স্ত্রীর দায়িত্ব ও কর্তব্য

পরিবারে স্ত্রীর দায়িত্ব-কর্তব্যও কম নয়। স্ত্রী একটি পরিবারের কর্ত্রী হয়ে থাকে। সে তার দায়িত্ব ভালভাবে পালন করলে পরিবার ভাল চলে, সবাই সুখী হয়। কিন্তু স্ত্রী তার দায়িত্বে অবহেলা করলে কিংবা দায়িত্ব পালনে অলসতা করলে পরিবারে বিশৃঙ্খলা ও অশান্তি মেনে আসে। তাই স্ত্রীকে দায়িত্ব সচেতন ও কর্তব্যপরায়ণ হওয়া যরূরী। নিম্নে স্ত্রীর কিছু দায়িত্ব ও কর্তব্য উল্লেখ করা হ’ল।-

১. ধৈর্যশীলা হওয়া : স্বামী প্রদত্ত কষ্ট ও তার দুর্ব্যবহারে ধৈর্য ধারণ করা এবং একে ছওয়াবের কারণ মনে করা উচিত। তার পক্ষ থেকে খারাপ আচরণ পেলেও তা সহ্য করা এবং তার শয্যা পরিত্যাগ না করা স্ত্রীর জন্য কর্তব্য। নবী করীম (ছাঃ) বলেন,إِذَا دَعَا الرَّجُلُ امْرَأَتَهُ إِلَى فِرَاشِهِ فَأَبَتْ، فَبَاتَ غَضْبَانَ عَلَيْهَا، لَعَنَتْهَا الْمَلاَئِكَةُ حَتَّى تُصْبِحَ- ‘কোন লোক যদি নিজ স্ত্রীকে বিছানায় আসতে ডাকে আর স্ত্রী অস্বীকার করে এবং সে ব্যক্তি স্ত্রীর উপর ক্রুদ্ধ হয়ে রাত্রি যাপন করে, তাহ’লে ফেরেশতাগণ এরূপ স্ত্রীর উপর সকাল পর্যন্ত লা‘নত করতে থাকে’।[1] অন্যত্র তিনি বলেন,إِذَا بَاتَتِ الْمَرْأَةُ مُهَاجِرَةً فِرَاشَ زَوْجِهَا لَعَنَتْهَا الْمَلاَئِكَةُ حَتَّى تَرْجِعَ- ‘যদি কোন স্ত্রী তার স্বামীর শয্যা ছেড়ে অন্যত্র রাত্রি যাপন করে তাহ’লে যতক্ষণ না সে তার স্বামীর শয্যায় ফিরে আসে, ততক্ষণ ফেরেশতাগণ তার ওপর লা‘নত বর্ষণ করতে থাকে’।[2]

২. স্বামীর পরিবারের উত্তম সংরক্ষক হওয়া : স্বামীর পরিবারের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করা এবং তার অনুপস্থিতিতে তার সম্পদের সংরক্ষণ করা স্ত্রীর কর্তব্য। আর জীবন যাত্রার ব্যয় নির্বাহের ক্ষেত্রে অপচয় ও অপব্যয় না করা। যেমন আল্লাহ বলেন,وَلَا تُبَذِّرْ تَبْذِيْرًا، إِنَّ الْمُبَذِّرِيْنَ كَانُوْا إِخْوَانَ الشَّيَاطِيْنِ وَكَانَ الشَّيْطَانُ لِرَبِّهِ كَفُوْرًا- ‘আর তুমি মোটেই অপব্যয় করো না। নিশ্চয়ই অপচয়কারীরা শয়তানের ভাই। আর শয়তান স্বীয় প্রতিপালকের প্রতি অতিশয় অকৃতজ্ঞ’ (বানী ইসরাঈল ১৭/২৬-২৭)। তিনি আরো বলেন, وَكُلُوْا وَاشْرَبُوْا وَلَا تُسْرِفُوْا إِنَّهُ لاَ يُحِبُّ الْمُسْرِفِيْنَ- ‘আর তোমরা খাও ও পান কর। কিন্তু অপচয় করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ অপচয়কারীদের ভালবাসেন না’ (আ‘রাফ ৭/৩১)।

