের শুভ্রতা বের হয় না।

ঘরে থাকার এই সময়টাতে দুজনেই সংসারের কিছু দায়িত্ব ভাগ করে নিতে পারেন। আপনার প্রাণপ্রিয় যে স্ত্রী সারা বছর আপনার জন্য তিনবেলা রান্না করে তার জন্য আপনি দু একবেলা রান্না করতেই পারেন। যে আপনাকে না খাইয়ে কখনো খায়না সে খেয়েছে কিনা একবার জিজ্ঞেস করতেই পারেন। বরং জিজ্ঞেস করাই উচিৎ। দুজনে মিলেও কিছু পাক করতে পারেন। টুকটাক জিনিসগুলো কিচেনে এগিয়ে দিতে পারেন। তাতে আপনার প্রতি তার শুধু শ্রদ্ধা বাড়বে তা নয় বরং সে প্রাণ দিয়ে আপনার সেবা করবে। আপনার জন্য পাগলপারা হবে।

মাঝে মধ্যে একে অপরকে বলুন ‘আমি তোমাকে ভালোবাসি’। বিয়ে হয়ে গেছে বলে যে ভালোবাসি বলা যাবে না বা কোনো রোমান্টিকতা থাকা যাবে না এমন কোনো কথা নেই। সুস্থ সুন্দর স্বাভাবিক জীবনের জন্য রোমান্টিকতার দরকার আছে। একেবারে রসকষহীন জীবন পানসে মনে হয়। রোমান্টিকতা ভারাক্রান্ত জীবনে একটি মিষ্টি রসের প্রলেপ যা সম্পর্কের স্বাদ বাড়িয়ে তুলে বহুগুণ।

একজন আরেক জনের ভালো কাজ ও গুণগুলোর প্রশংসা করতে পারেন। বিকেলে একসঙ্গে বসে চা খেতে পারেন। গল্প করতে পারেন। এতে সম্পর্ক সুদৃঢ় হবে। ভুল বুঝাবুঝির অবসান হবে। মনের দূরত্ব কমবে। বাচ্চাদের সঙ্গে কিছু সময় কাটান। ওদের খেলার সঙ্গী হন। নিষ্কলঙ্ক এই পুষ্পকলিদের নিষ্পাপ স্বচ্ছ হাসিতে আপনার মনে স্বর্গীয় অনুভূতির দোলা দিবে। শান্তির ছোঁয়া পাবেন। প্রশান্তিতে অন্তরাত্মা ভরে যাবে ইন শা আল্লাহ্।

লেখক: মুফতি যাকারিয়্যা মাহমূদ মাদানী
প্রিন্সিপাল: মানাহিল মডেল মাদরাসা, মিরপুর, ঢাকা
পরিচালক: ভয়েস অব ইসলাম ও ইসলামিক গাইডেন্স।
[email protected]

এ সম্পর্কিত আরও পোস্ট

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to top button