ধূমপান ও তামাকের বিধিবিধান সম্পর্কে ২৬টি গুরুত্বপূর্ণ ফাতাওয়া

তামাক এবং এর বিভিন্ন উৎপাদনসহ তা ব্যবহারের পদ্ধতির সমালোচনায় বলা যায় যে, এটি এমন একটি উপকরণ যা প্রতিরোধের জন্য বিভিন্ন সংগঠন ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। কারণ তামাক ব্যবহারে স্বাস্থ্যের ক্ষতি সাধিত হয় বিধায় ইহা প্রতিরোধ করা ঐ সকল লোকদের কর্তব্য যারা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কাজ করে। শুধু তাই নয় বরং এটি সমাজের প্রতিটি স্তরেই বিস্তার লাভ করেছে। কাজেই শিক্ষকমণ্ডলী, সাংবাদিক, ক্রীড়াবিদ, অর্থনীতিবিদ, আইনজীবি, মনোবিজ্ঞানী, সমাজবিজ্ঞানী এবং সাধারণ লোকসহ সকলেই এ বিধ্বংসী জিনিসের প্রতিরোধে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে, যার দ্বারা গোটা বিশ্বে দৈনিক প্রায় ১৩০০ (তেরশত) লোক মৃত্যুবরণ করে থাকে; যার জন্য দেশ এবং জাতিসহ নিখিল বিশ্ব এ সকল ব্যাধির চিকিৎসায় প্রচুর অর্থ ব্যয় করে চলেছে। আর এ জন্যই আলেমগণ এ মহা ব্যাধি এবং এর ভয়াবহতা হতে মুসলিম উম্মাহকে সতর্ক করতে বিভিন্ন বক্তব্যে অংশ নিচ্ছেন যেন তারা নিজেদেরকে এ থেকে বিরত রেখে সৎকর্মের প্রতি উৎসাহ দান করতে পারে। কয়েক যুগ হতে আমাদের নিকট বহু ফাতাওয়া ও ইসলামী প্রবন্ধ জমা হয়েছে; যার দ্বারা শর‘য়ী হুকুম বর্ণনা করা হয়েছে তাদের ব্যাপারে যারা তামাক উৎপাদন করে, এর ব্যবসা করে, সেল ও সাপ্লাই দেয়, সংরক্ষণ এবং তা ব্যবহার করে।
মাদকদ্রব্য প্রতিরোধ কল্যাণ পরিষদের সহযোগিতায় স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয় তা প্রতিরোধের প্রোগ্রাম তৈরী করেছে, তারা সমাজ এবং এ ব্যতিক্রমধর্মী প্রকাশনার গুরুত্বদানকারীর জন্য এর বিভিন্ন দিক নিয়ে শর‘য়ী হুকুম তুলে ধরেছেন, তারা মনে করছেন যে, এটি বিশেষজ্ঞদের জন্য এবং যারা মাদকদ্রব্য প্রতিরোধের সঠিক গুরুত্ব দিয়ে থাকে তাদের জন্য একটি প্রত্যাবর্তনস্থল দিক হতে পারে। বিশেষ করে দ্বীনি দিকের খেয়াল করে এ ভয়াবহ ব্যাধির সমালোচনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার ইচ্ছা পোষণ করে যে, তামাক ব্যবহারে পাঁচটি প্রয়োজনীয় জিনিসের সবগুলোই কোনো না কোনো রোগে আক্রান্ত হয় যদিও তামাক ত্যাগ করে থাকে। আর তা প্রতিরোধ করলে প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো সংরক্ষণের ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখা হবে। এটি তামাক প্রতিরোধের একটি পদ্ধতি, কাজেই ‘আমের ইবন সালেহ নাজী’ এর প্রশংসা করি এ জন্যে যে, তিনি তার সার্বিক প্রচেষ্টা ব্যয় করে এগুলোকে একত্রিত করেছেন।

আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করি, তিনি যেন তাকে উত্তম বদলা দান করেন, তারপর বিজ্ঞ আলেমগণেরও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি যে, তারা এ ব্যাপারে যে খেদমত করেছেন তা যেন আল্লাহ তাদের মিজানে হাসানায় জমা করে দেন। আমীন

ড. আব্দুল্লাহ ইবন মোহাম্মদ আল বাদাহ
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তামাক বিরোধী কর্মসূচীর পরিচালক
মাদকদ্রব্য প্রতিরোধ কল্যাণ পরিষদের কার্যকরী কমিটির সদস্য

ভূমিকা:

সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য যিনি সৃষ্টিকুলের রব, সালাত ও সালাম বর্ষিত হোক আল্লাহর প্রেরিত সেই বান্দার উপর, যাঁকে তিনি রহমতস্বরূপ পাঠিয়েছেন।

অতঃপর সকলেরই তা জানা যে, ব্যক্তি এবং সমাজে ধূমপানের কুপ্রভাব এবং শারীরিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষতি রয়েছে। ধূমপান এবং ধূমপায়ীদের ব্যাপারে শরীয়তের হুকুম কি? বহু মানুষ তা জানতে চায়। এ বিষয়ে প্রকৃত অবস্থা তুলে ধরে এর হুকুম বর্ণনার ব্যাপারে ধূমপান প্রতিরোধ কল্যাণ পরিষদের ইচ্ছায় এ ব্যতিক্রমধর্মী প্রকাশনা (ধূমপান সম্পর্কে সাধারণ ফাতাওয়া) পাঠক সমাজে তুলে ধরা ভাল মনে করছে।

এতে ধূমপান এবং ধূমপায়ীদের জন্য কিছু শর‘য়ী হুকুমের ফাতাওয়া স্থান পেয়েছে, আল্লাহর নিকট আশা যে, তিনি এর দ্বারা সকলকে উপকার দান করবেন এবং যারা ধূমপান থেকে বিরত থাকার আগ্রহী তাদের জন্য ইহা সহায়ক হবে।
আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করি তিনি যেন আমাদের সম্মানিত আলেমদেরকে এর পুণ্য ও সাওয়াব দান করেন, যারা এ মহা ভয়ংকর ক্ষতির ব্যাপারে শর‘য়ী হুকুম আহকাম বর্ণনা করেছেন এবং এ আমল যেন তাদের পুণ্যের পাল্লায় যোগ করে দেন, নিশ্চয় তিনি শ্রবণকারী ও কবুলকারী।

এমনিভাবে গুরুত্বপূর্ণ, মূল্যবান ও ব্যতিক্রমধর্মী ফাতাওয়াসমূহ একত্রিত করার কারণে সমিতির সদস্য ‘আমের ইবন সালেহ নাজী’ এর প্রশংসা করি, তদ্রুপ এ প্রবন্ধটি আদায়ের ক্ষেত্রে এবং এর ব্যাপক প্রচার ও প্রসার, এ থেকে বিরত রাখতে এবং তা ত্যাগ করার প্রতি উৎসাহ দানে সমিতির উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে ইহা সকল মহলের সর্বাঙ্গিন সহযোগিতা, পৃষ্টপোষকতা ও দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখার আশা করে।
ধূমপান প্রতিরোধ কল্যাণ পরিষদ

১. ধূমপান, হুক্কা এবং এ জাতীয় জিনিসের হুকুম:

প্রশ্ন/ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জীবদ্দশায় ধূমপান হারামের কোনো প্রমাণ আছে কি?
উত্তর: বিশেষভাবে এ নামে কোনো প্রমাণ আসে নাই, কিন্তু তা অপবিত্র জিনিস বিধায় আল্লাহর বাণী:

﴿ وَيُحَرِّمُ عَلَيۡهِمُ ٱلۡخَبَٰٓئِثَ ﴾ [الاعراف: ١٥٧]

অর্থাৎ: “আল্লাহ তাদের উপর অপবিত্র জিনিসকে হারাম করেছেন” এর অন্তর্ভুক্ত। [সুরা আরাফ: ১৫৭] এবং তা ক্ষতিকর বিধায় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হাদীস

«لا ضرر ولا ضرار»

অর্থাৎ: “নিজের কোনো অনিষ্টতা বা ক্ষতি এবং অন্য কারো ক্ষতি করা যাবে না” এর অন্তর্ভুক্ত।[1]

আর যে সকল জিনিস খারাপ ও ক্ষতিকর তাতে টাকা পয়সা ব্যয় করা হারাম। যা অপব্যয় হওয়ার কারণে আল্লাহ তা‘আলার এ বাণী:

﴿إِنَّ ٱلۡمُبَذِّرِينَ كَانُوٓاْ إِخۡوَٰنَ ٱلشَّيَٰطِينِۖ وَكَانَ ٱلشَّيۡطَٰنُ لِرَبِّهِۦ كَفُورٗا٢٧﴾ [الاسراء: ٢٧]

অর্থাৎ: “নিশ্চয়ই অপব্যয়কারীগণ শয়তানের ভাই, আর শয়তান তার প্রভুর নাফরমান” এর অন্তর্ভুক্ত। [সুরা ইসরা: ২৭], তাছাড়া তা অযথা সম্পদ নষ্ট করার শামিল, অথচ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অযথা মাল নষ্ট করতে নিষেধ করেছেন।[2]

আল্লাহ সকলকে তাওফীক দিন, আর আল্লাহ নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর পরিবার-পরিজন এবং সকল সাথীর উপর সালাত পেশ করুন।[3]

প্রশ্ন: এ প্রশ্নটি আল্লামা ইবনে উসাইমীন রহমাতুল্লাহ আলাইহি কে করা হয়েছিল যে, যখন আমরা কোনো দোকানে গিয়ে বলি যে, সিগারেট বিক্রি নিষেধ বা তা বিক্রি করা হারাম, যেমন আপনি ফাতাওয়া দিয়েছেন, তখন তারা বলে: যদি তা হারাম হতো তবে অবশ্যই নিষেধ করা হতো! তাদেরকে আমরা কি বলবো?
উত্তর: এর উত্তর অত্যন্ত সহজ, তাদেরকে বলব: শরীয়তের মূল কি? মানুষের আমল? নাকি কুরআন ও হাদীস? অবশ্যই শরীয়তের উৎস হচ্ছে কুরআন ও হাদীস। যদি কুরআন ও হাদীস কোনো জিনিস হারামের উপর প্রমাণ করে তবে মানুষের কোনো আমল গ্রহণযোগ্য হবে না এবং মানুষের কোনো আমল দলীল হতে পারে না। কিয়ামতের দিন কোনো মানুষ এ রকম কথা বলে আল্লাহর দলীলকে কোনোভাবেই প্রত্যাখ্যান করতে পারবে না, কারণ তিনি বলেছেন:

﴿ وَيَوۡمَ يُنَادِيهِمۡ فَيَقُولُ مَاذَآ أَجَبۡتُمُ ٱلۡمُرۡسَلِينَ ٦٥ ﴾ [القصص: ٦٥]

“যেদিন তাদেরকে ডেকে বলবেন: রাসূলদেরকে কি জবাব দিয়েছিলে?” [সূরা কাসাস: ৬৫] এখানে বলা হয় নি যে, সমাজে কিসের ব্যাপারে তোমরা ঐক্যবদ্ধ হয়েছিলে?
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿ فَعَمِيَتۡ عَلَيۡهِمُ ٱلۡأَنۢبَآءُ يَوۡمَئِذٖ فَهُمۡ لَا يَتَسَآءَلُونَ ٦٦ ﴾ [القصص: ٦٦]

“সেদিন তাদের উপর সকল খবর বন্ধ হয়ে যাবে, অতঃপর তারা কোনো কিছু জিজ্ঞাসা করতে পারবে না” [সূরা কাসাস: ৬৬], তাদের উপর তাদের যাবতীয় খবরাখবর বন্ধ হয়ে যাবে কেউ কোনো কথার উত্তর দিতে পারবে না এবং অন্যকেও জিজ্ঞাসা করতে পারবে না। আর যদি মানুষের আমল দলীল হতো তাহলে কাফেরদের কথা-

﴿إِنَّا وَجَدۡنَآ ءَابَآءَنَا عَلَىٰٓ أُمَّةٖ﴾ [الزخرف: ٢٢]

‘আমরা আমাদের পূর্ব পুরুষদেরকে একটি অবস্থায় পেয়েছি’ দলীল হতো এবং তারা এ কথার দ্বারা ওযর পেশ করতে পারতো। কাজেই আপনি ধূমপায়ীকে এ প্রমাণ দিয়ে যান, যদি সে হেদায়েত পায় তাহলে সে নিজের জন্যই পাবে, আর যদি পথভ্রষ্ট হয় তাহলে সে নিজেই পথভ্রষ্ট হবে।
আল্লাহ তা‘আলা তার রাসূলকে বলেছেন:

﴿ فَذَكِّرۡ إِنَّمَآ أَنتَ مُذَكِّرٞ ٢١ لَّسۡتَ عَلَيۡهِم بِمُصَيۡطِرٍ ٢٢ إِلَّا مَن تَوَلَّىٰ وَكَفَرَ ٢٣ فَيُعَذِّبُهُ ٱللَّهُ ٱلۡعَذَابَ ٱلۡأَكۡبَرَ ٢٤ ﴾ [الغاشية: ٢١، ٢٤]

“অতএব আপনি উপদেশ দিন; আপনি তো কেবল একজন উপদেশদাতা, আপনি তাদের উপর শক্তি প্রয়োগকারী নন। তবে কেউ মুখ ফিরিয়ে নিলে ও কুফরী করলে, আল্লাহ্ তাদেরকে দেবেন মহাশাস্তি।” [সূরা গাশিয়াহ: ২১-২৪][4]

প্রশ্ন: সৌদী আরবের সাবেক প্রধান মুফতি আল্লামা শাইখ আব্দুল আযীয ইবন আব্দুল্লাহ ইবন বায রহমাতুল্লাহ আলাইহি কে প্রশ্ন করা হয়েছিল যে, ধূমপানের হুকুম কি?
উত্তর: ধূমপান হারাম, কেননা তা অপবিত্র এবং বিভিন্ন ধরনের ক্ষতি বহন করে, আর আল্লাহ তা‘আলা তার বান্দাদের জন্য ভাল পবিত্র খাবার ও পানীয় হালাল করেছেন, পক্ষান্তরে অপবিত্র জিনিস তাদের উপর হারাম করেছেন। তিনি বলেন:

﴿ يَسۡ‍َٔلُونَكَ مَاذَآ أُحِلَّ لَهُمۡۖ قُلۡ أُحِلَّ لَكُمُ ٱلطَّيِّبَٰتُ ﴾ [المائ‍دة: ٤]

‘‘তারা আপনাকে জিজ্ঞাসা করে যে, তাদের জন্য কি হালাল করা হয়েছে? বলুন: সকল প্রকার ভাল পবিত্র জিনিস তোমাদের জন্য হালাল করা হয়েছে।’’ [সূরা মায়েদা: ৪]

তিনি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর গুণাগুণের ব্যাপারে বলেন:

﴿يَأۡمُرُهُم بِٱلۡمَعۡرُوفِ وَيَنۡهَىٰهُمۡ عَنِ ٱلۡمُنكَرِ وَيُحِلُّ لَهُمُ ٱلطَّيِّبَٰتِ وَيُحَرِّمُ عَلَيۡهِمُ ٱلۡخَبَٰٓئِثَ ﴾ [الاعراف: ١٥٧]

“তিনি তাদেরকে ভাল কাজের নির্দেশ দেন এবং মন্দ কাজ হতে নিষেধ করেন এবং তাদের জন্য পবিত্র জিনিস হালাল করেছেন এবং অপবিত্র জিনিস তাদের উপর হারাম করেছেন।” [সূরা আ‘রাফ : ১৫৭]

আর সকল প্রকার ধূমপান অপবিত্র, এর মধ্যে কোনো কল্যাণ নেই। এমনিভাবে সকল প্রকার নেশা জাতীয় জিনিস অপবিত্র, কাজেই সিগারেট পান করা, তা বিক্রি করা এবং এর ব্যবসা করা কোনো ক্রমেই জায়েয নেই, যেমন মদ। ধূমপায়ী এবং এর ব্যবসাকারীর উপর ওয়াজিব হলো তাওবা করে বিনীত হয়ে আল্লাহর নিকট ফিরে আসা এবং অতীত কর্মের উপর লজ্জিত হওয়ার সাথে সাথে ভবিষ্যতে এ ধরনের কাজে ফিরে না আসার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করা। যে ব্যক্তি আল্লাহর নিকট খাঁটি তাওবা করবে আল্লাহ তার তাওবা কবুল করে থাকেন।
তিনি বলেন:

