আয়াতুল কুরসি: আমল, ফযিলত ও তাৎপর্য

প্রশ্ন: আয়াতুল কুরসির বিভিন্ন আমল ও ফযিলতের কথা শোনা যায়। আমি আমি এ সম্পর্কে জানতে আগ্রহী। দয়া করে আমাকে সঠিক বিষয়টি জানাবেন।

উত্তর: আয়াতুল কুরসির গুরুত্ব, তাৎপর্য ও ফযিলত অনেক। এটি কুরআনুল কারীমের মর্যাদাবান শ্রেষ্ঠ আয়াত। এই মোবারক আয়াতটির আমল স্বয়ং রাসূলুল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম করেছেন, এবং উম্মতকেও আমলের নির্দেশনা দিয়েছেন যা হাদিসের গ্রন্থসমূহে বিদ্যমান রয়েছে। তাই একজন মুসলিম হিসেব আমাদের সকলের কর্তব্য হলো, হাদিসের নির্দেশনা মোতাবেক প্রতিদিন গ্রুরুত্ব সহকারে আয়াতুল কুরসি পাঠ করা।
হাদিসে আয়াতুল কুরসির যে সকল ফযিলত বর্ণিত হয়েছে তা থেকে নিম্নে কয়েকটি পেশ করা হল-

১. কুরআনের শ্রেষ্ঠ আয়াত:

عَنْ أُبَىِّ بْنِ كَعْبٍ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏”‏يَا أَبَا الْمُنْذِرِ أَتَدْرِي أَىُّ آيَةٍ مِنْ كِتَابِ اللَّهِ مَعَكَ أَعْظَمُ‏”‏.‏ قَالَ قُلْتُ اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَعْلَمُ‏.‏ قَالَ‏”‏ يَا أَبَا الْمُنْذِرِ أَتَدْرِي أَىُّ آيَةٍ مِنْ كِتَابِ اللَّهِ مَعَكَ أَعْظَمُ ‏”‏.‏ قَالَ قُلْتُ اللَّهُ لاَ إِلَهَ إِلاَّ هُوَ الْحَىُّ الْقَيُّومُ‏.‏ قَالَ فَضَرَبَ فِي صَدْرِي وَقَالَ‏”‏ وَاللَّهِ لِيَهْنِكَ الْعِلْمُ أَبَا الْمُنْذِرِ‏”‏.

উবাই বিন কা’ব (রাদি.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, হে আবূল মুনযির! তুমি জান কি তোমার কাছে যে আল্লাহর কিতাব রয়েছে এর কোন আয়াতটি সর্বাপেক্ষা মর্যাদাবান? উবাই (রাদি.) বলেন, আমি বললাম, আল্লাহ এবং তার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অধিক জ্ঞাত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (আবার) বললেন, হে আবূল মুনযির তুমি জান কি, তোমার কাছে আল্লাহর যে কিতাব রয়েছে এর কোন আয়াতটি সর্বাপেক্ষা মর্যাদাবান? উবাই (রাদি.) বলেন, আমি বললাম, اللَّهُ لاَ إِلَهَ إِلاَّ هُوَ الْحَىُّ الْقَيُّومُ (অর্থাৎ আয়াতুল কুরসী) উবাই (রাদি.) বলেন, তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার বুকে হাত মেরে বললেন, আবূল মুনযির! ইলম তোমার জন্য মুবারক হোক। (সহীহ মুসলিম, ১৭৫৮, ইফা)

২. ফেরেশতা নিযুক্তকারী আয়াত:

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ، قَالَ : وَكَّلَنِي رَسُولُ اللَّهِ ﷺ بِحِفْظِ زَكَاةِ رَمَضَانَ ، فَأَتَانِي آتٍ ، فَجَعَلَ يَحْثُو مِنَ الطَّعَامِ ، فَأَخَذْتُهُ ، وَقُلْتُ : لأَرْفَعَنَّكَ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ، قَالَ : إِنِّي مُحْتَاجٌ ، وَعَلَيَّ عِيَالٌ ، وَلِي حَاجَةٌ شَدِيدَةٌ ، فَخَلَّيْتُ عَنْهُ ، فَأَصْبَحْتُ ، فَقَالَ النَّبِيُّ ﷺ: ” يَا أَبَا هُرَيْرَةَ ، مَا فَعَلَ أَسِيرُكَ الْبَارِحَةَ ؟ ” ، قَالَ : قُلْتُ : يَا رَسُولَ اللَّهِ ، شَكَا حَاجَةً شَدِيدَةً ، وَعِيَالا ، فَرَحِمْتُهُ ، فَخَلَّيْتُ سَبِيلَهُ ، قَالَ : ” أَمَا إِنَّهُ قَدْ كَذَبَكَ ، وَسَيَعُودُ ” فَعَرَفْتُ أَنَّهُ سَيَعُودُ ، لِقَوْلِ رَسُولِ اللَّهِ ﷺ : ” إِنَّهُ سَيَعُودُ ” فَرَصَدْتُهُ ، فَجَاءَ يَحْثُو مِنَ الطَّعَامِ ، فَأَخَذْتُهُ ، فَقُلْتُ : لأَرْفَعَنَّكَ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ ﷺ ، قَالَ : دَعْنِي ، فَإِنِّي مُحْتَاجٌ ، وَعَلَيَّ عِيَالٌ ، لا أَعُودُ ، فَرَحِمْتُهُ ، فَخَلَّيْتُ سَبِيلَهُ ، فَأَصْبَحْتُ ، فَقَالَ لِي رَسُولُ اللَّهِ ﷺ: ” يَا أَبَا هُرَيْرَةَ ، مَا فَعَلَ أَسِيرُكَ ؟ ” قُلْتُ : يَا رَسُولَ اللَّهِ ، شَكَا حَاجَةً وَعِيَالا ، فَرَحِمْتُهُ ، فَخَلَّيْتُ سَبِيلَهُ ، قَالَ : ” أَمَا إِنَّهُ قَدْ كَذَبَكَ ، وَسَيَعُودُ ” فَرَصَدْتُهُ الثَّالِثَةَ ، فَجَاءَ يَحْثُو مِنَ الطَّعَامِ ، فَأَخَذْتُهُ ، فَقُلْتُ : لأَرْفَعَنَّكَ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ ﷺ ، وَهَذَا آخِرُ ثَلاثِ مَرَّاتٍ ، إِنَّكَ تَزْعُمُ لا تَعُودُ ، ثُمَّ تَعُودُ ، قَالَ : دَعْنِي أُعَلِّمْكَ كَلِمَاتٍ يَنْفَعُكَ اللَّهُ بِهَا ، قُلْتُ : مَا هُنَّ ؟ قَالَ : ” إِذَا أَوَيْتَ إِلَى فِرَاشِكَ ، فَاقْرَأْ آيَةَ الْكُرْسِيِّ اللَّهُ لا إِلَهَ إِلا هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّومُ سورة البقرة آية 255 حَتَّى تَخْتِمَ الآيَةَ ، فَإِنَّكَ لَنْ يَزَالَ عَلَيْكَ مِنَ اللَّهِ حَافِظٌ ، وَلا يَقْرَبَكَ شَيْطَانٌ حَتَّى تُصْبِحَ ، فَخَلَّيْتُ سَبِيلَهُ ، فَأَصْبَحْتُ ، فَقَالَ لِي رَسُولُ اللَّهِ ﷺ : ” مَا فَعَلَ أَسِيرُكَ الْبَارِحَةَ ؟ ” ، قُلْتُ : يَا رَسُولَ اللَّهِ ، زَعَمَ أَنَّهُ يُعَلِّمُنِي كَلِمَاتٍ يَنْفَعُنِي اللَّهُ بِهَا ، فَخَلَّيْتُ سَبِيلَهُ ، قَالَ : ” مَا هِيَ ؟ ” ، قَالَ : قَالَ لِي : إِذَا أَوَيْتَ إِلَى فِرَاشِكَ ، فَاقْرَأْ آيَةَ الْكُرْسِيِّ مِنْ أَوَّلِهَا حَتَّى تَخْتِمَ الآيَةَ اللَّهُ لا إِلَهَ إِلا هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّومُ سورة البقرة آية 255 ، وَقَالَ لِي : لَنْ يَزَالَ عَلَيْكَ مِنَ اللَّهِ حَافِظٌ ، وَلا يَقْرَبَكَ شَيْطَانٌ حَتَّى تُصْبِحَ ، وَكَانُوا أَحْرَصَ شَيْءٍ عَلَى الْخَيْرِ ، فَقَالَ ﷺ : ” أَمَا إِنَّهُ قَدْ صَدَقَكَ وَهُوَ كَذُوبٌ ، تَعْلَمُ مَنْ تُخَاطِبُ مُنْذُ ثَلاثِ لَيَالٍ يَا أَبَا هُرَيْرَةَ ؟ ” ، قَالَ : لا ، قَالَ : ” ذَاكَ شَيْطَانٌ.