পক্ষান্তরে স্বামীর সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি সম্পর্কে স্ত্রীকে পরকালে জবাবদিহি করতে হবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন,وَالْمَرْأَةُ رَاعِيَةٌ عَلَى أَهْلِ بَيْتِ زَوْجِهَا وَوَلَدِهِ وَهِىَ مَسْئُولَةٌ عَنْهُمْ، ‘নারী তার স্বামীর পরিবার ও সন্তান-সন্ততির উপর দায়িত্বশীল। সে তাদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে’।[3]

মূলতঃ স্ত্রী সংসারের কর্ত্রী। স্বামীর ধন-সম্পদ ও সংসার তার রাজত্ব এবং এগুলো স্বামীর আমানত। তাই তার যথার্থ হেফাযত করা এবং যথাস্থানে সঠিকভাবে তা ব্যয় করা স্ত্রীর অন্যতম প্রধান কর্তব্য। স্বামীর সম্পদ থেকে অন্যায়ভাবে গোপনে ব্যয় করা ও স্বামীর বিনা অনুমতিতে আত্মীয়-স্বজনকে উপহার-উপঢৌকন দেওয়াও বৈধ নয়।[4] এসব কারণে অনেক সময় স্বামী-স্ত্রীর মাঝে ভুল বুঝাবুঝির সৃষ্টি হয়। যা স্থায়ী হয়ে অনেক ক্ষেত্রে বিচ্ছেদ পর্যন্ত গড়ায়। অবশ্য স্বামী ব্যয়কুণ্ঠ বা কৃপণ হ’লে এবং স্ত্রী ও সন্তানের প্রয়োজনীয় খরচ না দিলে, স্ত্রী গোপনে যতটুকু প্রয়োজন ততটুকুই নিতে পারবে।[5]

আর স্বামী দানশীল হ’লে ও দানের জন্য সাধারণ অনুমতি থাকলে স্ত্রী যদি তার অনুপস্থিতিতে দান করে, তাহ’লে উভয়েই সমান ছওয়াবের অধিকারী হবে।[6]

৩. শ্বশুর-শাশুড়ীর প্রতি উত্তম ব্যবহার করা : স্ত্রীর অন্যতম কর্তব্য হ’ল স্বামীকে সন্তুষ্ট করা। সেজন্য স্ত্রীর উচিত স্বামীর পিতা-মাতার সাথে উত্তম আচরণ ও তাদের সেবা করে স্বামীর সন্তুষ্টি অর্জন করা। সেই সাথে স্বামীকেও তার পিতা-মাতার সন্তুষ্টি অর্জনে সাহায্য করা। অপরদিকে স্বামীর ভাইদের সাথে পর্দা বজায় রেখে নিজের ইয্যত-আব্রু ও লজ্জাস্থান হেফাযতের চেষ্টা করা যরূরী। রাসূল (ছাঃ) বলেন,

إِيَّاكُمْ وَالدُّخُولَ عَلَى النِّسَاءِ. فَقَالَ رَجُلٌ مِنَ الأَنْصَارِ يَا رَسُولَ اللهِ أَفَرَأَيْتَ الْحَمْوَ. قَالَ الْحَمْوُ الْمَوْتُ-

‘মহিলাদের নিকট একাকী যাওয়া থেকে বিরত থাক। এক আনছার ব্যক্তি জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসূল! দেবরের ব্যাপারে কী হুকুম? তিনি বললেন, দেবর হচ্ছে মৃত্যুতুল্য’।[7] দেবর বলতে স্বামীর নিজের ছোট ভাই (সহোদর বা সৎ), চাচাতো, মামাতো, খালাতো, ফুফাতো ভাইদের বুঝায়। সেই সাথে স্বামীর বড় ভাইয়ের সাথে দেখা-সাক্ষাৎ থেকে বিরত থাকাও যরূরী। অনুরূপভাবে স্ত্রী তার চাচাতো, মামাতো, খালাতো, ফুফাতো ভাইদের সাথে দেখা-সাক্ষাৎ করা থেকে বিরত থাকবে। কারণ এটা পর্দা রক্ষা ও লজ্জাস্থান হেফাযতের জন্য অতীব যরূরী।