﴿ وَتُوبُوٓاْ إِلَى ٱللَّهِ جَمِيعًا أَيُّهَ ٱلۡمُؤۡمِنُونَ لَعَلَّكُمۡ تُفۡلِحُونَ ٣١ ﴾ [النور: ٣١]

“হে মুমিনগণ, তোমরা সকলেই আল্লাহর নিকট তাওবা কর, হয়তো তোমরা সফলকাম হতে পারবে।” [সূরা নূর: ৩১]
অন্যত্র তিনি বলেন:

﴿ وَإِنِّي لَغَفَّارٞ لِّمَن تَابَ وَءَامَنَ وَعَمِلَ صَٰلِحٗا ثُمَّ ٱهۡتَدَىٰ ٨٢ ﴾ [طه: ٨٢]

“আমি ক্ষমাশীল সেই ব্যক্তির জন্য, যে ব্যক্তি তাওবা করে, ঈমান আনে এবং সৎকর্ম সম্পাদন করে, অতঃপর হেদায়েত প্রাপ্ত হয়।” [সূরা তাহা : ৮২][5]

প্রশ্ন: তাকে এ প্রশ্নটিও করা হয়েছিল যে, হুক্কা পান করার হুকুম কি? এটি কি ধূমপানের হুকুমের মতই? ধূমপান এবং হুক্কা কি মাদকদ্রব্যের ন্যায় হারাম?
উত্তর: সকল প্রকার হুক্কা এবং ধূমপান হারামের অন্তর্ভুক্ত, কারণ এতে বহু ক্ষতিকর দিক রয়েছে, এ ব্যাপারে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারগণ উভয়টির বহু ক্ষতিকর দিক তুলে ধরেছেন। আল্লাহ তা‘আলা মুসলিমদের উপর ক্ষতিকর জিনিস গ্রহণ করাকে হারাম করেছেন, কাজেই এগুলো গ্রহণকারীর উপর ওয়াজিব হলো: এ গুলো ত্যাগ করে তা থেকে সতর্কতা অবলম্বন করা।
আল্লাহ তাঁর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে লক্ষ্য করে বলেন:

﴿ يَسۡ‍َٔلُونَكَ مَاذَآ أُحِلَّ لَهُمۡۖ قُلۡ أُحِلَّ لَكُمُ ٱلطَّيِّبَٰتُ ﴾ [المائ‍دة: ٤]

“তারা আপনাকে জিজ্ঞাসা করে, তাদের জন্য কি হালাল করা হয়েছে, আপনি বলুন: ভাল পবিত্র জিনিস তোমাদের জন্য হালাল করা হয়েছে।” [সূরা মায়েদা: ৪] তাছাড়া তাঁর গুণাগুণের ব্যাপারে আল্লাহ আরো বলেন:

﴿يُحِلُّ لَهُمُ ٱلطَّيِّبَٰتِ وَيُحَرِّمُ عَلَيۡهِمُ ٱلۡخَبَٰٓئِثَ ﴾ [الاعراف: ١٥٧]

“তিনি তাদের জন্য পবিত্র জিনিস হালাল করেছেন এবং অপবিত্র জিনিস তাদের উপর হারাম করেছেন।” [সূরা আ‘রাফ : ১৫৭]

সকল প্রকার ধূমপান এবং হুক্কা মানুষের ক্ষতিকর ও অপবিত্র, কাজেই এগুলোর যাবতীয় প্রকারাভেদ উপরোল্লেখিত আয়াতদ্বয় এবং এ অর্থে আরো যা রয়েছে তা দ্বারা হারাম সাব্যস্ত হয়। আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করছি যে, তিনি যেন সকল মুসলিমকে সঠিক পথের পথিক করেন যার মধ্যে তাদের কল্যাণ ও মুক্তি রয়েছে এবং যাবতীয় ক্ষতি থেকে যেন ইহকাল ও পরকালে তাদেরকে রক্ষা করেন, নিশ্চয়ই তিনি সর্বোত্তম দায়িত্বশীল।[6]

প্রশ্ন: এ প্রশ্নটি করা হয়েছিল ফাতাওয়ার স্থায়ী কমিটিকে: প্রশ্নকারী বলেন: আমার বাবা একটি দোকানের মালিক, তিনি তাতে সিগারেট বিক্রি করেন। আমি তাকে বহু নসিহত করেছি এ ব্যাপারে, তিনি স্বীকার করেন যে ধূমপান হারাম কিন্তু সিগারেট বিক্রি করা হারাম তা স্বীকার করেন না, কাজেই অনুগ্রহ করে ধূমপানের উপকরণ বিক্রি করা সম্পর্কে আমার জন্য লিখিত একটি ফাতাওয়া পাঠানো যদি সম্ভব হয় তবে পাঠাবেন?
উত্তর: হুক্কা ও তা পান করতে যে সকল উপকরণ ব্যবহার করা হয় তা বিক্রি করা একেবারেই হারাম; কেননা তাতে রয়েছে সমূহ ক্ষতি ও বড় ধরণের ফাসাদ।[7]

প্রশ্ন/ আল্লামা শাইখ মুহাম্মদ ইবন সালেহ আল উসাইমীন রহমাতুল্লাহ আলাইহি (সৌদী আরবের সর্বোচ্চ উলামা কমিটির সাবেক সদস্য) কে এভাবে প্রশ্ন করা হয়েছিল যে, মহামান্য শাইখের নিকট নিবেদন এই, ধূমপান ও হুক্কা পান করার হুকুম কি? এর দলীলসহ বিস্তারিত বর্ণনা করে বাধিত করবেন।
উত্তর : ধূমপান এবং হুক্কা পান করা হারাম।
দলীল: আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿ وَلَا تَقۡتُلُوٓاْ أَنفُسَكُمۡۚ إِنَّ ٱللَّهَ كَانَ بِكُمۡ رَحِيمٗا ﴾ [النساء: ٢٩]

অর্থাৎ: “তোমরা তোমাদের নাফসকে হত্যা করো না, নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের প্রতি অনুগ্রহশীল।” [সূরা নিসা: ২৯]
তিনি আরও বলেন:

﴿ وَلَا تُلۡقُواْ بِأَيۡدِيكُمۡ إِلَى ٱلتَّهۡلُكَةِ ﴾ [البقرة: ١٩٥]

“তোমরা নিজেদেরকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিওনা।” [সূরা বাকারা : ১৯৫]
ডাক্তারি শাস্ত্রে রয়েছে যে, এগুলো গ্রহণ করা ক্ষতিকর, আর যদি তা ক্ষতিকর হয় তবে অবশ্যই হারাম।
দলীল: আল্লাহ বলেন:

﴿ وَلَا تُؤۡتُواْ ٱلسُّفَهَآءَ أَمۡوَٰلَكُمُ ٱلَّتِي جَعَلَ ٱللَّهُ لَكُمۡ قِيَٰمٗا ﴾ [النساء: ٥]

“আর যে সম্পদকে আল্লাহ তোমাদের জীবন যাত্রার অবলম্বন করেছেন, তা অর্বাচীনদের হাতে তুলে দিও না।” [সূরা নিসা: ৫] আমাদের সম্পদকে নির্বোধদের হাতে দিতে নিষেধ করেছেন, কেননা তারা তা অপব্যয় করে বিনাস করে ফেলবে। আর এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, ধূমপান এবং হুক্কা ক্রয়ে টাকা ব্যয় করা অপব্যয় ও ধ্বংসেরই শামীল। কাজেই এ আয়াতের দলীল দ্বারাও তা নিষেধ করা হয়েছে।
হাদীসের দলীল হলো:

«نَهَى النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ إِضَاعَةِ المَالِ»

“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পদ নষ্ট করতে নিষেধ করেছেন।”[8] আর হুক্কা ও সিগারেট পানে তা ব্যয় করা মাল নষ্ট করার শামিল। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«لا ضرر ولا ضرار»

“নিজের কোনো অনিষ্টতা বা ক্ষতি এবং অন্য কারো ক্ষতি করা যাবে না”। এগুলো গ্রহণ করায় ক্ষতি আবশ্যকীয় এবং তা গ্রহণ করা মানুষকে এর সাথে সম্পৃক্ত করে দেয়। নেশাগ্রস্ত ব্যক্তি যখন তা পানের জন্য খোঁজে না পায় তখন তার মন এবং গোটা দুনিয়া তার উপর সংকীর্ণ হয়ে পড়ে, তখন সে অপ্রয়োজনীয় জিনিস তার শরীরে প্রবেশ করায়।[9]

প্রশ্ন/ এ প্রশ্নটি করা হয়েছিল আল্লামা ডক্টর আব্দুল্লাহ ইবন আব্দুর রহমান আল জিবরীনকে যে, তামাক এবং হুক্কার ব্যাপারে শরীয়তের হুকুম কি? এগুলো পান করা বা গ্রহণ করার বিধান কি? কারো প্রতিবেশী এতে আশক্ত হলে তার সাথে সে কি ভাবে লেনদেন করবে?
উত্তর: এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, তামাক, হুক্কা এবং শাম্মাহ (তামাক জাতীয় জিনিস নাক দিয়ে যার ঘ্রাণ নেয়া হয়) ইত্যাদি সবই হারাম, কেননা এসব কিছুই অপবিত্র।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿وَيُحِلُّ لَهُمُ ٱلطَّيِّبَٰتِ وَيُحَرِّمُ عَلَيۡهِمُ ٱلۡخَبَٰٓئِثَ﴾ [الاعراف: ١٥٧]

“এবং তাদের জন্য পবিত্র জিনিস হালাল করেছেন এবং অপবিত্র জিনিস তাদের উপর হারাম করেছেন।” [সূরা আরাফ: ১৫৭] তা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এবং ইহা এমন কিছু জটিল রোগ সৃষ্টি করে যা মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায় বা এতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে থাকে। অথচ আল্লাহ বলেছেন:

﴿ وَلَا تَقۡتُلُوٓاْ أَنفُسَكُمۡۚ إِنَّ ٱللَّهَ كَانَ بِكُمۡ رَحِيمٗا ﴾ [النساء: ٢٩]

“তোমরা নিজেদেরকে হত্যা করো না” [সূরা নিসা: ২৯]
তিনি আরও বলেন:

﴿ وَلَا تُلۡقُواْ بِأَيۡدِيكُمۡ إِلَى ٱلتَّهۡلُكَةِ ﴾ [البقرة: ١٩٥]

“তোমরা তোমাদের নিজেদেরকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিওনা।” [সূরা বাকারা: ১৯৫]

এবং এতে বিনা উপকারে মূল্যবান সম্পদ নষ্ট ও অপব্যয় করা হয়, আর অপব্যয়কারীগণ শয়তানের ভাই।[10]
এতে যারা আক্রান্ত তাদেরকে বলব: কালবিলম্ব না করে তাড়াতাড়ি এগুলো থেকে ফিরে এসে আল্লাহর নিকট তাওবা করুন এবং ভবিষ্যতে কখনো তা গ্রহণ না করার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করে তা ছেড়ে দেওয়ার জন্য তাঁর নিকট প্রার্থনা করুন এবং তা থেকে মুক্ত ও এর ব্যথা থেকে নিরাময় হওয়া পর্যন্ত কিছু দিন ধৈর্য ধারণ করুন। নিশ্চয়ই আল্লাহ আরোগ্য দানকারী।[11]

প্রশ্ন/ এ প্রশ্নটি করা হয়েছিল ফাতাওয়ার স্থায়ী কমিটিকে: সিগারেট ও হুক্কার হুকুম কি? তা হারাম না মাকরুহ? যদি হারাম হয় তবে কুরআন ও হাদীস থেকে এর দলীল কি? অতঃপর হজ্জ এবং উমরায় মুহরিম অবস্থায় সিগারেট ও হুক্কা পান করার হুকুম কি?
উত্তর: সিগারেট ও হুক্কা পান করা হারাম, কারণ এতে ক্ষতি রয়েছে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«لا ضرر ولا ضرار»
নিজের কোনো অনিষ্টতা বা ক্ষতি এবং অন্য কারো ক্ষতি করা যাবে না) এবং তা অপবিত্র।
আল্লাহ বলেন:

﴿ وَيُحِلُّ لَهُمُ ٱلطَّيِّبَٰتِ وَيُحَرِّمُ عَلَيۡهِمُ ٱلۡخَبَٰٓئِثَ ﴾ [الاعراف: ١٥٧]

“এবং তাদের জন্য পবিত্র জিনিস হালাল করেছেন এবং অপবিত্র জিনিস তাদের উপর হারাম করেছেন।” [সূরা আরাফ: ১৫৭।] এবং এতে টাকা ব্যয় করা অপব্যয়ের শামিল, অথচ আল্লাহ এ থেকে নিষেধ করেছেন।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿وَلَا تُسۡرِفُوٓاْۚ إِنَّهُۥ لَا يُحِبُّ ٱلۡمُسۡرِفِينَ﴾ [الانعام: ١٤١، الأعراف: 31]

“তোমরা অপব্যয় করো না, নিশ্চয়ই আল্লাহ অপব্যয়কারীকে পছন্দ করেন না।” [সূরা আন‘আম: ১৪১, আরাফ: ৩১]
শয়তান যখন মানুষকে নিয়ে খেলা করে তখন সে এগুলো পান করে থাকে ফলে সে অন্যায় করে, কাজেই তার উপর ওয়াজিব হলো তাওবা করা এবং আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করা, হয়তো আল্লাহ তার তাওবা কবুল করে ক্ষমা করতে পারেন। হজ্জ বা উমরাহ অবস্থায় যদি কেউ তা পান করে তবে তার হজ্জ এবং উমরাহ বাতিল হবে না।

হে আল্লাহ! আমাদের নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর ও তাঁর পরিবার পরিজন এবং সাহাবীগণের উপর সালাত ও সালাম পেশ করুন।[12]

প্রশ্ন/ আমরা জীযান শহরের অদূরে একটি গ্রামের বাসিন্দা, আমাদের এলাকায় শাম্মাহ পাওয়া যায় এবং এতে বহু লোক আসক্ত, কেউ কেউ তা পান করে নামাযও পড়াচ্ছেন, দ্বীনদার লোক তাতে সন্তুষ্ট নন, কিন্তু এ শাম্মাহ কেউ ছাড়তে পারছে না অথচ চেষ্টা চলছে তা ছাড়ানোর জন্য, শত চেষ্টা সত্যেও সম্ভব হচ্ছে না। কেউ কেউ ছেড়ে দিলেও বাকী লোক বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত যেমন: মুখ ও পেট ফুলে যাওয়া, দাঁত দিয়ে রক্ত ঝরা, অত্যাধিক রাগান্বিত হওয়া, কাজে অপরগতা এবং মনে অশান্তি ভাব ইত্যাদি। কাউকে কাউকে আল্লাহ রক্ষা করেছেন, আবার কেউ কেউ এতে আবার ফিরে এসেছে, তবে অধিকাংশ লোক তা ছেড়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে। এমতাবস্থায় আপনি আমাদেরকে বলবেন কি? যারা চেষ্টা করেও তা ত্যাগ করতে পারছে না তাদের দ্বীন পালনে কোনো প্রতিক্রিয়া আছে কি? তার নামায, রোজা এবং হজ্জ হবে কি? যারা তা ত্যাগ করতে পারছে না তাদের কাফফারার পরিমাণ কি? কারণ বহু লোক তা পরিত্যাগ করতে পারছে না এবং এর কাফফারা কি?
উত্তর: শাম্মাহ গ্রহণ করা হারাম, তা গ্রহণকারীকে অবশ্যই তা ত্যাগ করতে হবে এবং তা ত্যাগ করার দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হতে হবে। সেই সাথে আল্লাহর যিকির করা এবং তার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে। তার নামায, রোজা এবং হজ্জ যদি সঠিক নিয়মে করে থাকে তবে সহীহ হবে, শাম্মাহ গ্রহণে এর কোনো ক্ষতি হবে না।
আর আল্লাহর কাছেই তাওফীক চাচ্ছি, হে আল্লাহ, আমাদের নবী মুহাম্মদ এর উপর ও তাঁর পরিবার পরিজন এবং সাহাবীগণের উপর সালাত ও সালাম বর্ষন করুন।[13]