আবূ হুরাইরাহ (রাদি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে রমাযানের যাকাত হিফাযত করার দায়িত্বে নিযুক্ত করলেন। এক ব্যক্তি এসে আঞ্জলা ভর্তি করে খাদ্য সামগ্রী নিতে লাগল। আমি তাকে পাকড়াও করলাম এবং বললাম, আল্লাহর কসম! আমি তোমাকে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে উপস্থিত করব। সে বলল, আমাকে ছেড়ে দিন। আমি খুব অভাবগ্রস্ত, আমার যিম্মায় পরিবারের দায়িত্ব রয়েছে এবং আমার প্রয়োজন তীব্র। তিনি বললেন, আমি ছেড়ে দিলাম। যখন সকাল হলো, তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, হে আবূ হুরাইরা, তোমার রাতের বন্দী কি করলে? আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! সে তার তীব্র অভাব ও পরিবার, পরিজনের কথা বলায় তার প্রতি আমার দয়া হয়, তাই তাকে আমি ছেড়ে দিয়েছি। তিনি বললেন, সাবধান! সে তোমার কাছে মিথ্যা বলেছে এবং সে আবার আসবে। ‘সে আবার আসবে’ আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর এ উক্তির কারণে আমি বুঝতে পারলাম যে, সে পুনরায় আসবে। কাজেই আমি তার অপেক্ষায় থাকলাম। সে এল এবং অঞ্জলি ভরে খাদ্র সামগ্রী নিতে লাগল। আমি ধরে ফেললাম এবং বললাম, আমি তোমাকে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে নিয়ে যাব। সে বলল, আমাকে ছেড়ে দিন। কেননা, আমি খুবই দরিদ্র এবং আমার উপর পরিবার-পরিজনের দায়িত্ব ন্যস্ত, আমি আর আসব না। তার প্রতি আমার দয়া হল এবং আমি তাকে ছেড়ে দিলাম।

