ফিতনা শব্দের ব্যবহার ও তার উদ্দেশ্য
ফিতনা (فتنة) একটি ব্যাপক অর্থবোধক শব্দ। কুরআনুল কারীম ও হাদীস শরীফে ফিতনা শব্দটি বিভিন্ন অর্থে ব্যবহার হয়েছে, যেমন: কুফর, শিরক, পরীক্ষা, মাল-সম্পদ, অন্যায় অত্যাচার, যুলুম, নিপীড়ন, দুঃখ-দুর্দশা ও বিপদাপদ, আযাব, গযব, দাঙ্গা, হাঙ্গামা, জাহান্নামীদের অগ্নি দ্বারা সাজা ইত্যাদি।
যেমন সূরা আনফালে আল্লাহ্ তাআলা বলেন:
وَ قَاتِلُوۡہُمۡ حَتّٰی لَا تَکُوۡنَ فِتۡنَۃٌ وَّ یَکُوۡنَ الدِّیۡنُ کُلُّہٗ لِلّٰہِ ۚ فَاِنِ انۡتَہَوۡا فَاِنَّ اللّٰہَ بِمَا یَعۡمَلُوۡنَ بَصِیۡرٌ
তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাও যে পর্যন্ত না ফিতনা (কুফর ও শিরক) খতম হয়ে যায় আর দ্বীন পুরোপুরিভাবে আল্লাহর জন্য হয়ে যায়। অতঃপর তারা যদি বিরত হয় তাহলে তারা (ন্যায় বা অন্যায়) যা করে আল্লাহ তার সম্যক দ্রষ্টা।[1]
এ আয়াতে ফিতনা দ্বারা উদ্দেশ্য হল, দুঃখ-দুর্দশা ও বিপদাপদের অব্যাহত ধারা। নিম্মোক্ত হাদীসটি থেকে বিষয়টি আরোও স্পষ্ট হওয়া যায়।
আব্দুল্লাহ ইবনু উমর (রা.) প্রমূখ সাহাবায়ে কেরামের উদ্ধৃতিতে বর্ণিত হয়েছে, আয়াতে ফেৎনা অর্থ হচ্ছে, দুঃখ-দুর্দশা ও বিপদাপদের ধারা, পক্ষান্তরে দ্বীন’ শব্দের অর্থ প্রভাব ও বিজয়। মক্কার কাফেররা সদাসর্বদা মুসলিমদের উপর এ ফেৎনা অব্যাহত রেখেছিল যতক্ষণ পর্যন্ত তারা মক্কায় অবস্থান করছিলেন। প্রতি মুহুর্তে তাদের অবরোধে আবদ্ধ থেকে নানা রকম কষ্ট সহ্য করে গেছেন। তারপর যখন তারা মদীনায় হিজরত করেন, তারপরও গোটা মদীনা আক্রমণের মাধ্যমে তাদের হিংসা-রোষই প্রকাশ পেতে থাকে। এ প্রেক্ষাপটে আয়াতটি অবতীর্ণ হয়েছে। সুতরাং এখানে আয়তটির অর্থ হবে, মুসলিমগণকে কাফেরদের বিরুদ্ধে ততক্ষণ পর্যন্ত যুদ্ধ করতে থাকা কর্তব্য, যতক্ষণ না তারা অন্যায়-অত্যাচার-উৎপীড়ন থেকে মুক্তি লাভ করতে সমর্থ হন, মুসলিম আপন দ্বীন পালন করতে কোন প্রকার সমস্যার সম্মুখীন হয়।[2]
সূরা বাকারায় আল্লাহ্ তাআলা বলেন:
وَ الۡفِتۡنَۃُ اَشَدُّ مِنَ الۡقَتۡلِ
আর ফিতনা হত্যার চেয়েও গুরুতর।[3]
এ আয়াতে ফিতনা বলতে কুফুরি ও শিরক বুঝানো হয়েছে।[4]
সূরা আনকাবূতে আল্লাহ্ তাআলা বলেন:
اَحَسِبَ النَّاسُ اَنۡ یُّتۡرَکُوۡۤا اَنۡ یَّقُوۡلُوۡۤا اٰمَنَّا وَ ہُمۡ لَا یُفۡتَنُوۡنَ
মানুষ কি মনে করে যে, ‘আমরা ঈমান এনেছি’ বললেই তাদের ছেড়ে দেয়া হবে, আর তাদের পরীক্ষা করা হবে না? [5]
এ আয়াতে মাল-সম্পদ। বিপদআপদ ও দুঃখ-দুর্দশা বুঝানো হয়েছে। কেননা يُفْتَنُون শব্দটি فتنة থেকে উদ্ভূত। এর অর্থ পরীক্ষা।[6]
