শিশুসন্তানের মৃত্যুতে ধৈর্যধারণকারী পিতা-মাতার পুরস্কার জান্নাত
সুখময় দাম্পত্যজীবনে পূর্ণতা আনে সন্তান-সন্ততি। সন্তান ছাড়া দাম্পত্যজীবন শুধুই শূন্যতা ও হতাশা। এই সন্তান আল্লাহ তাআলার কত বড় নিয়ামত, তা শুধু নিঃসন্তান স্বামী-স্ত্রীই উপলব্ধি করতে পারে। মায়ের দীর্ঘ ১০ মাসের মধুর কষ্ট আর বাবার স্বপ্নময় প্রতীক্ষার অবসান ঘটে সন্তান ভূমিষ্ঠের মাধ্যমে।
ঘর আলোকিত করা সেই নতুন আনন্দের অনুভূতিটাই অন্য রকম। কিন্তু আল্লাহর দেওয়া পরম আদরের সন্তান যখন অল্প সময়ে আবার আল্লাহর কাছে চলে যায়, তখন মা-বাবার জন্য এই শোক সহ্য করা একটু কঠিনই বটে। তবে শোকাতুর মুমিন মা-বাবার জন্য আল্লাহ তাআলা বিশেষ সৌভাগ্যের ঘোষণা দিয়ে রেখেছেন, যা আল্লাহর পক্ষ থেকে তাদের জন্য অনেক বড় সান্ত্বনা।
আবু হাসসান (রহ.) বলেন, আমি আবু হুরায়রা (রা.)-কে বললাম, ‘আমার দুটি সন্তান মারা গেছে। আপনি কি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর থেকে এমন একটি হাদিস বর্ণনা করবেন, যাতে আমরা অন্তরে সান্ত্বনা পেতে পারি?’ তখন আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, হ্যাঁ, আমি নবীজি (সা.)-কে বলতে শুনেছি, ‘ছোট বয়সে মৃত্যুবরণকারী সন্তানরা জান্নাতের প্রজাপতির মতো। তাদের কেউ যখন পিতা কিংবা মাতা-পিতা উভয়ের সঙ্গে মিলিত হবে, তখন তার পরিধানের কাপড় কিংবা হাত ধরবে, যেভাবে এখন আমি তোমার কাপড়ের আঁচল ধরেছি। এরপর সেই কাপড় কিংবা হাত আর ছাড়বে না যতক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহ তাআলা তাকে তার মা-বাবাসহ জান্নাতে প্রবেশ না করাবেন।’ (মুসলিম, হাদিস: ৬৩৭০)
অন্য একটি হাদিসে রয়েছে, মৃত্যুবরণকারী শিশুসন্তান মা-বাবার জন্য জান্নাতের দরজা খুলে দাঁড়িয়ে থাকবে।
أَخْبَرَنَا هَارُونُ بْنُ زَيْدٍ، – وَهُوَ ابْنُ أَبِي الزَّرْقَاءِ – قَالَ حَدَّثَنَا أَبِي قَالَ، حَدَّثَنَا خَالِدُ بْنُ مَيْسَرَةَ، قَالَ سَمِعْتُ مُعَاوِيَةَ بْنَ قُرَّةَ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ كَانَ نَبِيُّ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم إِذَا جَلَسَ يَجْلِسُ إِلَيْهِ نَفَرٌ مِنْ أَصْحَابِهِ وَفِيهِمْ رَجُلٌ لَهُ ابْنٌ صَغِيرٌ يَأْتِيهِ مِنْ خَلْفِ ظَهْرِهِ فَيُقْعِدُهُ بَيْنَ يَدَيْهِ فَهَلَكَ فَامْتَنَعَ الرَّجُلُ أَنْ يَحْضُرَ الْحَلْقَةَ لِذِكْرِ ابْنِهِ فَحَزِنَ عَلَيْهِ فَفَقَدَهُ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ ” مَا لِي لاَ أَرَى فُلاَنًا ” . قَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ بُنَيَّهُ الَّذِي رَأَيْتَهُ هَلَكَ . فَلَقِيَهُ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم فَسَأَلَهُ عَنْ بُنَيِّهِ فَأَخْبَرَهُ أَنَّهُ هَلَكَ فَعَزَّاهُ عَلَيْهِ ثُمَّ قَالَ ” يَا فُلاَنُ أَيُّمَا كَانَ أَحَبُّ إِلَيْكَ أَنْ تَمَتَّعَ بِهِ عُمْرَكَ أَوْ لاَ تَأْتِي غَدًا إِلَى بَابٍ مِنْ أَبْوَابِ الْجَنَّةِ إِلاَّ وَجَدْتَهُ قَدْ سَبَقَكَ إِلَيْهِ يَفْتَحُهُ لَكَ ” . قَالَ يَا نَبِيَّ اللَّهِ بَلْ يَسْبِقُنِي إِلَى بَابِ الْجَنَّةِ فَيَفْتَحُهَا لِي لَهُوَ أَحَبُّ إِلَىَّ . قَالَ ” فَذَاكَ لَكَ ”
