মুমিনের বিশ্বাসের ভীত কখন সুদৃঢ় হয়?

বিশ্বাসের ভীত যখন নড়বড়ে হয় তখন সামান্য আঘাতেই তা কেঁপে ওঠে। একে অপর থেকে দূরে সরে যায়। আস্থার দৃঢ়তা যখন হারিয়ে যায় তখন সম্পর্কগুলোও আর টেকসই হয়না। দুদোল্যমান টালমাটাল হয়ে যায়। আর যখন বিশ্বাস ও আস্থার ভীতগুলো হয় মজবুত তখন পাহাড়সম আঘাত এলেও তা কিঞ্চিতও টলে না। বরং আরও শক্ত ও সুদৃঢ় হয়। একজন শক্তিশালী ও কমজোর মুমিনের মধ্যকার পার্থক্যটা মূলত এরকমই।

একজন মুমিন ও তাঁর রবের মধ্যকার সম্পর্কের ভীত হচ্ছে তাঁর তাওহীদের বিশ্বাস। বিশ্বাসের এই ভীত যত মজবুত হবে মুমিনের ঈমান তত সুদৃঢ়, অটল ও অবিচল হবে। একজন মুমিন যদি তাঁর চেতনায়, অন্তগহীনে এক আল্লাহ্‌র বিশ্বাস গভীর প্রত্যয় ও সত্যতার সাথে দৃঢ়মূল করে নিতে পারে তবে সে লক্ষ প্রতিকূলতাঁর মাঝেও পথহারা হবেনা। সামান্য শঙ্কা ও আঘাতে নড়ে ওঠবে না। হেলে যাবে না গভীর বিশ্বাসে প্রোথিত তাঁর ঈমানের ভীত।

আল্লাহ্‌র প্রতি আস্থায় অবিচল, বিশ্বাসের ভীতে অনড় ও অটল এই বিশ্বাসী মুমিনদের সম্পর্কে পবিত্র কুরআন বলছে:

– তাদের কাছে ফেরেশতা অবতীর্ণ হয়।
– তাদের কোন ভয় ও চিন্তা নেই।
– তাদের জন্য রয়েছে প্রতিশ্রুত জান্নাতের সুসংবাদ।
– তারা সুপথ প্রাপ্ত।
– তারাই যথার্থ সফলকাম।
– আল্লাহ্‌র কাছে তাদের নেক আমল রয়েছে।
– তারা কখনো দুঃখিত হবে না।

~ আর যারা অবিশ্বাসী তাদের ব্যাপারে কুরআন বলছে যে, তারা জাহান্নামী।

♦ পড়ুন কুরআনের সেই বাণীগুলো।

إِنَّ ٱلَّذِينَ قَالُوا رَبُّنَا ٱللَّهُ ثُمَّ ٱسْتَقَٰمُوا تَتَنَزَّلُ عَلَيْهِمُ ٱلْمَلَٰٓئِكَةُ أَلَّا تَخَافُوا وَلَا تَحْزَنُوا وَأَبْشِرُوا بِٱلْجَنَّةِ ٱلَّتِى كُنتُمْ تُوعَدُونَ.

“নিশ্চয় যারা বলে, আমাদের পালনকর্তা আল্লাহ, অতঃপর তাতেই অবিচল থাকে, তাদের কাছে ফেরেশতা অবতীর্ণ হয় এবং বলে, তোমরা ভয় করো না, চিন্তা করো না এবং তোমাদের প্রতিশ্রুত জান্নাতের সুসংবাদ শোন”। (হা-মীম সিজদাহ্- ৩০)।

وَٱلَّذِينَ يُؤْمِنُونَ بِمَآ أُنزِلَ إِلَيْكَ وَمَآ أُنزِلَ مِن قَبْلِكَ وَبِٱلْءَاخِرَةِ هُمْ يُوقِنُونَ
أُولَٰٓئِكَ عَلَىٰ هُدًى مِّن رَّبِّهِمْ وَأُولَٰٓئِكَ هُمُ ٱلْمُفْلِحُونَ.

“এবং যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে সেসব বিষয়ের উপর যা কিছু তোমার প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে এবং সেসব বিষয়ের উপর যা তোমার পূর্ববর্তীদের প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে। আর আখেরাতকে যারা নিশ্চিত বলে বিশ্বাস করে। তারাই নিজেদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে সুপথ প্রাপ্ত, আর তারাই যথার্থ সফলকাম”।(আল বাকারা-৪,৫)।

إِنَّ ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا وَٱلَّذِينَ هَادُوا وَٱلنَّصَٰرَىٰ وَٱلصَّٰبِئِينَ مَنْ ءَامَنَ بِٱللَّهِ وَٱلْيَوْمِ ٱلْءَاخِرِ وَعَمِلَ صَٰلِحًا فَلَهُمْ أَجْرُهُمْ عِندَ رَبِّهِمْ وَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ.

“নিঃসন্দেহে যারা মুসলমান হয়েছে এবং যারা ইহুদী, নাসারা ও সাবেঈন, (তাদের মধ্য থেকে) যারা ঈমান এনেছে আল্লাহর প্রতি ও কিয়ামত দিবসের প্রতি এবং সৎকাজ করেছে, তাদের জন্য রয়েছে তার সওয়াব তাদের পালনকর্তার কাছে। আর তাদের কোনই ভয়-ভীতি নেই, তারা দুঃখিতও হবে না”। (আল বাকারা-৬২)।

وَٱلَّذِينَ كَفَرُوا وَكَذَّبُوا بِئَايَٰتِنَآ أُولَٰٓئِكَ أَصْحَٰبُ ٱلْجَحِيمِ.

“যারা অবিশ্বাস করে এবং আমার নিদর্শনাবলীকে মিথ্যা বলে, তারা জাহান্নামী। (আল মায়িদাহ- ১০)।

লেখক: মুফতি যাকারিয়্যা মাহমূদ মাদানী
প্রিন্সিপাল: মানাহিল মডেল মাদরাসা, মিরপুর, ঢাকা
পরিচালক: ভয়েস অব ইসলাম ও ইসলামিক গাইডেন্স।
[email protected]

এ সম্পর্কিত আরও পোস্ট

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to top button