ঈমানদার বিআদশেষত: নবীগণকে এ জগতে বিভিন্ন প্রকার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হয়েছে। পরিশেষে বিজয় ও সাফল্য তাদেরই হাতে এসেছে। এসব পরীক্ষা জান ও মালের উপর ছিল।([7]) এর মাধ্যমে তাদের ঈমানের দৃঢ়তার পরীক্ষা হয়ে যেত। কোন সময় কাফের ও পাপাচারীদের শক্ৰতা এবং তাদের নির্যাতনের মাধ্যমে হয়েছে, যেমন অধিকাংশ নবীগণ, শেষনবী মুহাম্মদ (সা.) ও তার সাহাবীগণ প্রায়ই এ ধরনের পরীক্ষার সম্মুখীন হয়েছেন। সীরাত ও ইতিহাসের গ্রন্থাবলী এ ধরনের ঘটনাবলী দ্বারা পরিপূর্ণ। কোন সময় এই পরীক্ষা রোগ-ব্যাধি ও অন্যান্য কষ্টের মাধ্যমে হয়েছে। যেমন আইয়ুব (আ.) এর হয়েছিল। কারও কারও বেলায় সর্বপ্রকার পরীক্ষার সমাবেশও করে দেয়া হয়েছে।
সূরা যারিয়াতে আল্লাহ্ তাআলা বলেন:
یَوۡمَ ہُمۡ عَلَی النَّارِ یُفۡتَنُوۡنَ
যে দিন তারা অগ্নিতে সাজাপ্রাপ্ত হবে।[8]
এ আয়াতে ফিতনা দ্বারা উদ্দেশ্য (জাহান্নামী) আগুনের সাজা। ফাতহুল কাদির।
সূরা বুরুজে এই মর্মে আল্লাহ্ তাআলা আরোও বলেন:
اِنَّ الَّذِیۡنَ فَتَنُوا الۡمُؤۡمِنِیۡنَ وَ الۡمُؤۡمِنٰتِ ثُمَّ لَمۡ یَتُوۡبُوۡا فَلَہُمۡ عَذَابُ جَہَنَّمَ وَ لَہُمۡ عَذَابُ الۡحَرِیۡقِ
যারা মু’মিন পুরুষ ও নারীদের প্রতি যুলম পীড়ন চালায় অতঃপর তাওবাহ করে না, তাদের জন্য আছে জাহান্নামের শাস্তি, আর আছে আগুনে দগ্ধ হওয়ার যন্ত্রণা।[9]
فَتَنُوا শব্দের এক অর্থ হচ্ছে, أحرقوا বা জ্বালিয়েছিল। অপর অর্থ পরীক্ষা করা। বিপদে ফেলা। মূলত এ আয়াতে ফিতনা দ্বারা কাফেরদের কর্তৃক মুসলমানদের উপর দ্বারা যুলুম, অত্যাচার ও যুলুম, নিপীড়ন বুঝানো হয়েছে। আয়াতে প্রকৃত পক্ষে এসব সেসব কাফেরদের জাহান্নামের আযাব ও দহন যন্ত্রণার খবর দেয়ার সাথে সাথে কুরআন বলছে যে, এই আযাব তাদের ওপর পতিত হবে, যারা এই দুষ্কর্মের কারণে অনুতপ্ত হয়ে তওবা করেনি। এতে তাদেরকে তাওবার দাওয়াত দেয়া হয়েছে। হাসান বসরী বলেনঃ বাস্তবিকই আল্লাহর অনুগ্রহ ও কৃপার কোন তুলনা নেই। তারা তো আল্লাহর নেক বান্দাদেরকে জীবিত দগ্ধ করে তামাশা দেখছে, আল্লাহ তা’আলা এরপরও তাদেরকে তওবা ও মাগফিরাতের দাওয়াত দিচ্ছেন।([10])
সূরা আনফালে আল্লাহ্ তাআলা বলেন:
وَ اتَّقُوۡا فِتۡنَۃً لَّا تُصِیۡبَنَّ الَّذِیۡنَ ظَلَمُوۡا مِنۡکُمۡ خَآصَّۃً ۚ وَ اعۡلَمُوۡۤا اَنَّ اللّٰہَ شَدِیۡدُ الۡعِقَابِ
আর তোমরা ভয় কর ফিতনাকে যা তোমাদের মধ্য থেকে বিশেষভাবে শুধু যালিমদের উপরই আপতিত হবে না। আর জেনে রাখ, নিশ্চয় আল্লাহ আযাব প্রদানে কঠোর।[11]