৪. অন্যের সামনে নিজের সৌন্দর্য প্রকাশ না করা : স্ত্রীর যাবতীয় সাজসজ্জা ও শোভা-সৌন্দর্য কেবল স্বামীর জন্য হবে। অন্যের জন্য তার সৌন্দর্য প্রকাশ ও প্রদর্শন করা বৈধ নয়। আল্লাহ বলেন,وَلاَ يُبْدِيْنَ زِيْنَتَهُنَّ إِلاَّ لِبُعُوْلَتِهِنَّ، ‘আর তারা যেন তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে তাদের স্বামীর নিকটে ব্যতীত’ (নূর ২৪/৩১)।

রাসূল (ছাঃ)-কে জিজ্ঞেস করা হ’ল,أَىُّ النِّسَاءِ خَيْرٌ قَالَ الَّتِى تَسُرُّهُ إِذَا نَظَرَ. ‘কোন নারী উত্তম? তিনি উত্তরে বললেন, যে স্বামীকে আনন্দিত করে যখন সে (স্বামী) তার দিকে তাকায়’।[8] সুতরাং স্বামী ব্যতীত অন্য কারো জন্য অঙ্গসজ্জা করা ও তা প্রদর্শন করা বৈধ নয়। পক্ষান্তরে এ রূপ-লাবণ্য ও সাজসজ্জা অন্যের জন্য করা হ’লে সেটা তার অকল্যাণের কারণ হবে।

রাসূল (ছাঃ) বলেন,أَيُّمَا امْرَأَةٍ اسْتَعْطَرَتْ فَمَرَّتْ عَلَى قَوْمٍ لِيَجِدُوْا مِنْ رِيْحِهَا فَهِىَ زَانِيَةٌ- ‘যে নারী সুগন্ধি ব্যবহার করল অতঃপর লোকদের পাশ দিয়ে এ উদ্দেশ্যে অতিক্রম করল যে, তারা যেন তার সুঘ্রাণ পায়, তাহ’লে সে ব্যভিচারিণী’।[9]

আদর্শ নারীর সদা চিন্তা স্বামীর মনোতুষ্টি। কারণ তার আনন্দেই স্ত্রীর সুখ। স্বামী সুখী না হ’লে স্ত্রী নিজের সুখ কল্পনাই করতে পারে না। তাই স্বামীর প্রয়োজনের প্রতি সদা তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দেওয়া স্ত্রীর কর্তব্য। যেমন স্বামী বাইরে থেকে আসলে স্বতঃস্ফূর্তভাবে তার সামনে পানি, শরবত পেশ করা, তার প্রয়োজনীয় জিনিস এগিয়ে দেওয়া, বৈদ্যুতিক পাখা না থাকলে হাত পাখা দিয়ে বাতাস করা ইত্যাদি আদর্শ স্ত্রীর বৈশিষ্ট্য। তাছাড়া স্বামী সালাম দিয়ে যখন বাড়িতে প্রবেশ করে, তখন হাসিমুখে স্বামীর সালামের উত্তর দেওয়া উচিত।

সাধারণত স্ত্রী স্বামীর জন্য সাজসজ্জা করে ফুটন্ত গোলাপ সদৃশ হয়ে থাকবে। পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতায়, সাজসজ্জা ও বেশভূষায় স্বামীর দৃষ্টি আকর্ষণ করবে। সৌন্দর্য ও সৌরভে ভরা গোলাপের দিকে এক পলক তাকিয়ে যেমন মন-প্রাণ আকৃষ্ট হয়, স্বামীর মনও তার স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে তেমনি প্রফুল্ল হবে। স্ত্রীর মাঝে সৎগুণাবলী থাকলে এবং স্বামী-স্ত্রীর মাঝে মধুর সম্পর্ক থাকলে, কোন নারী স্বাধীনতা ও নারী মুক্তি আন্দোলনের প্রয়োজনই হবে না।