সকাল হলে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, হে আবূ হুরাইরাহ! তোমার বন্দী কী করল? আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! সে তার তীব্র প্রয়োজন এবং পরিবার-পরিজনের কথা বলায় তার প্রতি আমার দয়া হয়। তাই আমি তাকে ছেড়ে দিয়েছি। তিনি বললেন, খবরদার সে তোমার কাছে মিথ্যা বলেছে এবং সে আবার আসবে। তাই আমি তৃতীয়বার তার অপেক্ষায় রইলাম। সে আবার আসল এবং অঞ্জলি ভর্তি করে খাদ্য সামগ্রী নিতে লাগল। আমি তাকে পাকড়াও করলাম এবং বললাম, আমি তোমাকে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে অবশ্যই নিয়ে যাব। এ হলো তিনবারের শেষবার। তুমি প্রত্যেকবার বল যে, আর আসবে না, কিন্তু আবার আস। সে বলল, আমাকে ছেড়ে দাও। আমি তোমাকে কয়েকটি কথা শিখিয়ে দেব। যা দিয়ে আল্লাহ তোমাকে উপকৃত করবেন। আমি বললাম, সেটা কী? সে বলল, যখন তুমি রাতে শয্যায় যাবে তখন আয়াতুল কুরসী (اللهُ لاَ إِلٰهَ إِلاَّ هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّومُ) আয়াতের শেষ পর্যন্ত পড়বে। তখন আল্লাহর তরফ হতে তোমার জন্যে একজন রক্ষক নিযুক্ত হবে এবং ভোর পর্যন্ত শয়তান তোমার কাছে আসতে পারবে না। কাজেই তাকে আমি ছেড়ে দিলাম। ভোর হলে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, গত রাতের তোমার বন্দী কী করল? আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! সে আমাকে বলল যে, সে আমাকে কয়েকটি বাক্য শিক্ষা দেবে যা দিয়ে আল্লাহ আমাকে লাভবান করবেন। তাই আমি তাকে ছেড়ে দিয়েছি। তিনি আমাকে বললেন, এই বাক্যগুলো কী? আমি বললাম, সে আমাকে বলল, যখন তুমি তোমার বিছানায় শুতে যাবে তখন আয়াতুল কুরসী( اللهُ لاَ إِلٰهَ إِلاَّ هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّومُ ) প্রথম হতে আয়াতের শেষ পর্যন্ত পড়বে এবং সে আমাকে বলল, এতে আল্লাহর তরফ হতে তোমার জন্য একজন রক্ষক নিযুক্ত থাকবেন এবং ভোর পর্যন্ত তোমার নিকট কোন শয়তান আসতে পারবে না। সাহাবায়ে কিরাম কল্যাণের জন্য বিশেষ লালায়িত ছিলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ, এ কথাটি তো সে তোমাকে সত্য বলেছে। কিন্তু হুশিয়ার, সে মিথ্যুক। হে আবূ হুরাইরাহ! তুমি কি জান, তিন রাত ধরে তুমি কার সাথে কথাবার্তা বলেছিলে। আবূ হুরাইরাহ (রাদি.) বললেন, না। তিনি বললেন, সে ছিল শয়তান। (সহীহ বুখারী, হাদীস: ২৩১১ – ২৩১২, ইফা: ২১৬২)

৩. শয়তানের প্রভাব থেকে বেঁচে থাকার আয়াত:

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ أُبَيِّ بْنِ كَعْبٍ أَنَّ أَبَاهُ أَخْبَرَهُ ، أَنَّهُ كَانَ لَهُمْ جَرِينٌ فِيهِ تَمْرٌ ، وَكَانَ مِمَّا يَتَعَاهَدُهُ فَيَجِدُهُ يَنْقُصُ ، فَحَرَسَهُ ذَاتَ لَيْلَةٍ ، فَإِذَا هُوَ بِدَابَّةٍ كَهَيْئَةِ الْغُلامِ الْمُحْتَلِمِ . قَالَ : فَسَلَّمْتُ فَرَدَّ السَّلامَ ، فَقُلْتُ : مَا أَنْتَ ، جِنٌّ أَمْ إِنْسٌ ؟ فَقَالَ : جِنٌّ ، فَقُلْتُ : نَاوِلْنِي يَدَكَ ، فَإِذَا يَدُ كَلْبٍ وَشَعْرُ كَلْبٍ ، فَقُلْتُ : هَكَذَا خُلِقَ الْجِنُّ ، فَقَالَ : لَقَدْ عَلِمَتِ الْجِنُّ أَنَّهُ مَا فِيهِمْ مَنْ هُوَ أَشَدُّ مِنِّي ، فَقُلْتُ : مَا يَحْمِلُكَ عَلَى مَا صَنَعْتَ ؟ قَالَ : بَلَغَنِي أَنَّكَ رَجُلٌ تُحِبُّ الصَّدَقَةَ ، فَأَحْبَبْتُ أَنْ أُصِيبَ مِنْ طَعَامِكَ ، قُلْتُ : فَمَا الَّذِي يَحْرِزُنَا مِنْكُمْ ؟ فَقَالَ : هَذِهِ الآيَةُ ، آيَةُ الْكُرْسِيِّ ، قَالَ : فَتَرَكْتُهُ . وَغَدَا أَبِي إِلَى رَسُولِ اللَّهِ ﷺ، فَأَخْبَرَهُ ، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : ” صَدَقَ الْخَبِيثُ