এখানে ফিতনা দ্বারা উদ্দেশ্য, মানুষের এক অপরের উপর ক্ষমতার অধিকারী হয়ে নির্বিচারে সকলের উপর অত্যাচার করে। অথবা ব্যাপক আযাব বা শাস্তি, যেমন অনাবৃষ্টি, অতিবৃষ্টি, বন্যা ইত্যাদি, যা আকাশ ও পৃথিবী হতে প্রাকৃতিক দুর্যোগরূপে নেমে আসে, যাতে সৎ-অসৎ সবাই প্রভাবিত হয়। অথবা কিছু হাদীসে সৎকাজের আদেশ ও অসৎ কাজে বাধাদান ছেড়ে দিলে যে শাস্তির সতর্কবাণী শোনানো হয়েছে, এখানে তাকেই ‘ফিতনা’ বলে ব্যক্ত করা হয়েছে।[12]
অন্যান্য মুফাসসিরীনদের মতে এখানে ফেতনা বলতে সে সব সামাজিক সামগ্রিক ফেতনা বুঝানো হয়েছে, যা এক সংক্রামক ব্যাধির মত জন-সমাজে ছড়িয়ে পড়ে, যাতে কেবল গুনাহগার লোকরাই নিপতিত হয় না, সে লোকেরাও এতে পড়ে মার খায়, যারা গুনাহগার সমাজে বসবাস করাকে বরদাশত করে থাকে।[13]
একই সূরার ২৮ নং আয়াতে আল্লাহ্ তাআলা বলেন:
وَ اعۡلَمُوۡۤا اَنَّمَاۤ اَمۡوَالُکُمۡ وَ اَوۡلَادُکُمۡ فِتۡنَۃٌ ۙ وَّ اَنَّ اللّٰہَ عِنۡدَہٗۤ اَجۡرٌ عَظِیۡمٌ
আর জেনে রাখ, তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি তো ফিতনা। আর নিশ্চয় আল্লাহ, তাঁর নিকট আছে মহা পুরস্কার।[14]
এ আয়াতে ধন-সম্পদ ও সন্তানাদীকে ফিতনা বলা হয়েছে। উদ্দেশ্য হল, সাধারণতঃ সন্তান ও সম্পদ মানুষকে খিয়ানত করতে এবং আল্লাহ ও তাঁর রসূলের অবাধ্য হতে বাধ্য করে। সেই জন্য সে দুটিকে ফিতনা (পরীক্ষা) বলা হয়েছে। অর্থাৎ এর দ্বারা মানুষের পরীক্ষা নেওয়া হয়ে থাকে যে, তাদের ভালবাসায় আমানত ও আনুগত্যের হক পূর্ণরূপে আদায় করে কি না? যদি সে তা পূর্ণরূপে আদায় করে, তাহলে সে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়, অন্যথা সে অনুত্তীর্ণ ও অসফল বলে গণ্য হয়। এই অবস্থায় এই সম্পদ ও সন্তান তাঁর জন্য আল্লাহর শাস্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।[15]
এভাবে সূরা আলে ইমরানের ৭, সূরা নিসার ৯১, সূরা মাইদার ৭১, সূরা তাওবার ৪৭, ৪৮ ও ৪৯ এবং সূরা আহযাবের ১৪ নং আয়াতসহ আরোও অনেক আয়াতে ফিতনা শব্দটির উল্লেখ রয়েছে। এসব আয়াত দ্বারা বোঝা যায়, অবস্থাভেদে ফিতনার অর্থের মধ্যে ভিন্নতা আসে।
হাদীসশাস্ত্রেও ফিতনা সম্পর্কে অসংখ্য বর্ণনা রয়েছে। অধিকাংশ হাদীসের ভাষ্য থেকে ফিতনা বলতে এমন একটা অবস্থার ইঙ্গিত পাওয়া যায়, যাতে সমাজ বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে। সমাজে সংঘাত থাকবে বহুমুখী। মানুষের মধ্যে মতভেদ, রাজনৈতিক বিভাজন, অনৈক্য, অস্থিরতা, গ্রুপিং, দলাদলি প্রকট আকার ধারণ করবে। তারা নিজেদের মধ্যে বহুবিদ মতপার্থক্যে বিভক্ত হয়ে নিজেদের মধ্যে মারামারি, কাটাকাটি, হানাহানি ও রক্তপাতে লিপ্ত হবে। ফিতনার ব্যাপকতা বৃদ্ধি পাবে। সে সময় ঈমান নিয়ে অনেক কঠিন হবে।