উল্লেখ্য যে, যে স্বামী তার স্ত্রীর প্রগাঢ় ভালোবাসা পায়, বিপদে সান্ত্বনা, কষ্টে সেবা-যত্ন পায়, রাগ-অনুরাগ বা অভিমান করলে যার স্ত্রী তার অভিমান ভাঙ্গাতে ব্যাকুল থাকে সেইতো সৌভাগ্যবান। পিতা-মাতার দো‘আ ও স্ত্রীর অকৃত্রিম প্রেমের বাহুবন্ধনেই তো রয়েছে স্বামীর প্রকৃত পৌরুষ। এমন স্ত্রী না হ’লে পুরুষের জীবন বৃথা।

৫. লজ্জাস্থান হেফাযত করা : স্ত্রীর অন্যতম কর্তব্য হ’ল তার লজ্জাস্থান হেফাযত করা। অর্থাৎ ব্যভিচারের পথ পরিহার করা। আল্লাহ বলেন, فَالصَّالِحَاتُ قَانِتَاتٌ حَافِظَاتٌ لِلْغَيْبِ بِمَا حَفِظَ اللهُ- ‘অতএব সতী-সাধ্বী স্ত্রীরা হয় অনুগত এবং আল্লাহ যা হেফাযত করেছেন, আড়ালেও (সেই গুপ্তাঙ্গের) হেফাযত করে’ (নিসা ৪/৩৪)।

রাসূল (ছাঃ) বলেন,خَيْرُ النِّسَاءِ تَسُرُّكَ إِذَا أَبْصَرْتَ وَتُطِيْعُكَ إِذَا أَمَرْتَ وَتَحْفَظُ غَيْبَتَكَ فِيْ نَفْسِهَا وَمَالِكَ، ‘উত্তম স্ত্রী সে যার দিকে তুমি তাকালে তোমাকে আনন্দিত করে, তুমি নির্দেশ দিলে তা পালন করে, তোমার অনুপিস্থিতিতে তার নিজেকে ও তোমার সম্পদ হেফাযত করে’।[10]

অন্যত্র রাসূল (ছাঃ) বলেন,أَلاَ أُخْبِرُكَ بِخَيْرِ مَا يَكْنِزُ الْمَرْءُ الْمَرْأَةُ الصَّالِحَةُ إِذَا نَظَرَ إِلَيْهَا سَرَّتْهُ وَإِذَا أَمَرَهَا أَطَاعَتْهُ وَإِذَا غَابَ عَنْهَا حَفِظَتْهُ، ‘আমি কি তোমাকে মানুষের সর্বোত্তম সম্পদ সম্পর্কে অবহিত করব না? তা হ’ল, নেককার স্ত্রী। সে (স্বামী) তার (স্ত্রীর) দিকে তাকালে স্ত্রী তাকে আনন্দ দেয়, তাকে কোন নির্দেশ দিলে সে তা মেনে নেয় এবং সে যখন তার থেকে অনুপস্থিত থাকে, তখন সে তার সতীত্বের হেফাযত করে’।[11]

এর সাথে নিম্নোক্ত কাজগুলি করা যরূরী। ক. স্বামীর অনুপস্থিতিতে গায়ের মাহরাম পুরুষকে বাড়ীতে প্রবেশ করতে না দেওয়া। খ. পরিবারে নারী ও পুরুষের মাঝে পর্দার ব্যবস্থা থাকা। গ. পরিচারক ও গাড়ী চালকদের থেকে সাবধান থাকা। ঘ. হিজড়াদের বাড়ীতে প্রবেশ করতে না দেওয়া। ঙ. পরপুরুষের সামনে পাতলা, মিহি কাপড় পরিহার করা। চ. টেলিফোন ও মোবাইলের ক্ষতি থেকে সাবধান থাকা। ছ. বিধর্মীদের ধর্মীয় প্রতীক ও দেব-দেবীর প্রতীক পরিহার করা। জ. সকল প্রকার প্রাণীর ছবি ও মূর্তি বাড়ীতে না রাখা। ঝ. যাবতীয় নেশাদ্রব্য থেকে বাড়ীকে মুক্ত রাখা। ঞ. কোন কুকুর বাড়ীতে না রাখা। ট. বাদ্যযন্ত্র ও অশ্লীল গান-বাজনা পরিহার করা। ঠ. বাড়ীর ভিতর-বাহির পরিচ্ছন্ন রাখা।[12]