প্রশ্ন/ শাম্মাহ গ্রহণ করার হুকুম কি? বিশেষ করে রমাযানে দিনের বেলায় তা পান করার হুকুম কি? তা রোজা ভঙ্গকারী বিষয় কি? উল্লেখ্য যে, কাহতান উপত্যকার লোকজন রমাযানে দিনের বেলায় তা পান করে থাকে এবং তারা বলে যে, তাতে রোজা নষ্ট হবে না।
উত্তর: শাম্মাহ একটি অপবিত্র জিনিস, কারণ তা অপবিত্র হারাম জিনিস দ্বারা তৈরী করা হয়। তাই রোজাদার দিনের বেলায় তা গ্রহণ করলে গুনাহগার হওয়ার সাথে সাথে তার রোজাও নষ্ট হয়ে যাবে, যেমন রোজা ভঙ্গকারী যে কোনো জিনিস ব্যবহার করলে রোজা ভঙ্গ হয়ে থাকে।[14]

প্রশ্ন/ ধূমপান নাক দিয়ে টানা হারাম না হালাল?
উত্তর: ধূমপান নাক দিয়ে টানা, তা পান করা ও তা চিবানো জায়েয নেই, কারণ পান কিংবা চিবানো কিংবা নাক যেভাবেই গ্রহণ করা হোক তাতে ক্ষতি রয়েছে। আর যে জিনিসে ক্ষতির পরিমাণ বেশী হয় অথবা উপকার ও অপকার উভয়ই সমান হয় তাও হারাম।
আর আল্লাহর কাছেই তাওফীক চাচ্ছি, হে আল্লাহ, আমাদের নবী মুহাম্মদ এর উপর ও তাঁর পরিবার পরিজন এবং সাহাবীগণের উপর সালাত ও সালাম বর্ষণ করুন।[15]

২. তামাক চাষ করা:

প্রশ্ন/ এ প্রশ্নটি করা হয়েছিল ফাতাওয়ার স্থায়ী কমিটিকে: তামাক চাষ করা এবং চাষীগণ তামাক বিক্রির যে টাকা পয়সা জমা করেছে ইসলামে এর হুকুম কি?
উত্তর: তামাক চাষ, তা বিক্রি করা এবং ব্যবহার করা জায়েয নেই, কারণ তা বিভিন্ন দিক দিয়ে হারাম। এতে শারীরিক ক্ষতি রয়েছে, তা অপবিত্র এবং এতে কোনো উপকার নেই। কাজেই মুসলিমের উচিত হলো তা পরিত্যাগ করে এ থেকে দূরে থাকা এবং তা চাষ ও এর ব্যবসা না করা। কেননা আল্লাহ কোনো জিনিসকে হারাম করলে এর মূল্যকেও হারাম করেন।[16]

৩. তামাক দ্বারা চিকিৎসা করা:

প্রশ্ন/ আমার মা’র বয়স প্রায় ৭৫ বছর, তার গলায় একটি রোগ আছে প্রায় পনের বছর যাবৎ, চিকিৎসার জন্য আরবীয় সকল ডাক্তারসহ সরকারী ডাক্তার দেখানো শেষ, কিন্তু কোনো ফল পাইনি, শুধু তামাক জাতীয় একটি জিনিস ব্যবহার ব্যতীত, তা অঙ্গুলির অগ্রভাগ দিয়ে ব্যথার স্থানে লাগিয়ে দিলে কিছুটা ব্যথা কম হয় এবং কিছুক্ষণ ভাল থাকে। সর্বপ্রথম আল্লাহর নিকট অতঃপর আপনার নিকট আশা করে জানতে চাচ্ছি যে, তার রোজার ক্ষতি হবে কি? ক্ষতি হলে তা পূরণে কি করা উচিত?
উত্তর: প্রথমত: তামাক দ্বারা চিকিৎসা করা বা ব্যথা দূর করা আপনার মা’র জন্য জায়েয নেই; কেননা তামাক ব্যবহার করা হারাম, কারণ এতে বহু ক্ষতি রয়েছে। আর আল্লাহ কোনো হারাম জিনিসের মধ্যে এ উম্মতের কোনো চিকিৎসা রাখেন নি।
দ্বিতীয়ত: তামাকের কোনো অংশ পেটের ভিতরে গেলে সে দিনগুলোর রোজা কাযা করা ফরয, অন্যথায় কিছু লাগবে না।[17]

৪. তামাক বিক্রি করা ও তামাক কোম্পানীতে কাজ করার হুকুম কী?

প্রশ্ন/ এ প্রশ্নটি করা হয়েছিল আল্লামা শাইখ ইবনে উসাইমীন রহমাতুল্লাহ আলাইহি কে: আমি কঠোর পরিশ্রমের একটি কাজ করতাম, কিন্তু শেষ পর্যন্ত টিকতে পারিনি, অতঃপর হালকা একটি কাজের সন্ধান করে সিগারেট তৈরীর কাজ ছাড়া অন্য কোনো কাজ পাইনি, আমি কয়েক মাস যাবৎ এতে কাজ করে যাচ্ছি। উল্লেখ্য যে, আমি সিগারেট বা এ জাতীয় কোনো কিছু পান করি না। প্রশ্ন হলো: আমার এ কাজের পারিশ্রমিক হালাল না হারাম? আলহামদু লিল্লাহ আমি কিন্তু মনোযোগ সহকারে আমার কাজ করে যাচ্ছি।
উত্তর: সিগারেট তৈরীর কারখানায় আপনার কাজ করা জায়েয হবে না; কারণ সিগারেট তৈরী এবং তা ক্রয় বিক্রির লেনদেন করা হারাম, আর এ কোম্পানীতে কাজ করা হারামের উপর সহযোগিতার শামিল। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿ وَتَعَاوَنُواْ عَلَى ٱلۡبِرِّ وَٱلتَّقۡوَىٰۖ وَلَا تَعَاوَنُواْ عَلَى ٱلۡإِثۡمِ وَٱلۡعُدۡوَٰنِۚ ﴾ [المائ‍دة: ٢]

“তোমরা পরস্পরে ভাল এবং তাকওয়াপূর্ণ কাজে সহযোগিতা কর পক্ষান্তরে পাপ এবং আল্লাহদ্রোহী কাজে সহযোগিতা করো না।” [সূরা মায়েদা: ২] কাজেই এ কোম্পানীতে আপনার কাজ চালিয়ে যাওয়া হারাম এবং আপনার পারিশ্রমিকও হারাম। আপনার উচিত হলো এ কোম্পানীর কাজ ছেড়ে দিয়ে আল্লাহর নিকট তাওবা করা। হালাল কর্ম করে হালাল কম উপার্জন করা হারাম অধিক উপার্জনের চেয়ে উত্তম। কেননা কোনো ব্যক্তি যখন হারাম উপার্জন করে আল্লাহ তাতে বরকত দান করেন না, তা সদকা করে দিলে আল্লাহ তা কবুল করেন না আর তা ছেড়ে গেলে সেটা তার জন্য গোনাহের কাজ হবে যদিও ওয়ারিসদের জন্য প্রাপ্ত সম্পদ হিসেবে বিবেচিত হবে। জেনে রাখুন! রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে সাব্যস্ত রয়েছে যে, তিনি বলেছেন: ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ পবিত্র, তিনি কেবল পবিত্রকেই গ্রহণ করেন এবং আল্লাহ মুমিনগণকে সেই নির্দেশ দিয়েছেন; যে নির্দেশ দিয়েছিলেন রাসূলগণকে’। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:

﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلرُّسُلُ كُلُواْ مِنَ ٱلطَّيِّبَٰتِ وَٱعۡمَلُواْ صَٰلِحًاۖ إِنِّي بِمَا تَعۡمَلُونَ عَلِيمٞ ٥١﴾ [المؤمنون: ٥١]

“হে রাসূলগণ! আপনারা ভাল পবিত্র জিনিস ভক্ষণ করুন এবং সৎকর্ম সম্পাদন করুন, নিশ্চয়ই আমি আপনাদের কর্ম সম্পর্কে অবগত আছি।” [সূরা মুমিনূন: ৫১]। তিনি আরও বলেন:

﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ كُلُواْ مِن طَيِّبَٰتِ مَا رَزَقۡنَٰكُمۡ وَٱشۡكُرُواْ لِلَّهِ إِن كُنتُمۡ إِيَّاهُ تَعۡبُدُونَ ١٧٢ ﴾ [البقرة: ١٧٢]

“হে মুমিনগণ ! আমি তোমাদেরকে যে পবিত্র রিযিক দিয়েছি তা থেকেই তোমরা ভক্ষণ কর এবং আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর; যদি তোমরা সত্যিকারার্থে তাঁর ইবাদত করে থাক।” [সুরা বাকারা: ১৭২]। এরপর রাসূল কোনো ব্যক্তির দীর্ঘ ভ্রমণের কথা জানিয়ে বললেন, লোকটির কেশ এলোমেলো অবস্থায়, আকাশের দিকে দু’হাত বাড়িয়ে বলে: হে আল্লাহ! হে আল্লাহ! অথচ তার আহার হারাম, পানীয় হারাম, পোশাক পরিচ্ছেদ হারাম, শরীর গঠন হয়েছে হারাম দিয়ে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: ‘তাহলে কি ভাবে তার দো‘আ কবুল হবে?”[18]

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই ব্যক্তির দো‘আ কবুল হওয়া অসম্ভব বলেছেন অথচ লোকটি দো‘আ কবুল হওয়ার কারণ (সফর) অবলম্বন করেছে; কারণ তার আহার হারাম, পানীয় হারাম, পোশাক পরিচ্ছেদ হারাম, শরীর গঠন হয়েছে হারাম দিয়ে। এ প্রার্থনাকারী দো‘আ কবুলের কারণগুলো অবলম্বন করার পরও তার দো‘আ কবুল হয়নি, কারণ তার সকল জিনিস হারাম ছিল, কাজেই মানুষের উচিত হলো: হারাম খাদ্য পরিত্যাগ করা এবং এ থেকে দূরে থাকা।

﴿ وَمَن يَتَّقِ ٱللَّهَ يَجۡعَل لَّهُۥ مَخۡرَجٗا ٢ وَيَرۡزُقۡهُ مِنۡ حَيۡثُ لَا يَحۡتَسِبُۚ﴾ [الطلاق: ٢، ٣]

“যে ব্যক্তি আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন করে তিনি তার জন্য রাস্তা বের করে দেন এবং বিনা হিসাবে তিনি তাকে রিযিক দিয়ে থাকেন।” [সূরা তালাক: ২-৩]

﴿ وَمَن يَتَّقِ ٱللَّهَ يَجۡعَل لَّهُۥ مِنۡ أَمۡرِهِۦ يُسۡرٗا ﴾ [الطلاق: ٤]

“এবং যে ব্যক্তি আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন করে তিনি তার কাজকে সহজ করে দেন।” [সূরা তালাক: ৪]
আপনার প্রতি আমার উপদেশ হলো, আপনি আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন করুন! এবং এ কোম্পানী থেকে বের হয়ে এসে হালাল রিযিক অনুসন্ধান করুন, যেন আল্লাহ এতে বরকত দান করেন[19]।

প্রশ্ন/ এ প্রশ্নটি করা হয়েছিল ফাতাওয়ার স্থায়ী কমিটিকে: আমার এক ভাই সিগারেট বিক্রি করে, আমি জানি যে সিগারেট বিক্রি, ক্রয় এবং তা পান করা জায়েয নেই, কিন্তু তাকে যখন এ কথা বললাম তখন সে আমাকে উত্তর দিল: আমার টাকার প্রয়োজন, বেশী দিন এ ব্যবসা করব না, কিছু টাকা হলেই তা ছেড়ে দিয়ে অন্য ব্যবসা করব। এমতাবস্থায় সিগারেট বিক্রি করা কি জায়েয হবে?
উত্তর: তামাক বা সিগারেটের ক্ষতি, অপবিত্রতা এবং ব্যক্তি ও সমাজে এর খারাপ পরিণতির উপর বিভিন্ন দলীল প্রমাণিত হওয়ার কারণে তা বিক্রি করা সর্বাবস্থায় হারাম। আপনার ভাই টাকার যে প্রয়োজন উল্লেখ করেছেন তা হারাম ব্যবসা দ্বারা অর্জন করার বৈধতা প্রদান করে না। হারাম থেকে বেঁচে হালালই যথেষ্ট। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿ وَمَن يَتَّقِ ٱللَّهَ يَجۡعَل لَّهُۥ مَخۡرَجٗا ٢ وَيَرۡزُقۡهُ مِنۡ حَيۡثُ لَا يَحۡتَسِبُۚ﴾ [الطلاق: ٢، ٣]

“যে ব্যক্তি আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন করে তিনি তার জন্য রাস্তা বের করে দেন এবং বিনা হিসাবে তিনি তাকে রিযিক দিয়ে থাকেন।” [সূরা তালাক: ২-৩]।[20]

প্রশ্ন/ যারা অশ্লীল ম্যাগাজিন, তামাক বা বিড়ি সিগারেট এবং মদ বিক্রি করে তাদের বেতন হালাল না হারাম?
উত্তর: যে সমস্ত দোকানে বা জায়গায় অশ্লীল ম্যাগাজিন, তামাক বা বিড়ি সিগারেট এবং মদ বিক্রি করা হয় সেখানে কাজ করা হারাম, কারণ তা অপবিত্র বিধায় উপার্জনও অপবিত্র। তাছাড়া যে সকল জিনিস মূলত হারাম তা ক্রয় বিক্রয় ও এর মূল্য থেকে উপকার লাভ করাও হারাম, এর উপর ভিত্তি করে বলা যায় যে, এ সমস্ত দোকানে বা জায়গাতে কাজ করে বেতন নেয়া হালাল নয়। কেননা তাতে কাজ করায় তা সম্প্রসারিত হয়, মানুষের দ্বীন ও দুনিয়ার ক্ষতি সাধন হয় এবং বাতিল ও পাপ কাজে সহযোগিতা করা হয়। আল্লাহ বলেন:

﴿ وَتَعَاوَنُواْ عَلَى ٱلۡبِرِّ وَٱلتَّقۡوَىٰۖ وَلَا تَعَاوَنُواْ عَلَى ٱلۡإِثۡمِ وَٱلۡعُدۡوَٰنِۚ وَٱتَّقُواْ ٱللَّهَۖ إِنَّ ٱللَّهَ شَدِيدُ ٱلۡعِقَابِ﴾ [المائ‍دة: ٢]

“তোমরা পরস্পরে ভাল এবং তাকওয়াপূর্ণ কাজে সহযোগিতা কর; পক্ষান্তরে পাপ এবং আল্লাহদ্রোহী কাজে সহযোগিতা করো না, তোমরা আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর, নিশ্চয়ই আল্লাহ কঠোর শাস্তিদাতা।” [সূরা মায়েদা: ২]।
ইমাম আহমদ রহমাতুল্লাহ আলাইহি তার মুসনাদে বর্ণনা করেছেন, ইবনে উমর রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«لُعِنَتِ الْخَمْرُ عَلَى عَشْرَةِ وُجُوهٍ: لُعِنَتِ الْخَمْرُ بِعَيْنِهَا، وَشَارِبُهَا، وَسَاقِيهَا، وَبَائِعُهَا، وَمُبْتَاعُهَا، وَعَاصِرُهَا، وَمُعْتَصِرُهَا، وَحَامِلُهَا، وَالْمَحْمُولَةُ إِلَيْهِ، وَآكِلُ ثَمَنِهَا»

“মদকে দশটি দিক থেকে অভিসম্পাৎ করা হয়েছে: স্বয়ং মদকে, তার পানকারী, পরিবেশনকারী, বিক্রেতা, ক্রেতা, প্রস্তুতকারক, যার জন্য প্রস্তুত হরা হয়, তা বহনকারী, যার জন্য বহন করা হয় এবং এর মূল্য ভক্ষণকারীকে অভিসম্পাৎ করা হয়েছে।”[21] তাছাড়া তিরমিযী ও ইবনে মাজাহসহ আরও অন্যান্যরা হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।

উল্লেখিত দোকানে যারা কাজ করে টাকা উপার্জন করবে তাদের উচিত হলো: কাজ ত্যাগ করা এবং উপার্জিত টাকা পয়সা কোনো ভাল ও কল্যাণকর কাজে ব্যয় করে দেওয়া। যেমন: যদি সম্ভব হয় তবে ফকীর মিসকিনকে দিয়ে দেওয়া, সেই সাথে আল্লাহর নিকট তাওবা করা, এমনিভাবে সে কাজ ছেড়ে দিয়ে অন্য কাজ করা যার উপার্জন হালাল ও পবিত্র। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য কোনো কিছু ছেড়ে দেয় আল্লাহ তাকে এর চেয়ে ভাল প্রতিদান দিয়ে থাকেন। তিনি বলেন:

﴿وَمَن يَتَّقِ ٱللَّهَ يَجۡعَل لَّهُۥ مَخۡرَجٗا ٢ وَيَرۡزُقۡهُ مِنۡ حَيۡثُ لَا يَحۡتَسِبُۚ﴾ [الطلاق: ٢، ٣]

“যে ব্যক্তি আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন করে তিনি তার জন্য রাস্তা বের করে দেন এবং বিনা হিসাবে তিনি তাকে রিযিক দিয়ে থাকেন।” [সূরা তালাক: ২-৩]।

তিনি আরও বলেন:

﴿ وَمَن يَتَّقِ ٱللَّهَ يَجۡعَل لَّهُۥ مِنۡ أَمۡرِهِۦ يُسۡرٗا﴾ [الطلاق: ٤]

“এবং যে ব্যক্তি আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন করে তিনি তার কাজকে সহজ করে দেন।” [সূরা তালাক: ৪]

আর আল্লাহর কাছেই তাওফীক চাচ্ছি, হে আল্লাহ, আমাদের নবী মুহাম্মদ এর উপর ও তাঁর পরিবার পরিজন এবং সাহাবীগণের উপর সালাত ও সালাম বর্ষণ করুন।[22]

প্রশ্ন/ আমি একটি ফ্লাটে থাকি এবং আমার বাবা অন্য ফ্লাটে থাকেন, তিনি তামাক ও সিগারেট তৈরী এবং তা বিক্রি করার কারখানায় কাজ করেন, বাবা মাঝে মধ্যে খাবার নিয়ে এসে আমাকে খেতে বলেন, সিগারেট কোম্পানীতে কাজের উপার্জনের টাকা দিয়ে ক্রয় করা খাবার আমি খেয়ে থাকি, এটা কি হারাম? তার সাথে খাবার খাওয়াও কি হারাম? এমনিভাবে আমার ছেলে-মেয়েরাও খেয়ে থাকে। আমি একটি এ্যালুমিনিয়াম কোম্পানীতে কাজ করি। বাবা সে কোম্পানীতে প্রায় ত্রিশ বছর যাবৎ কাজ করছেন, এ থেকে বিরত থাকার পদ্ধতি কি?
উত্তর: যেটা হয়ে গিয়েছে তা আল্লাহ ক্ষমা করে দিবেন ইন-শাআল্লাহ, কিন্তু ভবিষ্যতে চেষ্টা করুন হালাল ও ভাল খাবার খেতে, তা আপনার উপার্জন থেকে হোক বা অন্যের উপার্জনের হোক। আর আপনার বাবাকে আপনি ভালোর দিকে দাওয়াত দিতে থাকুন, হালাল খাবার ও পবিত্র উপার্জনের জন্য তাকে উৎসাহ দিতে থাকুন এবং তার সাথে ভাল ব্যবহার করুন, হয়তো আল্লাহ তাকে হক্বের দিকে হেদায়েত করতে পারেন।
আর আল্লাহর কাছেই তাওফীক চাচ্ছি, হে আল্লাহ, আমাদের নবী মুহাম্মদ এর উপর ও তাঁর পরিবার পরিজন এবং সাহাবীগণের উপর সালাত ও সালাম বর্ষণ করুন। [23]

প্রশ্ন/ আমি একজন ব্যবসায়ী, তামাক বা সিগারেট বিক্রি করি, এটাও আমার ব্যবসার অন্তর্ভুক্ত। এটা কি আমার জন্য জায়েয হবে? উল্লেখ্য যে, আমি ধূমপান করি না এবং আমার নিকট একটি টেলিভিশন আছে, আমার বন্ধুরা একত্রিত হয়ে তাতে খেলাধুলা এবং টিভি সিরিয়াল (নাটক) দেখে; এতে তারা মাঝে মধ্যে নামাযও ছেড়ে দিচ্ছে। এমতাবস্থায় এভাবে টিভি রাখা আমার জন্য জায়েয হবে কি? এমনিভাবে আমি মার্কেটের এক পার্শ্বে একটি দোকানে থাকি, আমার নিকট থেকে মাসজিদের দূরত্ব হলো প্রায় ২০০ মিটার, আমি দোকানে নামায পড়ি কিন্তু মাসজিদে জামাতের সাথে পড়ি না, আমার এ কাজের হুকুম কি?
উত্তর: তামাক বা বিড়ি সিগারেট একটি অপবিত্র এবং ক্ষতিকর জিনিস, তা বিক্রি বা পান করা জায়েয নেই। কেননা আল্লাহ কোনো জিনিস হারাম করলে এর মূল্যও হারাম করেন, কাজেই আপনার উচিত হলো তা বিক্রি করা থেকে আল্লাহর নিকট তাওবা করে হালাল জিনিস বিক্রির উপর সীমাবদ্ধ থাকা। এতেই কল্যাণ ও বরকত রয়েছে। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য কোনো কিছু ছেড়ে দেয় আল্লাহ তাকে এর চেয়ে ভাল প্রতিদান দিয়ে থাকেন। তদ্রুপ আপনার বন্ধুরা আপনার নিকট এভাবে এসে টিভি দেখে নামায ছেড়ে দিলে তাদেরকে আসতে দেওয়া ঠিক নয়, আপনার উচিত হলো দোকান বন্ধ করে তাদেরকে সাথে নিয়ে মাসজিদে যাওয়া।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ لَا تُلۡهِكُمۡ أَمۡوَٰلُكُمۡ وَلَآ أَوۡلَٰدُكُمۡ عَن ذِكۡرِ ٱللَّهِۚ وَمَن يَفۡعَلۡ ذَٰلِكَ فَأُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡخَٰسِرُونَ ٩ ﴾ [المنافقون: ٩]

“হে মুমিনগণ! তোমাদের ধন- সম্পদ এবং সন্তান সমত্ততি যেন তোমাদেরকে আল্লাহর যিকির থেকে গাফেল না করে দেয়। এবং যারা এ কারণে গাফেল হবে তারাইতো ক্ষতিগ্রস্ত।” [সূরা মুনাফিকুন: ৯]

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:

«مَنْ سَمِعَ النِّدَاءَ فَلَمْ يَأْتِهِ، فَلَا صَلَاةَ لَهُ، إِلَّا مِنْ عُذْرٍ»

“যে ব্যক্তি আযান শুনেও মাসজিদে আসবে না তার বিনা উযরে নামায হবে না।[24]” ইবনে আব্বাসকে জিজ্ঞাসা করা হলো সে উযর কি? তিনি বললেন: ‘ভয় বা অসুস্থতা’[25]।

তাঁর থেকে আরও সাব্যস্ত আছে যে,

أَتَى النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَجُلٌ أَعْمَى، فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللهِ، إِنَّهُ لَيْسَ لِي قَائِدٌ يَقُودُنِي إِلَى الْمَسْجِدِ، فَسَأَلَ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنْ يُرَخِّصَ لَهُ، فَيُصَلِّيَ فِي بَيْتِهِ، فَرَخَّصَ لَهُ، فَلَمَّا وَلَّى، دَعَاهُ، فَقَالَ: «هَلْ تَسْمَعُ النِّدَاءَ بِالصَّلَاةِ؟» قَالَ: نَعَمْ، قَالَ: «فَأَجِبْ»

“একদা এক অন্ধ ব্যক্তি বলল: হে আল্লাহর রাসূল! মাসজিদে নিয়ে যাওয়ার জন্য আমার কোনো লোক নেই, ঘরে নামায পড়ার জন্য আমার কোনো অনুমতি আছে কি? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: তুমি আযান শুনতে পাও কি? বলল: জি হ্যাঁ, তিনি বললেন: তাহলে মাসজিদে আস[26]।”[27]

প্রশ্ন/ মিসরীয় মুফতী শাইখ নাসর ফরিদ ওয়াসেলকে নিম্নোক্ত প্রশ্নগুলো করা হয়েছে: শরীয়ত যদি ধূমপানকে হারাম স্বীকৃতি দিয়ে থাকে তাহলে এর ব্যবসায়ী, প্রস্তুতকারক এবং ক্রেতার ব্যাপারে শরীয়তের হুকুম কি? তাদের এ কাজ কি হারাম না হালাল? এর লভ্যাংশ হারাম না হালাল? এবং এ লভ্যাংশ সদকা করা, তা দিয়ে হজ্জ করা এবং যাবতীয় ভাল কাজ করা হারাম না হালাল?
উত্তর: ইসলামী শরীয়তে স্থায়ী মূলনীতি হলো: আল্লাহ তা‘আলা মানুষকে সৃষ্টি করে সম্মানিত করেছেন, তাদেরকে প্রতিনিধি করে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন তা আবাদ করার জন্য এবং এর গুপ্তধন ও কল্যাণগুলো খোঁজে বের করার জন্য, তাদেরকে গ্রহণ করার জন্য বিশ্বকে উপযোগী করে এ পর্যন্ত নিয়ে এসেছেন যেন তারা পৃথিবীতে প্রতিনিধি হতে পারে।
আল্লাহ বলেন:
﴿ وَإِذۡ قَالَ رَبُّكَ لِلۡمَلَٰٓئِكَةِ إِنِّي جَاعِلٞ فِي ٱلۡأَرۡضِ خَلِيفَةٗۖ …﴾ [البقرة: ٣٠]

“আর আপনার পালনকর্তা যখন ফেরেশতাদিগকে বললেন: আমি পৃথিবীতে একজন প্রতিনিধি বানাতে চাচ্ছি …” [বাক্বারা: ৩০]। মানুষকে আল্লাহ তা‘আলা প্রতিনিধি করার অর্থই হচ্ছে তাদেরকে অন্যান্য সকল সৃষ্টির উপর সম্মান ও মর্যাদা দেওয়া।
তিনি বলেন:

﴿۞وَلَقَدۡ كَرَّمۡنَا بَنِيٓ ءَادَمَ وَحَمَلۡنَٰهُمۡ فِي ٱلۡبَرِّ وَٱلۡبَحۡرِ وَرَزَقۡنَٰهُم مِّنَ ٱلطَّيِّبَٰتِ وَفَضَّلۡنَٰهُمۡ عَلَىٰ كَثِيرٖ مِّمَّنۡ خَلَقۡنَا تَفۡضِيلٗا ٧٠ ﴾ [الاسراء: ٧٠]

“নিশ্চয়ই আমি আদম সন্তানকে মর্যাদা দান করেছি, আমি তাদেরকে জলে ও স্থলে চলাচলের জন্য বাহন দান করেছি, তাদেরকে পবিত্র ও ভাল জীবিকা দিয়েছি এবং তাদেরকে অনেক সৃষ্ট বস্তুর উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছি।” [সূরা বানী-ইসরাঈল: ৭০]
আর মানুষকে আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব দান করা এসেছে অন্যান্য সকল সৃষ্টির উপর সুস্থ জ্ঞান দ্বারা পার্থক্যের মাধ্যমে। পৃথিবীতে মানুষের আগমনের এটিই অর্পিত দায়িত্ব যাকে মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ধরা হয়।
তিনি বলেন:

﴿ وَمَا خَلَقۡتُ ٱلۡجِنَّ وَٱلۡإِنسَ إِلَّا لِيَعۡبُدُونِ ٥٦ مَآ أُرِيدُ مِنۡهُم مِّن رِّزۡقٖ وَمَآ أُرِيدُ أَن يُطۡعِمُونِ ٥٧ إِنَّ ٱللَّهَ هُوَ ٱلرَّزَّاقُ ذُو ٱلۡقُوَّةِ ٱلۡمَتِينُ ٥٨ ﴾ [الذاريات: ٥٦، ٥٨]

“শুধু আমার ইবাদত করার জন্যই আমি মানব ও জ্বিনকে সৃষ্টি করেছি, আমি তাদের নিকট জীবিকা চাই না এবং এটাও চাই না যে, তারা আমার আহার্য যোগাবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা জীবিকাদাতা অধিক শক্তিধর পরাক্রান্ত।” [সূরা যারিয়াত: ৫৬-৫৮]
মানুষকে আল্লাহ সম্মান দেওয়ার বহু দিক রয়েছে, এর মধ্যে: আল্লাহ মানুষকে নিজের নাফস, শরীর এবং অন্যান্য মানুষকে হেফাজত করার নির্দেশ দিয়েছেন বিধায় তার নিজেকে এবং অন্যদেরকে যে কোনো ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেওয়া উচিত নয়।
আল্লাহ বলেন:

﴿ وَلَا تَقۡتُلُوٓاْ أَنفُسَكُمۡۚ إِنَّ ٱللَّهَ كَانَ بِكُمۡ رَحِيمٗا ﴾ [النساء: ٢٩]

“তোমরা তোমাদের নিজেদেরকে হত্যা করো না, নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের প্রতি অত্যন্ত অনুগ্রহশীল।” [সূরা নিসা: ২৯]
তিনি আরও বলেন:

﴿وَلَا تُلۡقُواْ بِأَيۡدِيكُمۡ إِلَى ٱلتَّهۡلُكَةِ وَأَحۡسِنُوٓاْۚ إِنَّ ٱللَّهَ يُحِبُّ ٱلۡمُحۡسِنِينَ ﴾ [البقرة: ١٩٥]

“তোমরা তোমাদের নিজেদেরকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিওনা, আর মানুষের প্রতি অনুগ্রহ কর, নিশ্চয়ই আল্লাহ অনুগ্রহকারীদেরকে ভালবাসেন।” [সূরা বাকারা: ১৯৫]

তারপরও ইসলামী শরীয়তের মূল উদ্দেশ্য এবং প্রয়োজনীয় বিষয় হল পাঁচটি জিনিস- দ্বীন, নাফস, বংশ, জ্ঞান এবং সম্পদকে রক্ষা করা। এর কোনো একটি হারালে তা ধ্বংসের শামিল; যা থেকে বিরত থাকা অপরিহার্য। কারণ মানুষের মালিক একমাত্র আল্লাহ এবং সবকিছু তারই সৃষ্টি, কাজেই এ ইন্দ্রিয়গুলোর ব্যাপারে কোনো মানুষের এ রকম হস্তক্ষেপ করা উচিত নয় যাতে এর ক্ষতি হয় বা বিনাশ এবং ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেওয়া হয়। মানুষ তার নিজের উপর বা তার কোনো অঙ্গের উপর অথবা অন্য কারো উপর যে কোনো ক্ষতি সাধন করাকে ইসলামী শরীয়ত হারাম করেছে এবং যারা তা করবে তাদেরকে জাহান্নামে চিরস্থায়ী থাকার অঙ্গিকার দিয়েছে।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:

«وَمَنْ قَتَلَ نَفْسَهُ بِحَدِيدَةٍ عُذِّبَ بِهِ فِي نَارِ جَهَنَّمَ»

“যে ব্যক্তি কোনো লোহা দ্বারা আত্মহত্যা করবে, সে জাহান্নামে সর্বদা ঐ লোহা দ্বারা তার পেটে আঘাত করতে থাকবে।”[28]
এমনিভাবে তার নিজেকে, তার জীবনকে এবং তার স্বাস্থ্যকে রক্ষার জন্য এবং তার নিজের ও অন্যদের থেকে সকল কষ্ট এবং ধ্বংসকে দূরে রাখার জন্য যাবতীয় পদ্ধতি অবলম্বন করার জন্য ইসলাম নির্দেশ দিয়েছে। এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, যা কিছু মানুষের ক্ষতি ও ধ্বংস বয়ে আনে তা শরীয়তের দিক দিয়ে হারাম। আর যে কোনো পদ্ধতিতে মানুষের ক্ষতি সাধনে কেউ অংশ নিলে বা সহযোগিতা করলে সে আল্লাহর হারাম করা কাজে পতিত হবে। কেননা তিনি বলেন:﴿

مِنۡ أَجۡلِ ذَٰلِكَ كَتَبۡنَا عَلَىٰ بَنِيٓ إِسۡرَٰٓءِيلَ أَنَّهُۥ مَن قَتَلَ نَفۡسَۢا بِغَيۡرِ نَفۡسٍ أَوۡ فَسَادٖ فِي ٱلۡأَرۡضِ فَكَأَنَّمَا قَتَلَ ٱلنَّاسَ جَمِيعٗا ﴾ [المائ‍دة: ٣٢]