আবূ হুরাইরা (রা.) কর্তৃক বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল (সা.) ফিতনার এ ব্যাপকতা সম্পর্কে বারবার সাবধান করেছেন। তিনি বলেছেন:
عنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ سَتَكُونُ فِتَنٌ، القَاعِدُ فِيهَا خَيْرٌ مِنَ القَائِمِ، وَالقَائِمُ فِيهَا خَيْرٌ مِنَ المَاشِي، وَالمَاشِي فِيهَا خَيْرٌ مِنَ السَّاعِي، مَنْ تَشَرَّفَ لَهَا تَسْتَشْرِفْهُ، فَمَنْ وَجَدَ مِنْهَا مَلْجَأً، أَوْ مَعَاذًا، فَلْيَعُذْ بِهِ
শীঘ্রই অনেক ফিতনা দেখা দেবে। তখন উপবিষ্ট ব্যক্তি দাঁড়ানো ব্যক্তির চেয়ে উত্তম। দাঁড়ানো ব্যক্তি চলমান ব্যক্তির চেয়ে উত্তম। চলমান ব্যক্তি ধাবমান ব্যক্তির চেয়ে উত্তম। যে ব্যক্তি ফিতনার দিকে তাকাবে ফিতনা তাকে ঘিরে ধরবে। তখন কেউ যদি কোন আশ্রয়ের জায়গা কিংবা নিরাপদ জায়গা পায়, তাহলে সে যেন সেখানে আত্মরক্ষা করে।[16]
আবূ সাঈদ খুদরী (রা.) কর্তৃক বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল (সা.) বলেন:
عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الخُدْرِي أَنَّهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ يَأْتِي عَلَى النَّاسِ زَمَانٌ تَكُونُ الْغَنَمُ فِيهِ خَيْرَ مَالِ الْمُسْلِمِ يَتْبَعُ بِهَا شَعَفَ الْجِبَالِ أَوْ سَعَفَ الْجِبَالِ فِي مَوَاقِعِ الْقَطْرِ يَفِرُّ بِدِينِهِ مِنْ الْفِتَنِ
মানুষের উপর এমন এক যুগ আসছে, যখন মুসলিমের জন্য শ্রেষ্ঠ সম্পদ হবে ভেঁড়া-ছাগল; তাই নিয়ে পর্বত-শিখরে ও পানির জায়গাতে চলে যাবে; ফিতনা থেকে নিজ দ্বীন নিয়ে পলায়ন করবে।[17]
উহবান (রা.) বলেন, আল্লাহর রাসূল (সা.) বলেছেন:
عن أهبان قَالَ قَالَ رسول الله ﷺ سَتَكُونُ فِتَنٌ وَفُرْقَةٌ فَإِذَا كَانَ ذَلِكَ فَاكْسِرْ سَيْفَكَ وَاتَّخِذْ سَيْفًا مِنْ خَشَبٍ
ভবিষ্যতে ফিতনা ও বিচ্ছিন্নতা দেখা দেবে। সুতরাং সে সময় এলে তুমি তোমার তরবারি ভেঙ্গে ফেলো এবং কাষ্ঠের তরবারি বানিয়ে নিয়ো।([18]
খালেদ বিন উরফুত্বাহ (রা.) বলেন, আমাকে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:
عَنْ خَالِدِ بْنِ عُرْفُطَةَ قَالَ قَالَ لِي رَسُولُ اللهِ ﷺ يَا خَالِدُ إِنَّهَا سَتَكُونُ بَعْدِي أَحْدَاثٌ وَفِتَنٌ وَاخْتِلَافٌ فَإِنْ اسْتَطَعْتَ أَنْ تَكُونَ عَبْدَ اللهِ الْمَقْتُولَ لَا الْقَاتِلَ فَافْعَلْ فَإِنْ أَدْرَكْتَ ذَاكَ فَكُنْ عَبْدَ اللهِ الْمَقْتُولَ، وَلَا تَكُنْ عَبْدَ اللهِ الْقَاتِلَ