৬. স্বামীর গৃহের কাজ করা : স্বামীর ঘর-বাড়ী পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন ও সাজিয়ে-গুছিয়ে পরিপাটি রাখা স্ত্রীর কর্তব্য। স্বামীর যথার্থ খেদমত করা, সন্তান-সন্ততিদেরকে লালন-পালন করা ও তাদেরকে পরিচ্ছন্ন রাখা, তাদের আদব-কায়েদা শিক্ষা দেওয়া এবং সভ্য করে গড়ে তোলাও স্ত্রীর দায়িত্ব। সংসারের কাজ নিজের হাতে করা উত্তম। এতে তার স্বাস্থ্য ভালো ও সুস্থ থাকবে। একান্ত প্রয়োজন না হ’লে গৃহপরিচারিকা না রাখা ভাল। মহিলা ছাহাবীগণ নিজ হাতে ক্ষেতেরও কাজ করতেন। একদা হযরত ফাতেমা (রাঃ) কাজের অতিরিক্ত চাপ ও নিজের কষ্টের কথা পিতা মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর নিকট উল্লেখ করে খাদেম চাইলে নবী করীম (ছাঃ) তাঁকে নিজ হাতে কাজ করতে নির্দেশ দিলেন এবং অলসতা কাটিয়ে উঠার প্রতিষেধকও বলে দিলেন। তিনি বলেন, ‘যখন তোমরা শয়ন করবে তখন ৩৪ বার ‘আল্লা-হু আকবার’ ৩৩ বার ‘সুবহা-নাল্লা-হ’ এবং ৩৩ বার ‘আলহামদুলিল্লা-হ’ পড়বে। এটা তোমাদের জন্য খাদেম থেকেও উত্তম হবে’।[13]

৭. স্বামীর রাগের সময় স্ত্রী বিনম্র হওয়া : কখনও কোন কারণে স্বামী রাগান্বিত হ’লে স্ত্রী নীরব থাকবে ও নম্রতা অবলম্বন করবে। যে আদর-সোহাগ করে, তার শাসন করারও অধিকার আছে। আর এ শাসন স্ত্রীকে মাথা পেতে মেনে নিতে হয়। ভুল হ’লে ক্ষমা চাইবে। স্বামী যেহেতু মর্যাদায় বড়, সেহেতু তার কাছে ক্ষমা চাওয়া অপমানের নয়; বরং এতে মান-সম্মান বৃদ্ধি পায়। তাছাড়া অহংকার ও ঔদ্ধত্যের পরিণাম কখনও ভাল হয় না। সুতরাং স্বামীর রাগের আগুনকে গর্ব-অহংকার ও ঔদ্ধত্যের ফুৎকারে প্রজ্বলিত না করে বিনয়ের পানি দিয়ে নির্বাপিত করা উচিত। নবী করীম (ছাঃ) বলেন,

وَنِسَاؤُكُمْ مِنْ أَهْلِ الْجَنَّةِ الْوَدُوْدُ الْعَؤُوْدُ عَلَى زَوْجِهَا، الَّتِيْ إِذَا غَضِبَ جَاءَتْ حَتَّى تَضَعَ يَدَهَا فِيْ يَدِهِ، ثُمَّ تَقُوْلُ: لاَ أَذُوْقُ غَمْضًا حَتَّى تَرْضَى-