“এ কারণেই আমি বনী ইসরাঈলের প্রতি লিখে দিয়েছি যে, যে কেউ প্রাণের বদলে প্রাণ বা পৃথিবীতে ফাসাদ সৃষ্টি করা ব্যতীত কাউকে হত্যা করে সে যেন সকল মানুষকেই হত্যা করে।” [সূরা মায়েদা: ৩২]

আর প্রশ্নের ব্যাপারে বলা যায় যে, ধূমপান শরীয়তের মাপকাটিতে সার্বিকভাবেই হারাম, কারণ এতে ধূমপায়ী ও পার্শ্ববর্তী লোকদের ক্ষতি হয়। বরং ইহা হারাম করার হুকুমটা মদের হারামের চেয়ে কঠোর। কেননা, মদ শুধু মদ্যপায়ীকেই ক্ষতি করে, আর ধূমপান করা ধূমপায়ী এবং অন্যকে তাদের অজান্তে ক্ষতি করা হয় যা বৈজ্ঞানিকদের মতে সাব্যস্ত রয়েছে। যদি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হাদীস মদ্যপায়ী, তা বিক্রেতা, বহনকারী, প্রস্তুতকারক, যার জন্য প্রস্তুত করা হয় এবং যার জন্য বহন করা হয় তাদের সকলের উপর লা‘নত করে তবে ধূমপায়ীও এর মধ্যে শামিল; কারণ ধূমপানে বিরাট ক্ষতি হয়। আর যদি ধূমপান শরীয়তের দৃষ্টিতে হারাম হয় তবে এর ব্যবসায়ী, প্রস্তুতকারক, বিক্রেতা এবং ক্রেতার যাবতীয় কাজ কর্মও হারাম। এর দ্বারা তাদের পাওয়া লভ্যাংশ ও উপার্জনের টাকা হারাম, তা সদকা করা বা কল্যাণকর কোনো কাজে দান করা ঠিক হবে না, কেননা আল্লাহ পবিত্র, তিনি পবিত্রকেই ভালবাসেন।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«أَيُّهَا النَّاسُ، إِنَّ اللهَ طَيِّبٌ لَا يَقْبَلُ إِلَّا طَيِّبًا، وَإِنَّ اللهَ أَمَرَ الْمُؤْمِنِينَ بِمَا أَمَرَ بِهِ الْمُرْسَلِينَ، فَقَالَ: {يَا أَيُّهَا الرُّسُلُ كُلُوا مِنَ الطَّيِّبَاتِ وَاعْمَلُوا صَالِحًا، إِنِّي بِمَا تَعْمَلُونَ عَلِيمٌ} [المؤمنون: 51] وَقَالَ: {يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُلُوا مِنْ طَيِّبَاتِ مَا رَزَقْنَاكُمْ} [البقرة: 172] ثُمَّ ذَكَرَ الرَّجُلَ يُطِيلُ السَّفَرَ أَشْعَثَ أَغْبَرَ، يَمُدُّ يَدَيْهِ إِلَى السَّمَاءِ، يَا رَبِّ، يَا رَبِّ، وَمَطْعَمُهُ حَرَامٌ، وَمَشْرَبُهُ حَرَامٌ، وَمَلْبَسُهُ حَرَامٌ، وَغُذِيَ بِالْحَرَامِ، فَأَنَّى يُسْتَجَابُ لِذَلِكَ؟»

‘হে লোকসকল! নিশ্চয় আল্লাহ পবিত্র, তিনি পবিত্র ব্যতীত আর কিছু গ্রহণ করেন না, নিশ্চয় আল্লাহ মুমিনদেরকে সে জিনিসের নির্দেশই প্রদান করেছেন যার নির্দেশ তিনি রাসূলদেরকে দিয়েছেন, তিনি রাসূলদের বলেছেন,

﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلرُّسُلُ كُلُواْ مِنَ ٱلطَّيِّبَٰتِ وَٱعۡمَلُواْ صَٰلِحًاۖ ﴾ [المؤمنون: ٥١]

“হে রাসূলগণ, আপনারা ভাল পবিত্র খাবার আহার করুন এবং সৎকর্ম সম্পাদন করুন।” [সূরা মুমিনুন: ৫১]
তিনি আরও বলেন:

﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ كُلُواْ مِن طَيِّبَٰتِ مَا رَزَقۡنَٰكُمۡ ﴾ [البقرة: ١٧٢]

“হে মুমিনগণ, তোমাদেরকে আমি যে পবিত্র খাবার দিয়েছি তাই তোমরা আহার কর।” [সূরা বাকারা: ১৭২]
এরপর তিনি বললেন: ‘কোনো ব্যক্তির দীর্ঘ ভ্রমণ, এলোমেলো কেশ নিয়ে আকাশের দিকে দু’হাত বাড়িয়ে প্রার্থনা করে: হে আল্লাহ! হে আল্লাহ! অথচ তার আহার হারাম, পানীয় হারাম, পোশাক পরিচ্ছেদ হারাম, শরীর গঠন হয়েছে হারাম দিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: “তাহলে কীভাবে তার দো‘আ কবুল হবে?”[29]

যদি সে এই টাকা দিয়ে ফরয হজ্জ করে তবে তার ফরয হজ্জ আদায় হয়ে যাবে কিন্তু এর কোনো সাওয়াব বা পূণ্য পাবে না, কারণ সে হারাম টাকা দিয়ে হজ্জ করেছে; যার মধ্যে কোনো ভাল এবং সাওয়াব নেই।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«وَإِذَا خَرَجَ بِالنَّفَقَةِ الْخَبِيثَةِ، فَوَضَعَ رِجْلَهُ فِي الْغَرْزِ، فَنَادَى: لَبَّيْكَ، نَادَاهُ مُنَادٍ مِنَ السَّمَاءِ: لَا لَبَّيْكَ وَلَا سَعْدَيْكَ، زَادُكَ حَرَامٌ وَنَفَقَتُكَ حَرَامٌ، وَحَجُّكَ غَيْرُ مَبْرُورٍ»

‘যখন কোনো ব্যক্তি অপবিত্র মাল দ্বারা হজ্জের জন্য বের হয়ে তার পা বাহনে রেখে লাব্বাইক বলে তাকবীর দেয়; তখন আকাশ থেকে আহ্বানকারী বলতে থাকেন: কোনো লাব্বাইক নয় এবং তোমাকে স্বাগতও নয়, তোমার আহার হারাম, তোমার মাল হারাম এবং তোমার হজ্জ তোমার উপর প্রত্যাখ্যাত[30]।”[31]

প্রশ্ন/ তামাক কোম্পানীর শেয়ার এবং এর মত আরও যা আছে তা ক্রয় করা হারাম না হালাল? তা ক্রয় করা থেকে বিরত থাকা কি ওয়াজিব?
উত্তর: তামাক কোম্পানীর শেয়ারের লেনদেন ও ব্যবসা করা শরীয়তের দৃষ্টিতে জায়েয নেই এবং এর লেনদেন করা কোনো মুসলিমেরও উচিত নয়। কারণ এ কোম্পানীর কার্যকলাপ হলো তামাক তৈরী, তা বিক্রি এবং এর ব্যবসা করা। আর মানুষের জন্য তামাকের এমন ক্ষতি নিশ্চিত হয়েছে যা তাকে বা যে কোনো অঙ্গকে ধ্বংস করে ফেলতে পারে এবং মালকে ধ্বংস করে দেয়। আর তা সকল বিষেশজ্ঞ ডাক্তার মুসলিম হোক বা অমুসলিম হোক তাদের এবং আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষ থেকে তা নিশ্চিত করা হয়েছে। ইসলামী শরীয়তের আলেমদের ঐক্যমতে প্রতিটি ক্ষতিকর জিনিস হারাম এবং নিষিদ্ধ। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:﴿

وَلَا تُلۡقُواْ بِأَيۡدِيكُمۡ إِلَى ٱلتَّهۡلُكَةِ ﴾ [البقرة: ١٩٥]

“তোমরা তোমাদের নিজেদেরকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিওনা।” [সূরা বাকারা: ১৯৫]

তিনি আরও বলেন:

﴿ وَلَا تَقۡتُلُوٓاْ أَنفُسَكُمۡۚ إِنَّ ٱللَّهَ كَانَ بِكُمۡ رَحِيمٗا ﴾ [النساء: ٢٩]

“তোমরা নিজেদেরকে হত্যা করো না, নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের প্রতি অত্যন্ত অনুগ্রহশীল” [সূরা নিসা: ২৯]

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “নিজের কোনো অনিষ্টতা বা ক্ষতি এবং অন্য কারো ক্ষতি করা যাবে না”

তাছাড়া অনুসন্ধান ও বাস্তবতার প্রেক্ষিতে প্রমাণিত যে, তামাক তথা টোবাকো বা বিড়ি সিগারেট মানুষের জন্য মদ এবং অন্যান্য নেশা জাতীয় জিনিস থেকে অধিক ক্ষতিকর, যা ইসলামে ইজমা‘ এবং নিষেধাবলী দ্বারা নিশ্চিত হারাম করা হয়েছে, তামাক ক্ষতিকর হওয়ায় মদের উপর কিয়াস বা ভিত্তি করে তা হারাম করা হয়েছে, তার উপর একে হারাম করার উপর প্রমাণবহ সাধারণ প্রমাণাদি তো রয়েছেই, অনুরূপভাবে এর সাথে সম্পৃক্ত প্রয়োজনীয় বিষয়াদি তো আছেই, যা পূর্বে উল্লেখ করেছি। মিসরীয় দারুল ইফতা থেকে ধূমপান, তামাক ও এর মত অন্যান্য জিনিস হারাম হওয়ার ব্যাপারে সরকারী শর‘য়ী ফাতাওয়াও প্রকাশিত হয়েছে, কারণ তা মানুষ এবং সম্পদ বিধ্বংসী। তাছাড়া যেহেতু শরীয়তের দৃষ্টিতে কোনো কাজের মাধ্যমগুলোও তার উদ্দেশ্যের হুকুম গ্রহণ করে সেহেতু হারামের দিকে বয়ে নিয়ে যাওয়া পদ্ধতিও হারাম এবং তামাক উৎপাদনকারী কোম্পানীও টাকা উপার্জনের একটি হারাম পদ্ধতি। কেননা তা তামাক উৎপন্ন করে যা ব্যবহারের ফলে মানুষ এবং তাদের সম্পদের নিশ্চিত ক্ষতি সাধন হয়।

অতএব, এর শেয়ার ক্রয়, বণ্ড ক্রয়, তা উৎপন্ন এবং বিক্রি করা হারাম, এদের সাথে লেনদেন করা ঠিক হবে না, বরং তা ক্রয় বিক্রয় থেকে বিরত থাকা ফরয।’[32]

৫. ব্যবসার অন্যান্য জিনিস থেকে তামাক জাতীয় জিনিস পৃথক করা:

প্রশ্ন/ এ প্রশ্নটি করা হয়েছিল ফাতাওয়ার স্থায়ী কমিটিকে: আমি বাজারে প্রসিদ্ধ একজন ব্যবসায়ী, প্রায় বিশ বছর যাবৎ খাবার জাতীয় জিনিস, কসমেটিক্স এবং বিভিন্ন প্রকার তামাক জাতীয় জিনিস পাইকারী বিক্রি করি, আমার নিকট প্রায় পঁচিশ রকম তামাক জাতীয় জিনিস রয়েছে। এমনিভাবে আমি বহির্দেশের একটি কোম্পানী থেকে তা আমদানী করে থাকি, তদ্রুপ সৌদী আরবের রিয়াদ, জিদ্দা এবং দাম্মামে কয়েকটি এজেন্ট রয়েছে; সেখান থেকে ছোট ছোট দোকানে, সুপার মার্কেটে, মনিহারী দোকানে কার্টুন এবং প্যাকেটে সাপ্লাই দিয়ে থাকি। আপনাকে জানাতে চাই যে, সর্ব প্রকার তামাক জাতীয় জিনিস আমি বিরাট অংকে ক্রয় করে থাকি, যার পরিমাণ মাসিক প্রায় পঞ্চাশ মিলিয়ন এবং বাৎসরিক প্রায় ছয়শত পঞ্চাশ মিলিয়ন রিয়াল।

আমার প্রশ্ন হচ্ছে: তামাক হারাম না হালাল? যদি হারাম হয় তবে তা অন্যান্য খাবার জাতীয় জিনিসের সাথে মিশ্রিত করলে আমার জন্য জায়েয হবে কি?
যদি তা অন্যান্য জিনিস থেকে আলাদা কোনো শাখা করে নেই তাহলে জায়েয হবে কি না? উল্লেখ্য যে, আমি চেষ্টা করেছি তা ছেড়ে দেওয়ার জন্য, কিন্তু দেখলাম যে এতে বাজার প্রায় অর্ধেক বন্ধ হয়ে যায়, কিছু কিছু শাখা পুরো বন্ধ হয়ে যায়।
উত্তর: ফাতাওয়া কমিটি পর্যালোচনার পর উত্তর দিল যে, তামাক এবং এর সর্বপ্রকার উপকরণ গ্রহণ করা ও ব্যবসা করা হারাম, কারণ এতে দ্বীনি, শারীরিক এবং আর্থিক ক্ষতি রয়েছে। অতএব, আপনাদের উচিত হলো অতীতের কর্মের জন্য আল্লাহর নিকট তাওবা করা, ভবিষ্যতে এর কোনো ব্যবসা না করার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করা। এতে অতীত ভাল হওয়ার সাথে সাথে ভালো বিনিময় এবং মহা পুরস্কারের সুসংবাদ গ্রহণ করুন।
আর অতীতে যা ঘটেছে আশা করি আল্লাহ ক্ষমা করে দিবেন, কারণ আপনারা তা করেছেন হারাম সন্দেহ করে ।
আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:

﴿وَأَحَلَّ ٱللَّهُ ٱلۡبَيۡعَ وَحَرَّمَ ٱلرِّبَوٰاْۚ فَمَن جَآءَهُۥ مَوۡعِظَةٞ مِّن رَّبِّهِۦ فَٱنتَهَىٰ فَلَهُۥ مَا سَلَفَ وَأَمۡرُهُۥٓ إِلَى ٱللَّهِۖ وَمَنۡ عَادَ فَأُوْلَٰٓئِكَ أَصۡحَٰبُ ٱلنَّارِۖ هُمۡ فِيهَا خَٰلِدُونَ﴾ [البقرة: ٢٧٥]

“এবং আল্লাহ তোমাদের জন্য ব্যবসাকে হালাল করেছেন এবং সূদকে হারাম করেছেন, অতঃপর যার নিকট তার প্রভুর পক্ষ থেকে নসিহত আসার পর তা থেকে বিরত থেকেছে, পূর্বে যা হয়ে গিয়েছে তা তার এবং তার ব্যাপার আল্লাহর নিকট থাকবে, আর যারা পূনরায় সূদ নেয় তারাই অগ্নিবাসী যাবে, তারা সেখানে চিরকাল থাকবে।” [সূরা বাকারা: ২৭৫]। আর আপনার নিকট বর্তমানে যেগুলো রয়েছে সেগুলো ব্যবহার বা বিক্রি অথবা কাউকে দান না করে নষ্ট করে ফেলা ওয়াজিব।
আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করছি তিনি যেন এর দ্বারা আপনাদের উপকৃত করেন, আমাদের ও আপনাদের সকলকে তাঁর পছন্দনীয় কাজ করার তাওফীক দান করেন এবং সকলকে যেন দ্বীনের জ্ঞান শিক্ষার সুযোগ দান করে এর উপর দৃঢ় রাখেন এবং তাঁর সন্তুষ্টিকে অন্যান্য জিনিসের উপর প্রাধান্য দেই, নিশ্চয়ই তিনি দাতা ও মহিয়ান।’[33]

৬- তামাক বিক্রির উপার্জন দ্বারা সদকা, হজ্জ এবং ভাল কাজ করার হুকুম কী?