উবাই বিন কা’ব (রাদি.) থেকে বর্ণিত, তাঁর এক খেজুর রাখার থলি ছিল। সেটায় ক্রমশ তার খেজুর কমতে থাকত। একরাতে সে পাহারা দেয়। হঠাৎ যুবকের মত এক জন্তু দেখা গেলে, তিনি তাকে সালাম দেন। সে সালামের উত্তর দেয় । তিনি বলেন, তুমি কি? জিন না মানুষ? সে বলে, জিন। উবাই রাযি. তার হাত দেখতে চান। সে তার হাত দেয়। তার হাত ছিল কুকুরের হাতের মত আর চুল ছিল কুকুরের চুলের মত। তিনি বলেন, এটা জিনের সুরত। সে (জন্তু) বলে, জিন সম্প্রদায়ের মধ্যে আমি সবচেয়ে সাহসী। তিনি বলেন, তোমার আসার কারণ কি? সে বলে, আমরা শুনেছি আপনি সাদকা পছন্দ করেন, তাই কিছু সাদকার খাদ্যসামগ্রী নিতে এসেছি। সাহাবী বলেন, তোমাদের থেকে পরিত্রাণের উপায় কি? সে বলে, সূরা বাকারার এই আয়াতটি (আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লাহ হুআল হাইয়্যূল কাইয়্যূম), যে ব্যক্তি সন্ধ্যায় এটি পড়বে, সকাল পর্যন্ত আমাদের থেকে পরিত্রাণ পাবে। আর যে ব্যক্তি সকালে এটি পড়বে, সন্ধ্যা পর্যন্ত আমাদের থেকে নিরাপদে থাকবে। সকাল হলে তিনি রাসূলুল্লাহ ﷺ-এরকাছে আসেন এবং ঘটনার খবর দেন। রাসূলুল্লাহ্ ﷺ বলেন, খবীস সত্য বলেছে। (সহীহ ইবন হিব্বান, হাদিস: ৭৮১, সুনান তিরমিযী, আবূ আউয়ূব আনছারী (রাদি.) থেকে বর্ণিত, হাদিস: ২৮৮০)

৪. পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের পর আয়াতুল কুরসি পাঠ:

مَنْ قَرَأَ آيَةَ الْكُرْسِيِّ فِي دُبُرِ كُلِّ صَلَاةٍ مَكْتُوبَةٍ لَمْ يَمْنَعْهُ مِنْ دُخُولِ الْجَنَّةِ إِلَّا أَنْ يَمُوتَ

আবু উমামা (রাদি.) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল (সা.) বলেছেন ‘প্রতি ফরজ নামাজের পর যে ব্যক্তি আয়াতুল কুরসি পড়বে তার জান্নাতে যাওয়ার পথে মৃত্যু ছাড়া আর কোনো বাধা থাকবে না।’ (আমালুল ইয়াওমি ওয়াল লাইলাহ, নাসায়ি, হাদিস : ১০০)।
এই হাদিস শরিফ থেকে প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পড়ার নির্দেশনা পাওয়া গেল।

৫. সকাল-সন্ধ্যায় আয়াতুল কুরসি:

উবাই ইবনে কা’ব (রাদি.) থেকে বর্ণিত, তার একটি খেজুর শুকানোর জায়গা ছিল। তাতে খেজুর হ্রাস পেত। এক রাতে তিনি পাহারায় রইলেন। হঠাৎ তিনি কিশোরের মতো এক প্রাণী দেখতে পেলেন। সে তাকে সালাম দিল। তিনি সালামের জবাব দিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কোন জাতির? জিন না মানব? সে বলল, জিন। তিনি বললেন, তোমার হাত দাও তো দেখি। সে হাত বাড়িয়ে দিল। দেখা গেল, তার হাত ও পশম কুকুরের হাত ও পশমের মতো। সে বলল, এটা জিনের গঠন। সে আরও বলল, জিনরা জানে, তাদের মধ্যে আমার চেয়ে শক্তিশালী আর কোনো পুরুষ নেই। তিনি বললেন, কী উদ্দেশ্যে এসেছ? সে বলল, আমি জানতে পেরেছি, আপনি সদকা করতে পছন্দ করেন। তাই আপনার খাদ্যবস্তু (খেজুর) থেকে নিতে এসেছি। তিনি বললেন, তোমাদের (অনিষ্ট) থেকে আত্মরক্ষার উপায় কী? সে বলল, সুরা বাকারার এই (আয়াতুল কুরসি) আয়াতটি। যে তা সন্ধ্যায় পাঠ করবে সে সকাল পর্যন্ত আমাদের (অনিষ্ট) থেকে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকবে। আর যে সকালে পড়বে সন্ধ্যা পর্যন্ত আমাদের (অনিষ্ট) থেকে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকবে। সকালে তিনি রাসূল (সা.) এর কাছে এসে বিষয়টি জানালেন। নবী রাসূল (সা.) বললেন, খবিস সত্য বলেছে। (সহঈহ ইবনে হিব্বান, হাদিস: ৭৮৪, মুসতাদরাকে হাকেম, হাদিস: ২০৬৪)।

এই দুটি ঘটনায় রাসূল (সা.) এর সমর্থনসূচক উক্তির মাধ্যমে স্পষ্টতই প্রমাণিত হয়েছে যে, দুর্বৃত্ত শয়তানের অনিষ্ট থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য এই আয়াতের আমল কত ফলপ্রসূ।

৬. শয়নকালে আয়াতুল কুরসি পাঠ:

এ প্রসঙ্গে সহীহ বুখারীতে একটি ঘটনা বর্ণিত আছে। ঘটনাটি খুবই আশ্চর্যজনক! আবু হুরায়রা (রাদি.) বলেন, আল্লাহর রাসূল (সা.) আমাকে রমযানে যাকাত (সাদাকাতুল ফিতরের খেজুর) দেখাশোনার দায়িত্ব দিয়েছিলেন। (রাতে) এক আগন্তুক এসে সেই (স্তূপিকৃত) খাদ্যবস্তু (খেজুর) থেকে মুঠিভরে নিতে লাগল। আমি তাকে ধরে ফেললাম এবং বললাম, তোমাকে আল্লাহর রাসূল (সা.) এর কাছে হাজির করব। সে বলল, দেখুন, আমি এক অভাবী, প্রয়োজনগ্রস্ত ও পরিবারের ভারগ্রস্ত লোক! আমি তাকে ছেড়ে দিলাম। সকালে নবী রাসূল (সা.) বললেন, আবু হুরায়রা! তোমার গত রাতের বন্দির কী হাল? আমি বললাম, ইয়া রাসুল্লাল্লাহ! সে তার অভাব-অনটন ও পরিবারের ভারগ্রস্ততার কথা বলায় আমার দয়া জেগেছে। তাই তাকে ছেড়ে দিয়েছি! নবী রাসূল (সা.) বললেন দেখ, সে তোমাকে মিথ্যা বলেছে; সে আবারও আসবে। ফলে আমার জানা হয়ে গেল, রাসূল (সা.) যখন বলেছেন আসবে, অবশ্যই সে আসবে। আমি তার অপেক্ষায় প্রস্তুত হয়ে রইলাম। এরই মধ্যে সে এসে সেই স্তূপিকৃত খাদ্যবস্তু থেকে মুঠি ভরে নিতে লাগল। আমি তাকে ধরে বললাম, তোমাকে আল্লাহর রাসূল (সা.) এর কাছে হাজির করবই। সে তখন বলতে লাগল, আমাকে ছেড়ে দিন। আমি তো অভাবী লোক, পরিবারের ভারগ্রস্ত, আর আসব না। তার এ কথায় আমার দয়া হলো, ছেড়ে দিলাম। সকালে রাসূল (সা.) বললেন, তোমার বন্দির কী খবর? আমি বললাম, ইয়া রাসুল্লাল্লাহ! সে তার প্রচ- অভাবগ্রস্ততা ও পরিবারের ভারগ্রস্ততার কথা বলছিল, তাই আমার দয়া হয়েছে, তাকে ছেড়ে দিয়েছি।

