গাইরে মাহরাম নারী পুরুষের সালাম
প্রশ্ন: নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলকেই বিভিন্ন প্রয়োজনে বাড়ীর বাইরে বের হতে হয়। এক্ষেত্রে অনেক সময় দেখা যায়, অপরিচিত গাইরে মাহরাম পুরুষরা নারীদেরকে সালাম দেন। অনুরূপভাবে গাইরে মাহরাম বা পরনারীরাও পর পুরুষকে সালাম দেন। এমতাবস্থায় সালামের উত্তর দেয়া জায়েয?
উত্তর: মাহরাম নারী-পুরুষ পরস্পরে সালাম বিনিময় সুন্নত। এর বিধানও অভিন্ন। এছাড়া কোনো প্রয়োজনে নারী-পুরুষের কথা বলার প্রয়োজন হলে পর্দা রক্ষা করে সালামের মাধ্যমে কথা শুরু করাটাই উত্তম। এ ক্ষেত্রে মূল কথা হল, ফিৎনার আশঙ্কা না থাকলে যেকোন পুরুষ যেকোন নারী কিংবা যেকোনো নারী যেকোনো পুরুষকে সালাম দিতে পারে। এতে কোনো অসুবিধা নেই। সাধারণ ভাবে নারী পুরুষ পরস্পরে সালাম বিনিময় নিষিদ্ধ নয়। পুরুষ নারীকে সালাম দেয়ার ক্ষেত্রে কথা হল, যদি ওই নারী স্ত্রী, মা, মেয়ে, বোন বা মাহরাম কোনো নারী হয় তাহলে তাকে সালাম দেয়া সুন্নাত, এবং তার সালামের উত্তর দেয়া ওয়াজিব। বরং সুন্নাত হল, পুরুষ তার পরিবার ও মাহরাম নারীদের সালাম দিবে। এমনি ভাবে নারী যদি গাইরে মাহরাম বৃদ্ধা কিংবা এমন হয় যে, তার প্রতি আকর্ষণ অনুভূত হয় না, তাহলে তাকেও সালাম দেয়া সুন্নাত এবং তার সালামের উত্তর সশব্দে দেয়া ওয়াজিব। এ মর্মে কয়েকটি হাদিস উল্লেখ করা হল-
আসমা বিনতে ইয়াযীদ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) একদল মহিলার নিকট দিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন তিনি তাদেরকে সালাম দিলেন। (আবুদাঊদ, হাদিস, ৫২০; তিরমিযী, হাদিস, ২৬৯৮, মিশকাত, হাদিস, ৪০০)।
উম্মে হানী (রা.) বলেন, আমি মক্কা বিজয়ের দিন নবী (সা.)-এর নিকট আসলাম। তখন তিনি গোসল করছিলেন, এবং ফাতিমা (রা.) তাকে কাপড় দিয়ে পর্দা করছিলেন। অতঃপর আমি তাকে সালাম দিলাম (বুখারী, মুসলিম; মিশকাত, হাদিস, ৩৯৭৭)।
আবু হাশেম থেকে বর্ণিত, সাহল ইবনে সা‘দ (রা.) বলেছেন, জুম‘আর দিন আমরা খুশী হ’তাম। (আবু হাশেম বলেন) আমি জিজ্ঞেস করলাম, কেন? তিনি বললেন, আমাদের এখানে এক বৃদ্ধা ছিল। সেই বৃদ্ধা এক প্রকার সবজির শিকড় তুলে পাতিলে রাখত এবং যবের কয়েকটি দানা তাতে ঢেলে দিয়ে খাবার তৈরি করত। আমরা জুম‘আর সালাত শেষ করে ঐ বৃদ্ধার নিকট যেতাম এবং তাকে সালাম করতাম। (বুখারী, হাদিস,২৩৪৯)।
ইবনে হাজার আসকালানি বলেন, উপরোক্ত সমূহ প্রমাণ করে যে, নারী-পুরুষ একে অপরকে সালাম দিতে পারে। তবে ফিৎনার ভয় থাকলে সালাম দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে (ফাৎহুল বারী, ১১/৩৪ পৃঃ)।
পক্ষান্তরে কোন যুবতী বা তরুণী যার মাধ্যমে পুরুষ কিংবা পুরুষের মাধ্যমে সে ফেতনায় পড়ার আশঙ্কা থাকে তাহলে তাকে সালাম দেয়া এবং তার সালামের উত্তর দেয়া যাবে না। শাফিঈ, মালেকি ও হাম্বলি মাযহাব মতে এ অবস্থায় সালাম প্রদানকে মাকরুহ বলা হয়েছে।
আর হানাফি মাযহাব মতে, গায়রে মাহরাম নারীদের সাথে বিনা প্রয়োজনে সালাম আদান প্রদান করা যাবে না। যেমন, পথে চলাচল করা অবস্থায় তাদেরকে সালাম দেওয়া যাবে না। তেমনি তারা সালাম দিলে তার উত্তর শুনিয়ে দেওয়া যাবে না। হাঁ, কোনো প্রয়োজনে তাদের সাথে কথা বলতে হলে পর্দা রক্ষা করে কথা বলবে এবং এক্ষেত্রে সালামের মাধ্যমে কথা শুরু করাটাই উত্তম। এমনিভাবে মোবাইলে কথা বলার সময়ও সালাম আদান প্রদান করা যাবে। আর মাহরাম নারীদের সাথে সর্বাবস্থায় সালাম আদান প্রদান করা যাবে। গাইরে মাহরাম/বেগানা নারী যদি সালাম দেয় তাহলে পুরুষ মনে মনে উত্তর দিবে। আর বেগানা পুরুষ যদি সালাম দেয় তাহলে নারী মনে মনে উত্তর দিবে। (আল মাউসুআ’তুল ফিকহিয়্যা আল কুয়েতিয়া ৬/১৬৬, মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হাদিস, ১৯৪৪৯, মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদিস, ২৬৩০০, মিরকাতুল মাফাতীহ, ৮/৪৬৮; আন-নাহরুল ফায়েক, ১/২৭১; রদ্দুল মুহতার, ১/৬১৬)
ইমাম নববী (রহ.) বলেন, যদি পরনারী এমন হয় যে, ফিতনার আশঙ্কা আছে তাহলে পুরুষ তাকে সালাম দিবে না। যদি সে সালাম দিয়ে দেয় তাহলে মহিলা উত্তর দিবে না। আর নারী পরপুরুষকে আগে সালাম দিবে না। যদি সে সালাম দিয়ে দেয় তাহলে সে উত্তর পাওয়ার উপযুক্ত হবে না। (আল-আযকার, ৪০৭)
উত্তর প্রদানে: মুফতি যাকারিয়্যা মাহমূদ মাদানী
বি. এ. অনার্স, এম. এ, এমফিল: মদীনা বিশ্ববিদ্যালয়, সৌদি আরব ও
আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম।
ইফতা ও দাওরায়ে হাদীস: যাত্রাবাড়ী ও লালবাগ জামেয়া, ঢাকা
প্রিন্সিপাল, মানাহিল মডেল মাদরাসা, মিরপুর-১, ঢাকা
পরিচালক: ভয়েস অব ইসলাম।