হারুন ইবনু যায়দ অর্থাৎ আবূ যারকা মুআবিয়ার পিতা কুররা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন বসতেন তখন সাহাবীদের অনেকে তার কাছে এসে বসতেন। তাদের মধ্যে এক জনের অল্প বয়স্ক একটি ছেলে ছিল। তিনি তার ছেলেটিকে পেছনের দিক থেকে নিজের সামনে এনে বসাতেন। অতঃপর ছেলেটি মৃত্যুবরণ করল। তিনি বিষণ্ণ হয়ে পড়লেন। তার ছেলের কথা মনে করে তিনি মজলিসে উপস্থিত হতে পারতেন না। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে না দেখে জিজ্ঞাসা করলেন যে, আমি অমুক ব্যক্তিকে কেন দেখছি না? সাহাবীগণ বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনি তার ছোট ছেলেটিকে দেখেছিলেন সে মৃত্যূবরণ করেছে।
পরে তার সাথে সাক্ষাৎ করে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞাসা করলেনঃ তোমার ছোট ছেলেটির কি হয়েছে? সে ব্যক্তি বললো, ছেলেটির মৃত্যূ হয়েছে। তখন তিনি তাকে সান্তনা দিয়ে ধৈর্যধারণ করতে বললেন। তারপর তিনি বললেন যে, হে অমুক! তোমার কাছে কোনটি পছন্দনীয়- তার দ্বারা তোমার পার্থিব জীবন সুখময় করা না কাল কিয়ামতে জান্নাতের যে দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে তাকে তথায়ই পাওয়া, তোমার সেখানে পৌছে তোমার জন্য দরজা খুলে দেওয়া? সে বললো, হে আল্লাহর রাসুল বরং সে আমার জান্নাতের দরজায় গিয়ে আমার জন্য দরজা খুলে দেবে এটাই আমার কাছে অধিক পছন্দনীয়। তিনি বললেন, তাহলে তা-ই তোমার জন্য হবে। (সুনান আন-নাসায়ী, হাদিস: ২০৯০)
حَدَّثَنَا يَعْقُوبُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ، حَدَّثَنَا ابْنُ عُلَيَّةَ، حَدَّثَنَا عَبْدُ الْعَزِيزِ بْنُ صُهَيْبٍ، عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ ـ رضى الله عنه ـ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم “ مَا مِنَ النَّاسِ مُسْلِمٌ يَمُوتُ لَهُ ثَلاَثَةٌ مِنَ الْوَلَدِ لَمْ يَبْلُغُوا الْحِنْثَ إِلاَّ أَدْخَلَهُ اللَّهُ الْجَنَّةَ بِفَضْلِ رَحْمَتِهِ إِيَّاهُمْ ”.
ইয়াকুব ইবনু ইবরাহীম (রহঃ)… আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে কোন মুসলিম ব্যাক্তির এমন তিনটি (সন্তান) মারা যাবে, যারা বালিগ হয়নি, আল্লাহ পাক তাদের প্রতি তাঁর রহমতের ফযলে সে ব্যাক্তিকে (মা-বাপকে) জান্নাতে দাখিল করাবেন। (বুখারি, হাদিস: ১৩৮১)
قَالَ أَبُو هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَنْ مَاتَ لَهُ ثَلاَثَةٌ مِنَ الْوَلَدِ لَمْ يَبْلُغُوا الْحِنْثَ كَانَ لَهُ حِجَابًا مِنَ النَّارِ، أَوْ دَخَلَ الْجَنَّةَ
আবূ হুরায়রা (রাঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, যে ব্যক্তির এমন তিনটি সন্তান মারা যায় যারা বালিগ হয়নি, তারা (মাতাপিতার জন্য) জাহান্নাম থেকে আবরণ হয়ে যাবে। অথবা (তিনি বলেছেন) সে ব্যক্তি জান্নাতে দাখিল হবে।
আল্লাহ সন্তানহারা মা-বাবাদের ধৈর্য ধারণ করার মাধ্যমে জান্নাতের বিশেষ পুরস্কারের অধিকারী হওয়ার তাওফিক দান করুন।