তিনি বললেন, দেখ, সে তোমাকে মিথ্যা বলেছে। সে আবারও আসবে। তাঁর এ কথায় তৃতীয় রাতেও আমি অপেক্ষায় রইলাম। এক পর্যায়ে সে এসে মুঠিভরে খাদ্য নিতে লাগল। আমি তাকে ধরে ফেলি এবং বলি, এবার তোমাকে রাসূল (সা.) এর কাছে হাজির করেই ছাড়ব। এ নিয়ে তিনবার ঘটল যে, তুমি বল, আসবে না; কিন্তু আবারও আস। সে তখন বলল, আমাকে ছেড়ে দিন। আপনাকে এমন কিছু কথা শিখিয়ে দেব, যার দ্বারা আল্লাহ আপনাকে উপকৃত করবেন। বললাম, কী সেই কথা? সে বলল, যখন বিছানায় যাবেন, তখন আয়াতুল কুরসি পড়বেনÑ শেষ পর্যন্ত। তাহলে আল্লাহর পক্ষ থেকে সকাল পর্যন্ত আপনার জন্য একজন রক্ষাকর্তা নিযুক্ত থাকবেন এবং সকাল পর্যন্ত শয়তান আপনার কাছে ভিড়বে না। আমি তাকে ছেড়ে দিলাম। সকালে রাসূল (সা.) আমাকে বললেন, গত রাতে তোমার বন্দি কী করল? বললাম, ইয়া রাসুল্লাল্লাহ! সে বলল যে, আমাকে এমন কিছু কথা শিখিয়ে দেবে, যার দ্বারা আল্লাহ আমাকে উপকৃত করবেন। তাই তাকে ছেড়ে দিয়েছি। জিজ্ঞাসা করলেন, সে কথাগুলো কী? বললাম, সে বলেছে, যখন তুমি বিছানায় যাবে, তখন আয়াতুল কুরসি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পাঠ করবে। সে বলল, আল্লাহর পক্ষ থেকে সকাল পর্যন্ত তোমার জন্য এক রক্ষাকর্তা নিযুক্ত থাকবেন আর (সকাল পর্যন্ত) কোনো শয়তান তোমার কাছে ভিড়বে না। সাহাবিরা তো কল্যাণের ব্যাপারে খুবই লালায়িত ছিলেন। নবী রাসূল (সা.) বললেনÑ শোন, সে তোমাকে সত্যই বলেছে, যদিও সে ডাহা মিথ্যুক। এরপর বললেন, আবু হুরায়রা! তুমি কি জান পরপর তিনরাত কার সঙ্গে কথা বলেছ? তিনি বললেন, না। আল্লাহর রাসূল (সা.) বললেন, সে ছিল এক শয়তান। (বুখারী, হাদিস: ৩২৭৫/২৩১১)।

উত্তর প্রদানে:
মুফতি যাকারিয়্যা মাহমূদ মাদানী
পরিচালক, ভয়েস অব ইসলাম ও
ইসলামিক গাইডেন্স।

এ সম্পর্কিত আরও পোস্ট

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to top button