রহমাহ রহমত হয়ে এসেছ

সৌদি আরবের সাকাকার অধিবাসী মি আয়েদ মুহাম্মাদ শিলাগী তেমনই একজন। বছর কয়েক আগে একজন বাংলাদেশী কর্মী (হাসান) তিনি তারা কাজের জন্য নিয়ে এসেছিলেন। একসময় তার কর্মীর স্ত্রীকেও তার কাছে এনে দিয়েছেন। ইত্যোবসরে হাসানের স্ত্রী সন্তানসম্ভবা হয়েছেন, কভিড এর আক্রমণও শুরু। ফ্লাইট চলাচলের অপেক্ষা করতে করতে চলে গেল অনেক দিন। দেখতে দেখতে সন্তান জন্মদানের সময় হয়ে এলে যথারীতি হাসপাতালে ভর্তি করা হলো।
দিনটি ছিল ১৪৪১ হিজরীর আরাফার দিন, রাতের শেষ অংশ। অর্থাৎ ৩০ জুলাই ২০২০, চারদিকে সব বন্ধ। চলাচল সীমিত, কঠোর লকডাউন চলছে। বেচারা কিসে কি করবেন বুঝতে পারছিলেন না। কেউ নেই তার পাশে, নেই স্ত্রীর কোন সংগিনী। কিংকর্তব্যবিমুর।

যাই হোক হাসপাতালে ভর্তির পর সবকিছু ভালোই চলছিল, কিন্তু বাচ্চা জন্ম দিতে গিয়ে শেষ মুহুর্তে জন্মদাতা স্ত্রী মারা যান। মারা যাওয়ার পূর্বে সুস্থ্য সবল এক সুন্দর কন্যা সন্তানের জন্ম দিয়ে যান।
একে তো ভিনদেশ, তারউপর স্ত্রী মারা গেছে। এরপরে আবার রেখে গিয়েছেন এক সন্তান। এদিকে সেদিন ছিল হজ্জের দিন, সাধারণ ছুটি। এমন পরিস্থিতিতে কোন উপায়ন্তর না পেয়ে স্পন্সরকে/ কফিল ফোন দিল যাতে অফিসিয়াল কাজ গুলো অন্তত শেষ করতে পারে। ঘুম থেকে উঠে কফিল আসলেন, সবকিছু করলেন। সাথে তার কর্মীকে এও বললেন চিন্তা করিস না, এই বাচ্চা রহমত সরুপ। বাচ্চারও একটা ব্যবস্থা হবে। বাচ্চাকে নিজের কোলে নিয়ে এবং সেই কর্মীকে সাথে নিয়ে বাড়ির দিকে রওয়ানা দিলেন। বাড়িতে যাওয়ার পর তার স্ত্রীর কাছে বাচ্চা নিয়ে গেলে স্ত্রী তো অবাক। এই বাচ্চা কার? বেচারা আয়েদ সব খুলে বললেন। স্ত্রীকে বুঝিয়ে বললেন সারা দুনিয়া তো বন্ধ, আর বাংগালী বেচারা তো নিরুপায়। কোথায় যাবে, কি করবে। তুমিই মেয়েটাকে রেখে দাওনা? তার স্ত্রীও সাত মাসের সন্তানসম্ভবা। কিভাবে কি করবে ভেবে পাচ্ছিলনা। শেষ মেষ মহিলা তার কাছেই রেখে দিলেন এবং নিজের সন্তানের মতোই যত্ন করতে লাগলেন। নামও রাখলেন রাহমাহ। এদিকে তিন মাস পর নিজের বাচ্চা জন্ম দিলে তার সাথে তাকেও দুধ পান করাতে থাকলেন।

ঘটনা এইটুকু মি আয়েদ ও তার পরিবার এবং হাসানের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। বাইরের কেউ জানতোনা, এবং মি আয়েদও বাচ্চার ভবিষ্যৎ ও ব্যক্তি গোপনীয়তার চিন্তা করে কাউকে জানাননি। কিন্তু গোল বাধলো যখন হাসান নিজেই এলাকার গোত্রপতি শাইখ সালেহের নিকট এই ঘটনা বলেছে। হাসান তার কফিলের কাজের পর এক্সট্রা কাজ করতেন সেই গোত্রপতির নিকট। কাজে ভালো দেখে শাইখ সালেহ তাকে তার নিকট ট্রান্সফার হয়ে আসতে বললে হাসান বললেন তুমি যদি আমাকে এক সিন্ধুক স্বর্ণও দেও তারপরও আমি আমার কফিলের কাছ থেকে ট্রান্সফার হবোনা। শাইখ তাকে জোর করে ধরলে সে সব কিছু খুলে বলে। শাইখ পরে একদিন আয়েদকে বললেন তুমি এই ঘটনা গোপন করেছো কেন? এটা তো সম্মানের কাজ। পরে এই উপলক্ষে বিশাল এক অনুষ্ঠান করে মি আয়েদকে সম্মানিত করেন। দুনিয়ার কোনে কোনে এমন আয়েদরা এখনো বেচে আছে বলেই হয়তো এখনো মানবতা বলে কোন শব্দ টিকে আছে।

এ সম্পর্কিত আরও পোস্ট

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to top button