প্রশ্ন/ এ প্রশ্নটি করা হয়েছিল ফাতাওয়ার স্থায়ী কমিটিকে: তামাক ও মাদকদ্রব্য এবং ততসম জিনিসের ব্যবসা করার হুকুম কি? এর মূল্য ও লভ্যাংশ দ্বারা সদকা, হজ্জ এবং ভালো কাজ করার হুকুম কি?
উত্তর: তামাক, মাদকদ্রব্য এবং সর্ব প্রকার হারাম জিনিসের ব্যবসা করা জায়েয নেই, কারণ তা অপবিত্র। এতে শারীরিক, আত্মিক এবং আর্থিক ক্ষতি রয়েছে। কোনো ব্যক্তি সদকা বা হজ্জ অথবা ভাল কাজে ব্যয় করতে চাইলে সে যেন ভাল পবিত্র মাল থেকে সদকা বা হজ্জ অথবা ভাল কাজে ব্যয় করে।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ أَنفِقُواْ مِن طَيِّبَٰتِ مَا كَسَبۡتُمۡ وَمِمَّآ أَخۡرَجۡنَا لَكُم مِّنَ ٱلۡأَرۡضِۖ وَلَا تَيَمَّمُواْ ٱلۡخَبِيثَ مِنۡهُ تُنفِقُونَ وَلَسۡتُم بِ‍َٔاخِذِيهِ إِلَّآ أَن تُغۡمِضُواْ فِيهِۚ ﴾ [البقرة: ٢٦٧]

“হে মুমিনগণ, তোমরা তোমাদের উপার্জন থেকে এবং আমি তোমাদের জন্যে ভূমি থেকে যা উৎপন্ন করেছি তা থেকে তোমরা উৎকৃষ্ট বস্তু ব্যয় কর এবং নিকৃষ্ট বস্তু ব্যয় করার মনস্থ করো না। কেননা, তোমরা তা কখনো গ্রহণ করবে না কিন্তু যদি তোমরা চোখ বন্ধ করে নিয়ে নাও।” [সূরা বাকারা: ২৬৭]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«إِنَّ اللهَ طَيِّبٌ لَا يَقْبَلُ إِلَّا طَيِّبًا»

‘নিশ্চয় আল্লাহ পবিত্র, তিনি পবিত্র ব্যতীত আর কিছু গ্রহণ করেন না’[34]।[35]

৭- তামাক বিক্রেতা ও তা পানকারীকে সহযোগিতা করা

প্রশ্ন/ আল্লামা ইবনে উসাইমীন রহমাতুল্লাহ আলাইহিকে এ প্রশ্নটি করা হয়েছিল: ‘কোনো কোনো ব্যক্তি কখনও কখনও ধূমপায়ীর নিকট গিয়ে তাকে তামাক তথা বিড়ি-সিগারেট ইত্যাদি ক্রয়ের জন্য টাকা দিয়ে থাকে, আর বলে যে, এটিও আল্লাহর পথে দাওয়াতী কাজ, এটি কি সঠিক?
উত্তর: এটি ঠিক নয়, অন্যায়কে প্রশ্রয় দেওয়াটাও অন্যায়। সিগারেট কেনার জন্য তাকে টাকা প্রদান করার মাধ্যমে লোকটির দ্বীনের প্রতি আকর্ষণ বাড়বে এটি ঠিক নয়, তাকে দ্বীনের প্রতি আকর্ষণ সৃষ্টির মাধ্যম হল: তাকে সদুপদেশ দেওয়া এবং গুনাহ ও অপরাধের যাবতীয় ক্ষতি তুলে ধরে তা থেকে সতর্ক করে দেওয়া, সেটি ধূমপান হোক বা অন্য কিছু হোক। সেই সাথে তাকে দিক নির্দেশনামূলক ক্যাসেট বা ছোট ছোট বই পড়তে দেওয়া। এটিই হচ্ছে সত্যিকারের মন আকর্ষণ।
নিজেই অপরাধ করা অথবা তার জন্য সিগারেট কিনা বা তাকে সিগারেট কিনার জন্য টাকা দেওয়া ঠিক নয়।[36]

প্রশ্ন/ এ প্রশ্নটি করা হয়েছিল ফাতাওয়ার স্থায়ী কমিটিকে: আমি ব্যতীত বাবার আর কোনো ছেলে নেই, তিনি আমাকে সিগারেট আনতে বলেন, আমি না আনলে আমার উপর রাগ করেন এবং মনে কষ্ট পান অথচ আমি তা আনতে অপছন্দ করি, কারণ আমি জানি যে তা হারাম। এমতাবস্থায় আমি কি করব?
উত্তর: তামাক অপবিত্র হারাম, কাজেই তা পান করা হারাম এবং অন্যায় কাজ। পানকারীর জন্য এনে দেওয়া তা পান করার একটি মাধ্যম, আর যে কোনো মাধ্যম উদ্দেশ্যের হুকুম গ্রহণ করে। যদি উদ্দেশ্য হারাম হয় তবে তা সংগ্রহ করার মাধ্যমও হারাম এবং যাতে আল্লাহর আনুগত্য হয় সে ক্ষেত্রে এবং সাধারণ ক্ষেত্রে মাতা-পিতার আনুগত্য করা শরীয়তের বিধান। কিন্তু আল্লাহর অবাধ্যতায় তাদের আনুগত্য করা জায়েয নেই।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«لَا طَاعَةَ فِي مَعْصِيَةِ اللَّهِ، إِنَّمَا الطَّاعَةُ فِي الْمَعْرُوفِ»

“আল্লাহর অবাধ্যতায় কারো কোনো আনুগত্য নেই বরং আনুগত্য হচ্ছে ভাল কাজে”।[37]

তিনি আরও বলেছেন:

«لَا طَاعَةَ لِمَخْلُوقٍ فِي مَعْصِيةِ الخَالِقِ»

“স্রষ্টার অবাধ্যতায় সৃষ্টির কোনো আনুগত্য নেই”।[38]

নিশ্চয়ই আল্লাহ তাওফীক দাতা। হে আল্লাহ, আমাদের নবী মুহাম্মদ এর উপর, তাঁর পরিবার-পরিজন এবং সাহাবীগণের উপর দুরুদ ও সালাম পেশ করুন।[39]

প্রশ্ন/ এ প্রশ্নটি করা হয়েছিল মিসরীয় মুফতি শাইখ নাসর ফরিদ ওয়াসেলকে: সকল মিডিয়াতে বিভিন্ন প্রকার ধূমপানের মাধ্যমে যে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয় তা হালাল না হারাম?
উত্তর: পূর্বে উল্লেখ করেছি যে, ধূমপান হারাম এবং এর সাথে সম্পৃক্ত সকল জিনিস হারাম। মিডিয়াতে এর যাবতীয় বিজ্ঞাপন শরীয়তের দৃষ্টিতে হারাম, কারণ তা হচ্ছে অবৈধ কাজে সহযোগিতা করা, আর অবৈধ কাজে সহযোগিতা করাও অবৈধ কাজ।[40]

প্রশ্ন/ এ প্রশ্নটি করা হয়েছিল আল্লামা ইবনে উসাইমীন রহমাতুল্লাহ আলাইহকে: যে ব্যক্তি সিগারেট, গানের ক্যাসেট, অশ্লীল ভিডিও ক্যাসেট বিক্রি করে এবং সূদী ব্যাংকে লেনদেন করে থাকে; এমন ব্যক্তিকে দোকান ভাড়া দেওয়ার হুকুম কি?
উত্তর: এসব ক্ষেত্রে দোকান ভাড়া দেওয়ার হুকুম জানা যায় আল্লাহর নিম্নাক্ত বাণী থেকে। তা হচ্ছে,

﴿وَتَعَاوَنُواْ عَلَى ٱلۡبِرِّ وَٱلتَّقۡوَىٰۖ وَلَا تَعَاوَنُواْ عَلَى ٱلۡإِثۡمِ وَٱلۡعُدۡوَٰنِۚ ﴾ [المائ‍دة: ٢]

“তোমরা পরস্পরে ভাল এবং তাকওয়াপূর্ণ কাজে সহযোগিতা কর পক্ষান্তরে পাপ এবং আল্লাহদ্রোহী কাজে সহযোগিতা করো না।” [সূরা মায়েদা: ২]। এ থেকে প্রতীয়মান হয় যে, প্রশ্নে উল্লেখিত কাজের জন্য দোকান ভাড়া দেওয়া হারাম, কারণ তা পাপ এবং আল্লাহদ্রোহী কাজে সহযোগিতা করার অন্তর্ভুক্ত।’[41]

প্রশ্ন/ জনাব আপনাকে বলতে চাই যে, আমরা বিল্ডিং কনষ্ট্রাকশন, পরিস্কার এবং মেরামত কোম্পানীর লোক, এ ক্ষেত্রে কখনো কখনো নিম্নোক্ত দোকানে কাজ করতে হয় যেমন: সেলুন যেখানে দাড়ি শেভ করা হয়, ব্যাংক, ষ্টুডিও, গানের ক্যাসেটের দোকান, ড্রাগ ও হুক্কা বিক্রির দোকান এবং সাধারণ চা কফির দোকান। আল্লাহ আপনাকে উত্তম বদলা দিন এবং আপনাদের জ্ঞান দ্বারা ইসলাম ও মুসলিমদেরকে উপকৃত করুন। আর আল্লাহ নবী মুহাম্মদ এর উপর সালাত পেশ করুন।
উত্তর: আপনি যা বলেছেন তাই যদি হয় তবে উল্লেখিত কোম্পানীর পক্ষে বিল্ডিং কনষ্ট্রাকশন, পরিস্কার মেরামত এবং প্রশ্নে উল্লেখিত দোকানে তৈরীর জন্য কনস্ট্রাকশন চুক্তিতে প্রবেশ করা উচিত নয়, কেননা তা আল্লাহ কর্তৃক হারাম করা জিনিসে পতিত হওয়ার একটি মাধ্যম। আর শরীয়তের একটি নীতি হলো (মাধ্যম বা পদ্ধতি মূল উদ্দেশ্যের হুকুম গ্রহণ করে)।
নিশ্চয়ই আল্লাহ তাওফীক দাতা। হে আল্লাহ, আমাদের নবী মুহাম্মদ এর উপর, তাঁর পরিবার-পরিজন এবং সাহাবীগণের উপর দুরুদ ও সালাম পেশ করুন।[42]

প্রশ্ন/ আমি একজন দ্বীন পালনকারিনী মুসলিম নারী, আমার স্বামী হুক্কা পান করে, মাঝে মধ্যে আমাকে তা ঠিক করে আনতে বলেন, আমি যদি তা করি তাহলে কি আমি পাপী হব?
উত্তর: হুক্কা পান করা হারাম, আপনি যদি তা ঠিক করে দেন তাহলে আপনি পাপী হবেন, আল্লাহ বলেন: “তোমরা পরস্পরে পাপ ও আল্লাহ দ্রোহী কাজে সহযোগিতা করো না”। [সূরা মায়েদা: ২]
নিশ্চয়ই আল্লাহ তাওফীক দাতা। হে আল্লাহ, আমাদের নবী মুহাম্মদ এর উপর, তাঁর পরিবার-পরিজন এবং সাহাবীগণের উপর দুরুদ ও সালাম পেশ করুন।[43]

প্রশ্ন/ আমার মা ধূমপান করেন, আমি তা ক্রয় করে দেই, আমি মাকে তা ত্যাগ করার জন্য অনেক বলেছি এতে মা রাগান্বিত হন, এর হুকুম কি?
উত্তর: ধূমপান হারাম, আর তা পান করায় সহযোগিতা করাও হারাম।
নিশ্চয়ই আল্লাহ তাওফীক দাতা। হে আল্লাহ, আমাদের নবী মুহাম্মদ এর উপর, তাঁর পরিবার-পরিজন এবং সাহাবীগণের উপর দুরুদ ও সালাম পেশ করুন।[44]

প্রশ্ন/ এ প্রশ্নটি করা হয়েছিল আল্লামা ইবনে উসাইমীন রহমাতুল্লাহ আলাইহকে: ধূমপান একটি ঘৃণিত বদভ্যাস এবং তা অপবিত্র। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿وَيُحِلُّ لَهُمُ ٱلطَّيِّبَٰتِ وَيُحَرِّمُ عَلَيۡهِمُ ٱلۡخَبَٰٓئِثَ ﴾ [الاعراف: ١٥٧]
“তাদের জন্য ভাল পবিত্র জিনিস হালাল করা হয়েছে এবং তাদের উপর অপবিত্র জিনিসকে হারাম করা হয়েছে।” [সূরা আ‘রাফ: ১৫৭]। তাছাড়াও এটি বিভিন্ন রোগের কারণ। তারপরও আমরা পত্র পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেখতে পাই কখনো এ থেকে সতর্ক করছে আবার কখনো এর উপকারিতা বর্ণনা করছে, এ মিথ্যা সংশয়ের হুকুম কি?
উত্তর: প্রশ্নকারী যা বলেছে যে, তা হারাম। এটাই সঠিক এবং হক্ক, কেননা তা পান করায় আর্থিক, শারিরীক এবং সামাজিক ক্ষতি হয়।
আর পত্র পত্রিকায় এর যে ক্ষতির দিক তুলে ধরা হয় তা এবং এর প্যাকেটের গায়ে যে সতর্কতা দেওয়া হয় তাতে তারা প্রশংসিত হবে, কেননা এতে পাপ কাজ ও আল্লাহদ্রোহী কাজ ত্যাগ করার জন্য সহযোগিতা করা হয়। কিন্তু কোম্পানী ও বিক্রেতারা তা পানে উৎসাহমূলক যে বিজ্ঞাপন দিয়ে থাকে তাতে পাপ ও আল্লাহদ্রোহী কাজে সহযোগিতা করা হয় এবং তা হারাম, কোনোক্রমেই তা প্রচার করা যাবে না।[45]

প্রশ্ন/ এ প্রশ্নটি করা হয়েছিল মিসরীয় মুফতি শাইখ নাসর ফরিদ ওয়াসেলকে: তামাক ব্যবসায়ী, প্রচারকারী এবং সাপ্লাইদাতা সম্পর্কে, ধূমপান থেকে বিরত থাকার জন্য আপনার দৃষ্টিতে ভাল পদ্ধতি কি?
উত্তর: পূর্বে উল্লেখ করেছি যে, তামাক, এর প্রচারণা এবং সাপ্লাই করা হারাম এবং এর সাথে যা সম্পৃক্ত রয়েছে তাও শরীয়তের দৃষ্টিতে হারাম, কারণ এর দ্বারা ধূমপায়ী এবং তার সাথে উঠা বসা অন্যান্যদের ক্ষতি সাধন হয়। তারপরও এতে অপব্যয় রয়েছে যা শরীয়তে নিষিদ্ধ।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ وَكُلُواْ وَٱشۡرَبُواْ وَلَا تُسۡرِفُوٓاْۚ إِنَّهُۥ لَا يُحِبُّ ٱلۡمُسۡرِفِينَ ﴾ [الاعراف: ٣١]

“তোমরা খাও এবং পান কর, কিন্তু অপব্যয় করো না, নিশ্চয়ই আল্লাহ অপব্যয়কারীদেরকে পছন্দ করেন না।” [সূরা আ‘রাফ: ৩১]

তিনি আরও বলেন:
﴿ وَلَا تُبَذِّرۡ تَبۡذِيرًا ٢٦ إِنَّ ٱلۡمُبَذِّرِينَ كَانُوٓاْ إِخۡوَٰنَ ٱلشَّيَٰطِينِۖ ﴾ [الاسراء: ٢٦، ٢٧]

“তোমরা কিছুতেই অপব্যয় করো না, নিশ্চয়ই অপব্যয়কারীগণ শয়তানের ভাই।” [সূরা ইসরা: ২৬-২৭]
এজন্যে তামাক তৈরী, ক্রয় বিক্রয়, বিজ্ঞাপন এবং প্রচারের ক্ষেত্রে যার লেনদেন রয়েছে সে পাপী হবে, তার উপর আল্লাহর, ফেরেশ্তামণ্ডলীর এবং সকল মানুষের অভিশাপ বর্ষণ হবে।

এ থেকে বিরত থাকার উত্তম পদ্ধতি হলো: এ হারাম ব্যবসা মূলোৎপাটন করে কৌশলে সদোপদেশ দ্বারা মানুষের মন জাগিয়ে তুলতে হবে এবং এ ব্যবসার উৎসকে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য শক্তভাবে পর্যেবেক্ষণ করতে হবে। সেই সাথে নতুন প্রজন্মকে ইসলামী সুন্দর নীতিমালার উপর গড়ে তুলতে হবে। প্রচার মাধ্যম, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক এবং সামাজিক দিকসহ অন্যান্য দিক গুলোকে এ ভয়াবহ বিপদের মোকাবেলা করার জন্য আন্তরিকতা এবং আমানতের সাথে সহযোগিতা করতে হবে। তারপর ছেলে-মেয়েদের জন্য বাবা-মা’দের উত্তম নমুনা হতে হবে যেন তা আশান্বিত ফলাফল বয়ে আনে, আর তা হচ্ছে ধূমপান ত্যাগ করা।[46]

৮- ধূমপান থেকে নিষেধ করার সরকারী নির্দেশনা অমান্য করার বিধান কী?