হে খালেদ! আমার পরে বহু অঘটন, ফিতনা ও মতানৈক্য সৃষ্টি হবে। সুতরাং তুমি পারলে সে সময় আল্লাহর নিহত বান্দা হও এবং হত্যাকারী হয়ো না।[19]
আবূ মূসা আশআরী (রা.) কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:
وَعَنْ أَبِي مُوسَى الْأَشْعَرِيِّ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سَلَامَةُ الرَّجُلِ فِي الْفِتْنَةِ أَنْ يَلْزَمَ بَيْتَهُ
ফিতনার সময় মানুষের নিরাপত্তার উপায় তার স্বগৃহে অবস্থান।[20]
আহনাফ ইবনু কায়স (রহ.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন:
عَنِ الأَحْنَفِ بْنِ قَيْسٍ، قَالَ ذَهَبْتُ لأَنْصُرَ هَذَا الرَّجُلَ، فَلَقِيَنِي أَبُو بَكْرَةَ فَقَالَ أَيْنَ تُرِيدُ قُلْتُ أَنْصُرُ هَذَا الرَّجُلَ. قَالَ ارْجِعْ فَإِنِّي سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ ” إِذَا الْتَقَى الْمُسْلِمَانِ بِسَيْفَيْهِمَا فَالْقَاتِلُ وَالْمَقْتُولُ فِي النَّارِ ”. قُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ هَذَا الْقَاتِلُ فَمَا بَالُ الْمَقْتُولِ قَالَ ” إِنَّهُ كَانَ حَرِيصًا عَلَى قَتْلِ صَاحِبِهِ
আমি তাকে (আলী রা.) কে সাহায্য করার জন্য যাচ্ছিলাম। ইত্যবসরে আমার সাথে আবূ বাকরা (রা.) এর সাক্ষাৎ ঘটল। তিনি বললেন, কোথায় যাচ্ছি? আমি বললাম, ঐ ব্যাক্তিকে সাহায্য করতে। তিনি বললেন, ফিরে যাও। কেননা, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.) কে বলতে শুনেছি যে, যখন দুজন মুসলমান তরবারী নিয়ে পরস্পর সংঘর্ষে লিপ্ত হয় তখন হত্যাকারী ও নিহত ব্যাক্তির অবস্থান হবে জাহান্নাম। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! হত্যাকারীর ব্যাপারটা তো বোধগম্য। কিন্তু নিহত ব্যাক্তির ব্যাপার সে কেমন? তিনি বললেন: সেও তো প্রতিপক্ষকে হত্যা করতে আগ্রহী ছিল।[21]
এ হাদীস থেকে বোঝা যায়, মুসলমানদের দুই গ্রুপে সংঘাত বাধলে তাদের কোনো এক পক্ষের সমর্থনে যুদ্ধ না করে বরং মীমাংসা করার চেষ্টা করাই রাসূল (সা.) এর আদর্শ। কারণ মুসলমানদের মধ্যে এ ধরনের সংঘাত ফিতনার পর্যায়ে পড়ে, যা থেকে দূরে থাকাকে সৌভাগ্য বলা হয়েছে।
লেখক: মুফতি যাকারিয়্যা মাহমূদ মাদানী
বি. এ অনার্স, এম. এ, এমফিল: মদীনা বিশ্ববিদ্যালয়, সৌদি আরব
পরিচালক: ভয়েস অব ইসলাম
প্রিন্সিপাল মাদরাসাতুল মাদীনাহ লিল বানাত, মিরপুর-১, ঢাকা
প্রধান গবেষক: আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশন
