ইসলামী আক্বীদার বৈশিষ্ট্য
ইসলামী আক্বীদার গুরুত্বপূর্ণ কিছু বৈশিষ্ট্য হচ্ছে নিম্নরূপ:
১. এ আক্বীদা বিশুদ্ধ উৎস থেকে গৃহীত:
আল কুরআন, সহীহ সুন্নাহ এবং এ দুয়ের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ সালাফে সালেহীনের ইজমা-এর উপর ইসলামী আক্বীদার ভিত্তি স্থাপিত। এ তিনটির প্রত্যেকটিই হচ্ছে ইসলামী শরীয়তের অকাট্য প্রামান্য দলীল। তাই এর বাইরে অন্যান্য মতবাদ ও ফিরকার দর্শন, কাশফ, ইলহাম, কারামত ও স্বপ্ন ইত্যাদি ইসলামী আক্বীদার উৎস নয়।
২. আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দেয়া তথ্যের প্রতি পরিপূর্ণ-স্বীকৃতি জ্ঞাপন এ আক্বীদার অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
৩ সহীহ ইসলামী আক্বীদা মানুষের সুস্থ বিবেক এবং তার প্রকৃতি, ফিতরাত ও স্বভাবের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। এদিক ইঙ্গিত করেই ইমাম ইবনে তাইমিয়া বলেন–
(العقل السليم لا يعارض النقل الصحيح)
অর্থাৎ কুপ্রবৃত্তি, সংশয় ও প্ররোচনা মুক্ত সুস্থ বিবেক ক্রটিমুক্ত, বিশুদ্ধ ও অহি-নির্ভর দলীলের বিরোধী হয় না।
৪. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর সাহাবীবৃন্দ এবং তাদের অনুসারী ইমামগণ ও পরবর্তীকালের সকল মুসলিমদের কাছে এ আক্বীদার স্বরূপ একই ছিল। সুতরাং কুরআন-সুন্নায় যার সম্পর্কে কোনো তথ্য নেই কিংবা সালাফে সালেহীন যে বিষয়ে কোনো বক্তব্য রাখেননি আক্বীদায় এমন কোনো মৌলিক বিষয় নেই।
৫. ইসলামী আক্বীদার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এটি অত্যন্ত সুস্পষ্ট, বোধগম্য ও জটিলতামুক্ত, যা বুঝা আলেম কিংবা সাধারণ শ্রেণীর মানুষ কারো পক্ষেই কষ্টকর নয়।
এ সম্পর্কে আল্লাহ্ তাআলা বলেন,
“যদি আসমান ও যমীনে আল্লাহ ছাড়া বহু ইলাহ থাকত তবে উভয়ই ধ্বংস হয়ে যেত। সুতরাং তারা যা বলে, আরশের রব আল্লাহ তা থেকে পবিত্র ও মহান”। (সূরা আল-আম্বিয়া-২২)
৬. এ আক্বীদা অসামঞ্জস্যতা ও পরস্পর বিরোধিতা থেকে মুক্ত।
এদিকে ইঙ্গিত করে আল্লাহ্ বলেন,
“তারা কি কুরআন নিয়ে গবেষণা করে না? আর যদি তা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো পক্ষ থেকে হত, তবে অবশ্যই তারা এতে অনেক বৈপরীত্য দেখতে পেত”। (সূরা আন-নিসা-৮২)
পক্ষান্তরে বাতিল আক্বীদাসমূহে অসামঞ্জস্যতা খুব সহজেই চোখে পড়ে। কেননা এগুলোর মধ্যে রয়েছে পরস্পর বিরোধিতা ও নানা বৈপরীত্য।
৭. এ আক্বীদা পৃথিবীর সকল সময়ে, স্থানে ও অবস্থায় সকল জাতির উপযোগী। ফলে যে কোনো দিক থেকেই এ আক্বীদা বৈষম্যের কালিমা থেকে মুক্ত।
৮. এ আক্বীদা চিরন্তন ও স্থায়ী। কেননা আল্লাহর নাযিলকৃত কুরআন ও শরীয়াহ চিরন্তন ও স্থায়ী। আল্লাহ বলেন,
“নিশ্চয়ই আমি কুরআন নাযিল করেছি, আর আমিই তার হেফাযতকারী”। (সূরা আল-হিজর-৯)
৯. ইসলামী আক্বীদার অন্যতম আরেকটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এটি মুসলিমদের মধ্যে পারস্পরিক সম্প্রীতি বৃদ্ধির মাধ্যমে তাদেরকে ঐক্যবদ্ধ ও সংঘবদ্ধ করে। আক্বীদার সুদৃঢ় বন্দন টুটে গিয়ে বহুবিধ বিভ্রান্ত আক্বীদার অনুসারী হওয়ার কারণেই আজ মুসলিম বিশ্বে চরম অনৈক্য, বিভেদ ও হতাশা বিরাজ করছে।
১০. দুনিয়া ও আখিরাতের যে কোনো কল্যাণকর জ্ঞান ও বিদ্যার সাথে এ আক্বীদার কোনো বিরোধ ও দ্বন্দ্ব নেই।
১১. এ আক্বীদা হৃদয়, আত্মা ও দেহের সকল প্রয়োজন পূরণের ক্ষেত্রে একটা চমৎকার সমতা রক্ষা করেছে। এমনটি ঘটেনি যে, শুধু একদিকের দাবী পূরণ করতে গিয়ে জীবনের অন্য সকল দিককে উপেক্ষা করা হয়েছে।
১২. সহীহ ইসলামী আক্বীদা সুস্থ বিবেক ও আকলকে স্বীকৃতি প্রদান করে, এর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে এবং তা যাতে কোনক্রমেই অক্ষম ও অকার্যকর হয়ে না পড়ে সেদিকে লক্ষ্য রাখে।
১৩. বিবেকের কাছে অসম্ভব এমণ কোনো কিছু ইসলামী আক্বীদায় নেই।
১৪. বিশুদ্ধ ইসলামী আক্বীদা পোষণের মধ্য মধ্য দিয়েই মুসলিমদের সম্মান, গৌরব ও মর্যাদা অর্জিত হয়।
১৫. ইসলামী আক্বীদা একটি শক্তিশালী মুসলিম ঊম্মাহ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে ব্যাপক ভূমিকা রাখে।
লেখক: মুফতি যাকারিয়্যা মাহমূদ মাদানী
বি. এ অনার্স, এম. এ, এমফিল: মদীনা বিশ্ববিদ্যালয়, সৌদি আরব
পরিচালক: ভয়েস অব ইসলাম
প্রিন্সিপাল মাদরাসাতুল মাদীনাহ লিল বানাত, মিরপুর-১, ঢাকা
প্রধান গবেষক: আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশন
সম্পাদক ও প্রকাশক: ডেইলি মাই নিউজ।