প্রশ্ন/ এ প্রশ্নটি করা হয়েছিল আল্লামা ইবনে বায রহমাতুল্লাহ আলাইহিকে: সরকার হুকুম জারি করেছে যে, সরকারী প্রতিষ্ঠানগুলোতে ধূমপান নিষিদ্ধ, কোনো কোনো কর্মকর্তা তা মেনে চলেন এবং তা বাস্তবায়নে আগ্রহী, আবার কেউ কেউ তা মানেন না। যারা তা মানেন না তারা কি সরকারের জারি করা নির্দেশের আমানতের খিয়ানতকারী হিসাবে গণ্য হবে?
উত্তর: যারা নির্দেশের অমান্য করছে তারা আমানতের খিয়ানতকারী হিসাবে গণ্য হবে এবং তারা দু’টি অন্যায়ে পতিত হবে।
প্রথমটি: ধূমপান করা, যা হারাম এবং ইসলাম গর্হিত কাজ, কারণ এতে মারাত্মক ক্ষতি রয়েছে, কখনো কখনো তা নেশায় পরিণত হয়।
দ্বিতীয়টি: এ অপরাধ ত্যাগ করা ও কর্মকর্তাদেরকে এ থেকে বিরত থাকার জন্য সরকারের নির্দেশের অবাধ্য হওয়া।

আল্লাহ বলেন:
﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ أَطِيعُواْ ٱللَّهَ وَأَطِيعُواْ ٱلرَّسُولَ وَأُوْلِي ٱلۡأَمۡرِ مِنكُمۡۖ ﴾ [النساء: ٥٩]

“হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর, আনুগত্য কর রাসূলের এবং তোমাদের মধ্যে যারা দায়িত্বশীল তাদের।” [সূরা নিসা: ৫৯]

অনুরূপভাবে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:

«من أطاعني فقد أطاع الله ومن عصاني فقد عصى الله ومن أطاع الأمير فقد أطاعني ومن عصى الأمير فقد عصاني»

“যে ব্যক্তি আমার আনুগত্য করল সে আল্লাহর আনুগত্য করল এবং যে ব্যক্তি আমার নাফরমানী করল সে আল্লাহর নাফরমানী করল, আর যে ব্যক্তি আমীরের আনুগত্য করল সে আমারই আনুগত্য করল, আর যে ব্যক্তি আমীরের নাফরমানী করল সে আমার নাফরমানী করল।”[47]

এর উদ্দেশ্য হলো ভাল কাজে আমীরের আনুগত্য করা, যেমন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “আনুগত্য শুধু ভালো কাজে।” আর আল্লাহই তাওফীকদাতা [48]

৯- ধূমপায়ীদেরকে উপদেশ দেওয়া এবং তাদের প্রতিরোধ করা

প্রশ্ন/ এ প্রশ্নটি করা হয়েছে শাইখ সলেহ আল ফাউযানকে: আমি এবং আমার এক বন্ধু একই অফিসে চাকুরী করি, বন্ধু নামাযে যাওয়ার সময় সিগারেটের প্যাকেট অফিসের ড্রয়ারে রেখে যায়, আমি সেটা নিয়ে নষ্ট করে ফেলি, কারণ আমি জানি তা হারাম। প্রশ্ন হচ্ছে: আমার এ কাজটি কি সঠিক হচ্ছে? উল্লেখ্য যে, আমার বন্ধু আমার নিকট থেকে এর মূল্য ফেরত চাচ্ছে।
উত্তর: এটি কোনো সমাধান নয়, আপনি সিগারেট নিয়ে নষ্ট করে ফেললে সে আবার তা ক্রয় করবে। সমাধান হচ্ছে: আপনি তাকে নসীহত করুন, আল্লাহর কথা স্মরণ করিয়ে দিন হয়তো আপনার নসীহতে ধূমপান ত্যাগ করে ভাল হয়ে যেতে পারে।
আর আপনি যে তার সিগারেট নিয়ে যাবেন প্রথমত আপনি এর দায়িত্বশীল নন, এটি সরকারের দায়িত্ব, তারাই এগুলো নষ্ট করবেন। কিন্তু যে কাজে সাধারণ মানুষের জন্য হাত দ্বারা অন্যায় প্রতিহত করার ক্ষমতা নেই তারা শুধু মুখ দ্বারা নিষেধ করবে এবং তাদেরকে নসীহত করবে।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«مَنْ رَأَى مِنْكُمْ مُنْكَرًا فَلْيُغَيِّرْهُ بِيَدِهِ، فَإِنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَبِلِسَانِهِ، فَإِنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَبِقَلْبِهِ، وَذَلِكَ أَضْعَفُ الْإِيمَانِ»

“যে ব্যক্তি কোনো অন্যায় হতে দেখবে সে যেন তা হাত দ্বারা প্রতিহত করে, তা যদি সামর্থ না রাখে তবে মুখ দ্বারা, তাও যদি সামর্থ না রাখে তবে অন্তরে ঘৃনা করবে, আর এটাই দুর্বলতম ঈমান।”[49]

মানুষকে তিন শ্রেণীতে ভাগ করা হয়েছে, যারা হাত দ্বারা অন্যায় প্রতিহত করার ক্ষমতা রাখে তারা হাত দ্বারা প্রতিহত করবে, আর তারা হচ্ছে সরকার বা সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তি। যাদের কোনো ক্ষমতা নেই তারা মুখ দ্বারা নসীহত করবে অথবা এ কাজের দায়িত্বশীলদেরকে খবর দিয়ে জানাবে এটি হচ্ছে মুখ দ্বারা অন্যায় প্রতিহত করা। আর যারা হাত ও মুখ দ্বারা অন্যায়কে প্রতিহত করার ক্ষমতা না রাখে তারা অন্তর দ্বারা ঘৃণা করবে, অন্যায় এবং অন্যায়কারীর প্রতি বিদ্বেষী মনোভাব রাখবে সেই সাথে তাদের থেকে দূরে থাকবে।’[50]

প্রশ্ন/ এ প্রশ্নটি করা হয়েছিল আল্লামা ইবনে বায রহমাতুল্লাহ আলাইহিকে: আমার এক ঘনিষ্ঠ বন্ধু সবসময় ধূমপান করে, আমি তাকে বহু নসিহত করেছি কিন্তু সে শুনেনি, আর যদি কোনো ফাতাওয়া বা আলেমদের কোনো নসিহত এনে দেই তাহলে সে তা পড়ে না বরং সে বলে যে, আমি যদি এগুলো পড়ি তাহলে তো আমার উপর দলীল প্রমাণিত হয়ে যাবে, তখন তা না মানলে আমি পাপী হব। তার এ উক্তির পরিপেক্ষিতে আমাদের জন্য তার ব্যাপারে আপনার উপদেশ কি?
উত্তর: তার উচিত হলো নসিহত গ্রহণ করে ধূমপান ত্যাগ করা, কারণ তা হারাম। এতে দ্বীনি, শারীরিক এবং আর্থিক ক্ষতি রয়েছে। কখনো কখনো তা নেশাগ্রস্ত করে, কাজেই তার উচিত এগুলো ছেড়ে দিয়ে আল্লাহর নিকট তাওবা করা। ধূমপান এবং অন্যান্য জিনিস হারামের ব্যাপারে যাদের সন্দেহ রয়েছে তা পরিস্কার করার জন্য তাদের উচিত হলো কোনো আলেমকে জিজ্ঞাসা করা।

যেমন আল্লাহ বলেন:

﴿ فَسۡ‍َٔلُوٓاْ أَهۡلَ ٱلذِّكۡرِ إِن كُنتُمۡ لَا تَعۡلَمُونَ ﴾ [الانبياء: ٧]

“তোমরা যদি না জান তবে জ্ঞানীদেরকে জিজ্ঞেস কর।” [সূরা আম্বিয়া: ৭]। কোনো কথা বা কাজ হারাম ফাতাওয়া দেওয়ার ভয়ে কোনোক্রমেই প্রশ্ন করা থেকে বিরত থাকা ঠিক নয়; কেননা (উল্লেখিত) আয়াতে তা আল্লাহর নির্দেশের বিপরীত এবং জ্ঞান শিক্ষা ও দ্বীন সম্পর্কে জানা এবং এ থেকে বিরত থাকার সমালোচনা সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে যা সাব্যস্ত রয়েছে তার বিরোধী।’[51]

১০- তামাক কোম্পানী এবং কারখানাগুলো বন্ধ করার কথা বলার হুকুম কী?

প্রশ্ন/ এ প্রশ্নটি করা হয়েছিল মিসরীয় মুফতি শাইখ নাসর ফরিদ ওয়াসেলকে: তামাক কোম্পানী ও কারখানা ব্যক্তি মালিকানাধীন হোক বা নির্ভরযোগ্য কোনো সংস্থা হোক অন্য কোনো সংস্থা তা বন্ধের কথা বললে তা ঠিক হবে কি না, তাদের কথায় তা বন্ধ করা ওয়াজিব কি?

কোনো সংস্থা হুক্কা ও কফিখানা ইত্যাদি বন্ধের কথা বললে তা ঠিক হবে কি না? এ কোম্পানীগুলোকে ধূমপান বা তার মাধ্যমগুলো পরিবেশনের উপর নিষেধের পরও যদি তারা তা পরিবেশন করে তাহলে তা বন্ধ করা কি ওয়াজিব?
উত্তর: পূর্বেই উল্লেখ করেছি যে, ধূমপান হারাম, তা তৈরী করা, এর ব্যবসা করা এবং এতে কাজ করা হারাম। এ থেকে উপার্জিত টাকাও হারাম। প্রতিটি মুসলিমের উচিত হলো: যে ব্যক্তি এ ধরনের অন্যায় দেখবে সে হাদীসে বর্ণিত নিয়মানুসারে প্রতিবাদ করবে।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«مَنْ رَأَى مِنْكُمْ مُنْكَرًا فَلْيُغَيِّرْهُ بِيَدِهِ، فَإِنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَبِلِسَانِهِ، فَإِنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَبِقَلْبِهِ، وَذَلِكَ أَضْعَفُ الْإِيمَانِ»

“যে ব্যক্তি কোনো অন্যায় হতে দেখবে সে যেন তা হাত দ্বারা প্রতিহত করে, তা যদি সামর্থ না রাখে তবে মুখ দ্বারা, তাও যদি সামর্থ না রাখে তবে অন্তরে ঘৃণা করবে, আর এটাই দুর্বলতম ঈমান।”[52]

এর উপর ভিত্তি করে বলা যায়: যে ব্যক্তি অন্যায় প্রতিহত করতে চায় সে যেন শরীয়তসম্মত যে নিয়ম কানুন সরকার তৈরী রেখেছে তা মেনে চলে সঠিক ও সহীহ পদ্ধতি অবলম্বন করে; যেন কোনো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না হয়।

আল্লাহ বলেন:
﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ أَطِيعُواْ ٱللَّهَ وَأَطِيعُواْ ٱلرَّسُولَ وَأُوْلِي ٱلۡأَمۡرِ مِنكُمۡۖ﴾ [النساء: ٥٩]

“তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর, আনুগত্য কর রাসূলের এবং তোমাদের মধ্যে যারা দায়িত্বশীল তাদের।”[সূরা আন-নিসা: ৫৯][53]

১১- কারো আওতাধীন ধূমপায়ী কর্মচারীদের উপর নীরব থাকার হুকুম কী?

প্রশ্ন/ এ প্রশ্নটি করা হয়েছিল ফাতাওয়ার স্থায়ী কমিটিকে: আমার আওতাধীন কর্মচারীদের অধিকাংশই ধূমপান করে, তাদের কেউ কেউ আমার সামনে নামাযের ব্যাপারে অবহেলা করে, আমি জানি না তারা ঘরে নামায পড়ে কি না, তাদের ধূমপানের ব্যাপারে এবং নামাযের ব্যাপারে নীরব থাকায় আমার পাপ হবে কি? তাদের মাধ্যমে যে টাকা উপার্জন করব তা হালাল না হারাম?
উত্তর: এ সমস্ত কর্মচারীদের উপর নীরব থাকা জায়েয নেই, বরং ধূমপান এবং নামাযে অবহেলার ব্যাপারে তাদেরকে সতর্ক করা ফরয এবং তাদেরকে ভীতি প্রদর্শন করা দরকার এভাবে যে, তারা যদি এ থেকে সতর্ক না হয় তবে তাদের সাথে কৃত চুক্তি বাতিল করে কাজের পারিশ্রমিক দিয়ে দেওয়ার পর অতি সত্বর তাদেরকে দেশে পাঠিয়ে দেওয়া হবে যদি তারা বহির্বিশ্বের হয়। অন্যথায় এ অন্যায় প্রতিহত করার সামর্থ রাখার পর তাদের অন্যায়ের উপর নীরব থাকার ফলে সেও পাপী হবে।[54]

১২- ধূমপায়ীদের সাথে উঠা বসা

প্রশ্ন/ এ প্রশ্নটি শাইখ ডক্টর সালেহ ইবন ফাউযান আল ফাউযান (সৌদী আরবে ফাতাওয়ার স্থায়ী কমিটি এবং উলামা কমিটির সদস্য)কে করা হয়েছে: আমার প্রতিবেশীরা ধূমপান করে, কখনো কখনো তারা আমার বাসায় আসে, আমিও মাঝে মধ্যে তাদের বাসায় গিয়ে একই সাথে বসে গল্প করি, তারা ধূমপান করে, তাদের সাথে আমার উঠা বসার হুকুম কি?
উত্তর: ধূমপান হারাম এবং অন্যায়, কারণ তা অপবিত্র এবং ক্ষতিকর। ধূমপায়ীদের উপর ঘৃণা করা এবং তাদেরকে নসীহত করা ওয়াজিব, আর যদি তাদের সাথে উঠা বসা না করাতে তা ত্যাগ করার উপর উৎসাহ প্রদান করা হয় এবং তা থেকে বিরত থাকার সম্ভাবনা থাকে তবে তা ত্যাগ করা পর্যন্ত তাদের সাথে উঠা বসা করা যাবে না।

অপরাধীদের সংস্পর্শ থেকে যতই দূরে থাকা যায় ততই ভাল, কিন্তু যদি তাদের সাথে বসে নসীহত, উপদেশ এবং আল্লাহর কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয় তবে সেটিই ইসলামের নির্দেশ, কেননা এতে উভয় পক্ষের মঙ্গল রয়েছে।[55]

১৩- ধূমপানের বাকী থাকা ঋণ পরিশোধ করার হুকুম:

প্রশ্ন/ এ প্রশ্নটি করা হয়েছিল ফাতাওয়ার স্থায়ী কমিটিকে: আমি পূর্বে ধূমপান করতাম, বিশেষ করে হুক্কা, এ বদভ্যাস যখন আমি ছেড়ে দেই তখন কফিখানার কর্মচারী আমার নিকট পাওনা টাকা চাচ্ছে, এমতাবস্থায় আমি কি তাকে টাকা দেব? বা আমি কি করব? জানালে উপকৃত হব।
উত্তর: এ ঋণ যদি হারাম জিনিসের মূল্য বাবদ হয় তবে তাকে দেওয়া ঠিক হবে না, কেননা এতে অন্যায় এবং আল্লাহদ্রোহী কাজে সহযোগিতা হয়, কিন্তু যদি কোনো জায়েয সেবার বিনিময়ে হয় তাহলে তা পরিশোধ করা ওয়াজিব। কারণ তা আপনার জিম্মাদারিত্বে মানুষেরর হক্ক বা অধিকার।[56]

১৪- ধূমপান কি অজু ভঙ্গের কারণ?