সম্পাদক ও প্রকাশক: ডেইলি মাই নিউজ।
——————————————————————
(1) দেখুন: সূরা আনফাল (৮), আয়াত: ৩৯
(2) দেখুন: সূরা মায়ইদা (৫), আয়াত: ৪৪।
(3) দেখুন: সূরা বাকারা (২), আয়াত: ১৯১।
(4) দেখুন: তাফসীর আহসানুল বায়ান, পৃ: ৫৩।
(5) দেখুন: সূরা আনকাবূত (২৯), আয়াত: ২।
(6) দেখুন: তাফসীরে আদওয়াউল বায়ান, ৬/১৫৫, দারুল ফিকর, বৈরুত, সংস্করণ ১১৯৫, তাফসীর ফাতহুল কাদীর, ৪/২৭৩, শামেলা, আইসারুত তাফাসীর, ৪/১০৮, মাকতাবতুল উলূম ওয়াল হিকাম, মদীনা মুনাওয়ারা, পঞ্চম সংস্করণ, ২০০৩।
(7) দেখুন: তাফসীর আহসানুল বায়ান, পৃ: ৬৯০।
(8) দেখুন: সূরা যারিয়াতে (৫১), আয়াত: ১৩।
(9) দেখুন: সূরা বুরুজ (৮৫), আয়াত: ১০।
(10) দেখুন: তাফসীরে আদওয়াউল বায়ান, ৬/১৭, ৮/৪৮৫, দারুল ফিকর, বৈরুত, সংস্করণ ১১৯৫, তাফসীর ইবনে কাসীর, ৬/৯৪, দার তইবাহ, দ্বিতীয় প্রকাশ, ১৯৯৯, শামেলা।
(11) দেখুন: সূরা আনফাল (৮), আয়াত: ২৫।
(12) দেখুন: তাফসীর আহসানুল বায়ান, পৃ: ৬৯০।
(13) দেখুন: তাফসীর ইবনে কাসীর, ৪/৩৮, দার তইবাহ, দ্বিতীয় প্রকাশ, ১৯৯৯, তাফসীরে মুইয়াসসার, ৩/১৯৩, কিং ফাহাদ কুরআন কমপ্লেক্স, মদীনা।
(14) দেখুন: সূরা আনফাল (৮), আয়াত: ২৮।
(15) দেখুন: তাফসীর আহসানুল বায়ান, পৃ: ৬৯০।
(16) দেখুন: সহীহ বুখারী, হাদীস: ৭০৮১, দার তওকুন নাজাহ, প্রথম সংস্করণ, ১৪২২ হি., সহীহ মুসলিম, হাদীস: ২৮৮৬, দার ইহইয়াইত তুরাস আল আরাবি, বৈরুত, শামেলা,
(17) দেখুন: সহীহ বুখারী, হাদীস: ৩৬০০, দার তওকুন নাজাহ, প্রথম সংস্করণ, ১৪২২ হি.।
(18) দেখুন: মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ২০৬৭১, মুআসসাতুর রিসালাহ, দ্বিতীয় প্রকাশ, ১৯৯৯, শামেলা।
(19) দেখুন: মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ২২৪৯৯, মুআসসাতুর রিসালাহ, দ্বিতীয় প্রকাশ, ১৯৯৯, শামেলা, মুসনাদে আবূ য়া’লা, হাদীস: ১৫২৩, দারুল মামুন, দামেস্ক, প্রথম প্রকাশ, ১৯৯৪।
(20) দেখুন: মানাবী, আততাইসীর শারহুল জামে আস সগীর, ২/১২৩, মাকবাতুল ঈমাম শাফেয়ী, তৃতীয় প্রকাশ, রিয়াদ, ১৯৮৮। ফাইদুল কাদীর, ৪/১১৬, মাকতাবা তিজারিয়্যাহ কুবরা, প্রথম প্রকাশ, মিশর, শায়খ আলবানী হাদীসটিকে হাসান বলেছেন। সহীহ ওয়া দঈফ আল জামে আস সগীর, হাদীস: ৫৯৬২, শামেলা।
(21) দেখুন: সহীহ বুখারী, হাদীস: ৬৮৭৫, দার তওকুন নাজাহ, প্রথম সংস্করণ, ১৪২২ হি., সহীহ মুসলিম, হাদীস: ২৮৮৮, দার ইহয়া আত তুরাস আল আরাবি, বৈরুত, সুনান আল বাইহাকী, হাদীস: ১৬৭৯৩, দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যাহ, বৈরুত, তৃতীয় সংস্করণ, ২০০৩।