‘তোমাদের স্ত্রীরাও জান্নাতী হবে; যে স্ত্রী অধিক প্রেমময়ী, সন্তানদানকারিণী, ভুল করে বার বার স্বামীর নিকট আত্মসমর্পণকারিণী, যার স্বামী রাগ করলে সে তার নিকট এসে তার হাতে হাত রেখে বলে, আপনি রাযী (ঠান্ডা) না হওয়া পর্যন্ত আমি ঘুমাব না’।[14]

স্মর্তব্য যে, স্বামী-স্ত্রীর মাঝে বিচ্ছেদ ঘটাতে শয়তান বড় তৎপর। সে সমুদ্রের উপর নিজ সিংহাসন পেতে মানুষকে বিভ্রান্ত করতে তার বাহিনী পাঠিয়ে দেয়। সবচেয়ে যে বড় ফিৎনা সৃষ্টি করতে পারে সেই হয় তার অধিক নৈকট্যপ্রাপ্ত। কে কি করেছে তার হিসাব নেয় ইবলীস। প্রত্যেকে এসে বলে, আমি এটা করেছি, আমি ওটা করেছি (চুরি, ব্যভিচার, হত্যা প্রভৃতি সংঘটন করেছি)। কিন্তু ইবলীস বলে, কিছুই করনি! অতঃপর যখন একজন বলে, আমি স্বামী-স্ত্রীর মাঝে রাগারাগি সৃষ্টি করে উভয়ের মাঝে বিচ্ছেদ ঘটিয়ে ছেড়েছি। তখন শয়তান উঠে এসে তাকে আলিঙ্গন করে বলে, হ্যাঁ, তুমিই কাজের কাজ করেছ![15] সুতরাং রাগের সময় শয়তানকে সহায়তা ও তুষ্ট করা কোন মুসলিম দম্পতির কাজ নয়।

[1]. বুখারী হা/৩২৩৭, ৫১৯৩; মুসলিম হা/১৪৩৬; মিশকাত হা/৩২৪৬।

[2]. বুখারী হা/৫১৯৪; মুসলিম হা/১৪৩৬।

[3]. বুখারী হা/৭১৩৮; মুসলিম হা/১৮২৯; মিশকাত হা/৩৬৮৫।

[4]. ইসলাম ওয়েব, ফৎওয়া নং ২৯৩৫৯।

[5]. বুখারী হা/৫৩৬৪, ৭১৮০; ইরওয়াউল গালীল হা/২১৫৮, ২১৬২, ২৬৪৬।

[6]. বুখারী, মুসলিম, আবু দাঊদ, ছহীহ আত-তারগীব হা/৯২৬-৯৩০।

[7]. বুখারী হা/৫২৩২; মুসলিম হা/২১৭২; মিশকাত হা/৩১০২।

[8]. নাসাঈ হা/৩২৩১; মিশকাত হা/৩২২৭; ছহীহাহ হা/১৮৩৮।

[9]. নাসাঈ হা/৫১২৬; ছহীহুল জামে‘ হা/২৭০১।

[10]. ত্বাবারাণী, মু‘জামুল কাবীর, ছহীহুল জামে‘ হা/৩২৯৯।

[11]. আবুদাউদ হা/১৬৬৪; মিশকাত হা/১৭৮১; ছহীহুল জামে‘ হা/১৬৪৩।

[12]. মুহাম্মাদ ছালেহ আল-মুনাজ্জিদ, আরবাঊনা নাছীহাতান লিইছলাহিল বুয়ূত (রিয়াদ : মাজমূ‘আ যাদ, ১ম প্রকাশ, ১৪৩৬হিঃ/২০১৫খৃঃ), পৃঃ ৮৯।

[13]. মুসলিম হা/২৭২৭।

[14]. বায়হাক্বী, শু‘আবুল ঈমান হা/৮৩৫৮; ছহীহাহ হা/২৮৭।

[15]. মুসলিম হা/২৮১৩; মিশকাত হা/৭১; ছহীহাহ হা/৩২৬১।

এ সম্পর্কিত আরও পোস্ট

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to top button