প্রশ্ন/ এ প্রশ্নটি সৌদী আরবে ফাতাওয়া ও গবেষণার স্থায়ী কমিটিকে করা হয়েছিল: তাদের ব্যাপারে ইসলামের হুকুম কি, যারা ধূমপান করে অতঃপর শুধু কুলি করে মাসজিদে আসে কিন্তু অজু করে না এই ভিত্তিতে যে, তারা অজু অবস্থায় ছিল অথচ আমরা জানি যে, সিগারেট অপবিত্র জিনিস, আর অপবিত্র জিনিস অজু ভঙ্গের কারণ, কিন্তু আমাদের কথার কোনো দলীল আমাদের নিকট নেই?
উত্তর: সকল প্রশংসা একমাত্র আল্লাহর জন্য, দুরুদ ও সালাম বর্ষিত হোক তদ্বীয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর, তাঁর পরিবার এবং সকল সহচরবৃন্দের উপর। অতঃপর আমি বলব: ধূমপান হারাম, কাজেই যারা ধূমপান করে তাদের উচিত হলো মাসজিদে যাওয়ার সময় ভাল ভাবে মুখ পরিস্কার করে মুখের দুর্গন্ধ দূর করে যাওয়া এবং মুসল্লিদেরকে কষ্ট ও তাদের ক্ষতি না করার প্রতি সচেষ্ট হওয়া। তবে ধূমপানে অজু ভাঙ্গবে না।[57]

প্রশ্ন/ এ প্রশ্নটি করা হয়েছিল ফাতাওয়ার স্থায়ী কমিটিকে: বিড়ি-সিগারেট বিক্রেতার ব্যাপারে শরীয়তের হুকুম কি? আমি ধূমপান করি, ধূমপানের পর মুয়াজ্জিনের আযান শুনে যদি মাসজিদে যাই তাহলে কি পূনরায় অজু করা আমার উপর ওয়াজিব? নাকি শুধু কুলি করলেই চলবে? আমি এটাও জানি যে, ধূমপান বিভিন্ন রোগ সৃষ্টি করে।
উত্তর: বিড়ি-সিগারেট বিক্রি করা হারাম, কারণ তা অপবিত্র এবং এতে অনেক ক্ষতি রয়েছে। তা গ্রহণকারী ফাসেক। ধূমপানে দ্বিতীয়বার অজু করার প্রয়োজন নেই কিন্তু মুখের দুর্গন্ধ পুরোপুরি দূর করা প্রয়োজন, সেই সাথে আল্লাহর নিকট এ থেকে তাড়াতাড়ি তাওবা করা ওয়াজিব।[58]

১৫- ধূমপায়ীর আযান ও ইমামতির হুকুম:

প্রশ্ন/ এ প্রশ্নটি করা হয়েছিল ফাতাওয়ার স্থায়ী কমিটিকে: মুসল্লিদের মধ্যে কোনো ধূমপায়ীর ক্বেরাত যদি ভাল হয় তাহলে সে নামাযে ইমামতি করতে পারে কি?
উত্তর: ফাসেকরা ব্যতীত অন্য কেউ যদি ক্বেরাত এবং নামাযের আহকাম ভালো না জানে তবে সে অবস্থায় ফাসেকরা ইমামতি করতে পারবে। কিন্তু প্রশ্নে উল্লেখিত ব্যক্তি যদি নিয়োগপ্রাপ্ত ইমাম হয় তাহলে ধূমপান না ছাড়লে তাকে পরিবর্তন করা উচিৎ।

ফাতাওয়ার স্থায়ী কমিটি থেকে একটি ফাতাওয়া বের হয়েছে যার সিদ্ধান্ত এই: ‘যে ব্যক্তি জুম‘আ এবং জামা‘আতের ইমাম হবে অথচ সে ধূমপান করে বা দাড়ি মুণ্ডন করে অথবা বিভিন্ন ধরনের পাপ কাজ করে তাহলে তাকে নসিহত করা এবং তার অন্যায়ের প্রতি ঘৃণা প্রদর্শন করা ওয়াজিব। যদি সে নসিহত গ্রহণ না করে তবে তাকে অপসারণ করা ওয়াজিব যদি সম্ভব হয় এবং ফেৎনা সৃষ্টি না হয়, অন্যথা তাকে ভয় দেখানো এবং তার প্রতি ঘৃণা প্রদর্শনের জন্য তাকে বাদ দিয়ে দ্বীনদার অন্য যে কারো পিছনে নামায পড়া যাবে যদি এতে ফেৎনার ভয় না থাকে। আর যদি তাকে বাদ দিয়ে অন্য কারো পিছনে নামায পড়া সম্ভব না হয় তাহলে জামা‘আত ঠিক রাখতে তার পিছনেই নামায পড়া যাবে। তদ্রুপ যদি অন্যের পিছনে নামায পড়লে ফেৎনা বয়ে আনে তবে তা দূর করা এবং সামান্য ক্ষতি হলেও তার পিছনেই নামায পড়তে হবে। যেমন আব্দুল্লাহ ইবন উমর এবং অন্যান্য সালাফগণ ঐক্যবদ্ধতা ঠিক রাখতে এবং ফেৎনা ও মতভেদ থেকে বাঁচার জন্য হাজ্জাজ ইবন ইউসুফের পিছনে নামায পড়েছেন অথচ সে বড় জালেম ছিল।

আর আল্লাহর কাছেই তাওফীক কামনা করছি। হে আল্লাহ, আমাদের নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর ও তাঁর পরিবার পরিজন এবং সাহাবীগণের উপর সালাত ও সালাম পেশ করুন।[59]
এ ব্যাপারে শাইখ মুহাম্মদ ইবন সালেহ আল উসাইমীন রহমাতুল্লাহ আলাইহি বলেছেন: মোটকথা হচ্ছে দাড়ি মুণ্ডনকারী ও ধূমপায়ী এবং এদের মত অন্যান্যগণ যারা বিভিন্ন অপরাধ করেই চলেছে তাদের আযান সহীহ হবে যদি সঠিকভাবে দিতে পারে এবং অর্থের কোনো পরিবর্তন না হয়।[60]

প্রশ্ন/ ধূমপায়ীর ইমামতি করা জায়েয আছে কি?
উত্তর: ধূমপায়ীর পিছনে নামায পড়া ঠিক নয়; যদি তার চেয়ে ভালো অন্য কাউকে পাওয়া যায়, যদি তার চেয়ে ভালো কাউকে না পাওয়া যায় অথবা আপনি এসে ধূমপায়ীর পিছনে নামায পড়ে ফেলেছেন তবে আপনার নামায সঠিক হবে ইন-শাআল্লাহ। অধিকাংশ আলেম বলেছেন: ফাসেকের পিছনে নামায পড়লে সহীহ হবে, যারা তার পিছনে নামায পড়েছে তাদেরকে ঐ নামায পুনরায় পড়তে হবে না, কারণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ‘যে ব্যক্তি লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলবে, তার পিছনে তোমরা নামায পড়।’[61] আর আল্লাহই সবচেয়ে বেশি জানেন।[62]

প্রশ্ন/ আমরা ছয় ঘন্টা কাজ করে যোহরের নামায পড়ি, নামাযে একজন ধূমপায়ী ও হুক্কা পানকারী ইমামতি করে এবং তাদের কারো কারো চুল লম্বা করে রাখা (মুখানফিস) তার ইমামতির হুকুম কি? তার পিছনে কি নামায হবে? অনুগ্রহ করে এ সম্পর্কে আমাদেরকে কিছু বলুন।
উত্তর: হ্যাঁ, তার পিছনে নামায হয়ে যাবে, কিন্তু উত্তম হলো আপনাদের মধ্যে যে ব্যক্তি ভাল ক্বেরাত পাঠ করতে পারে ও দ্বীন সম্পর্কে জ্ঞান রাখে তার ইমামতি করা। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«يَؤُمُّ الْقَوْمَ أَقْرَؤُهُمْ لِكِتَابِ اللهِ»

“কোন জনগোষ্ঠীর ইমাম হবে সেই ব্যক্তি যে তাদের মধ্যে কুরআন ভাল পাঠ করতে পারে”।
এখানে ‘ভালোভাবে কুরআন পাঠকারী’র অর্থ: ‘ভালোভাবে কুরআন পাঠকারী এবং তার অর্থ অনুযায়ী আমলকারী’, কিন্তু যদি ভালোভাবে কুরআন পড়ে কিন্তু আমল করে না তাহলে তার মধ্যে কোনো কল্যাণ নেই।

আর যদি তাদের মধ্যে ভাল ক্বারী থাকা সত্ত্বেও অন্য কেউ ইমামতি করে তবে তা উচিত কাজ হবে না, যেমনটি পূর্বের হাদীসে বলা হয়েছে। আর ইমাম আহমদ ‘রিসালা সুন্নিয়া’ নামক কিতাবে উল্লেখ করেছেন: ‘যে ব্যক্তি এমন জনগোষ্ঠীর ইমামতি করবে যাদের মধ্যে তার চেয়ে ভাল লোক আছে; তবে তারা সবসময় অধঃগামী হবে।’ অর্থাৎ ধীরে ধীরে তাদের অধঃপতন হবে। কাজেই উত্তম হলো আপনাদের মধ্যে যে ব্যক্তি পরহেজগার, জ্ঞানী এবং ক্বারী তার ইমামতি করা। যদি মেনে নেয়া যায় যে, ধূমপায়ী, দাড়ি মুণ্ডনকারী বা হুক্কা পানকারী বা যার মাথার চুল অযাচিতভাবে ছেড়ে দিয়েছে সে যদি সামনে গিয়ে ইমামতি করে তবে নামায সহীহ হয়ে যাবে, পূনরায় তা আদায় করতে হবে না, কারণ সে মুসলিম, কিন্তু তা অসম্পূর্ণ হবে। আল্লাহই ভাল জানেন।[63]

১৬- ছাত্রদের সামনে শিক্ষকের ধূমপানের হুকুম:

প্রশ্ন/ এ প্রশ্নটি করা হয়েছিল মিসরীয় মুফতি শাইখ নাসর ফরিদ ওয়াসেলকে: ছাত্রদের সামনে শিক্ষকের ধূমপান করা সম্পর্কে শরীয়তের হুকুম কি?
উত্তর: শিক্ষকমণ্ডলী আলেমদের অন্তর্ভুক্ত, যারা নবীদের উত্তরসূরী। জ্ঞান সংগ্রহের মূল হচ্ছে: তাকওয়া, আল্লাহভীতি ও প্রকাশ্যে অপ্রকাশ্যে আল্লাহ সচেতনতা।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿وَٱتَّقُواْ ٱللَّهَۖ وَيُعَلِّمُكُمُ ٱللَّهُۗ﴾ [البقرة: ٢٨٢]

“তোমরা আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর, আর আল্লাহ তোমাদেরকে শিক্ষা দিবেন।” [সূরা বাকারা: ২৮২]। ছেলে মেয়ে এবং ছাত্রদের জন্য শিক্ষক হচ্ছেন অনুকরণীয় আদর্শ, কাজেই তার উচিত সার্বিক দিক দিয়ে উত্তম নমূনা হওয়া এবং মানুষের জন্য ভাল আদর্শ হওয়া। তাহলে তার জন্য আল্লাহর নিকট পূণ্য থাকবে। কারণ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«مَنْ سَنَّ فِي الْإِسْلَامِ سُنَّةً حَسَنَةً، فَعُمِلَ بِهَا بَعْدَهُ، كُتِبَ لَهُ مِثْلُ أَجْرِ مَنْ عَمِلَ بِهَا، وَلَا يَنْقُصُ مِنْ أُجُورِهِمْ شَيْءٌ، وَمَنْ سَنَّ فِي الْإِسْلَامِ سُنَّةً سَيِّئَةً، فَعُمِلَ بِهَا بَعْدَهُ، كُتِبَ عَلَيْهِ مِثْلُ وِزْرِ مَنْ عَمِلَ بِهَا، وَلَا يَنْقُصُ مِنْ أَوْزَارِهِمْ شَيْءٌ»

“যে ব্যক্তি (রাসূল কর্তৃক অনুমোদিত) কোনো (বাদ পড়ে যাওয়া বা পরিত্যক্ত) সুন্নাতের প্রচার-প্রসার ঘটাবে তার জন্য তার সাওয়াব রয়েছে এবং যে আমল করবে সে তার সম সাওয়াব পাবে, পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি খারাপ (যা রাসূল অনুমোদন করেন নি বা নতুন) কোনো কাজের প্রচার-প্রসার ঘটাবে সে তার জন্য পাপী হবে এবং যে ব্যক্তি তা করবে সে তার সম পরিমাণ পাপী হবে কিয়ামত পর্যন্ত।”[64]

যে শিক্ষক ছাত্রদের সামনে ধূমপান করবে নিঃসন্দেহে সে একটি খারাপ নমুনা এবং ছাত্রদের জন্য খারাপ আদর্শ, সে অন্যায় ও পাপে লিপ্ত হলো ফলে সে দুনিয়া এবং আখেরাতে শাস্তিযোগ্য হবে। কারণ সে ছাত্রদের মধ্যে ধ্বংসের বীজ বপন করছে যা শরীয়ত ও দ্বীন কোনটাই সমর্থন করছে না। সে খারাপ পদ্ধতিতে তাদেরকে শিক্ষা দিচ্ছে যে, কি ভাবে তাদের ক্ষতি হবে, কি ভাবে তারা মালের অপচয় করবে এবং কি ভাবে তারা ধ্বংস হবে, এর দ্বারা সে দ্বীনের সুন্দর শিক্ষার বিপরীত কাজ কর্ম করছে, যা সম্পর্কে আল্লাহ বলেছেন:

﴿ وَلَا تُسۡرِفُوٓاْۚ إِنَّهُۥ لَا يُحِبُّ ٱلۡمُسۡرِفِينَ ﴾ [الانعام: ١٤١]

“তোমরা অপচয় করো না, নিশ্চয়ই আল্লাহ অপচয়কারীকে পছন্দ করেন না।” [সূরা আনয়াম: ১৪১]

আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:

﴿وَلَا تُبَذِّرۡ تَبۡذِيرًا ٢٦ إِنَّ ٱلۡمُبَذِّرِينَ كَانُوٓاْ إِخۡوَٰنَ ٱلشَّيَٰطِينِۖ﴾ [الاسراء: ٢٦، ٢٧]

“তোমরা কিছুতেই অপচয় করো না, নিশ্চয়ই অপচয়কারীগণ শয়তানের ভাই।” [সূরা ইসরা: ২৬-২৭]

তিনি আরও বলেন:

﴿ وَلَا تَقۡتُلُوٓاْ أَنفُسَكُمۡۚ إِنَّ ٱللَّهَ كَانَ بِكُمۡ رَحِيمٗا ﴾ [النساء: ٢٩]

“তোমরা তোমাদের নিজেদেরকে হত্যা করো না, নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের প্রতি অনুগ্রহশীল।” [সূরা নিসা: ২৯]

তিনি আরও বলেন:

﴿وَلَا تُلۡقُواْ بِأَيۡدِيكُمۡ إِلَى ٱلتَّهۡلُكَةِ ﴾ [البقرة: ١٩٥]

“তোমরা তোমাদের নিজেদেরকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিওনা।” [সূরা বাকারা: ১৯৫]।[65]

১৭- ধূমপায়ীর নিকট বিবাহ দেওয়া ও তার থেকে তালাক নেওয়া সংক্রান্ত বিধান

প্রশ্ন/ এ প্রশ্নটি আল্লামা শাইখ ইবনে বায রহমাতুল্লাহ আলাইহিকে করা হয়েছিল: ধূমপায়ীর ব্যাপারে ইসলামের হুকুম কি? এতে কি তার স্ত্রী তালাক হয়ে যাবে?
উত্তর: ধূমপায়ী এর দ্বারা একটি হারাম কাজ করল, কেননা তামাক তথা বিড়ি সিগারেট অপবিত্র, তা পান করা হারাম। কিন্তু এর দ্বারা তার স্ত্রী তালাক হবে না। কারণ কোনো মুসলিম পাপ করলে এর দ্বারা তার স্ত্রী তালাক হবে না, বরং আল্লাহর নিকট তাওবা করা এবং পূনরায় ধূমপান করা থেকে সতর্ক থাকা উচিৎ।[66]

প্রশ্ন/ এ প্রশ্নটি করা হয়েছিল ফাতাওয়ার স্থায়ী কমিটিকে: আমার ছেলে ধূমপান করে ও দাড়ি মুণ্ডন করে, সে পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় করে, তাকে বিবাহ করানোর জন্য সে আমাকে বলছে, আমি কি তাকে বিবাহ করাতে পারি?
উত্তর: বিবাহের ব্যাপারে তাকে সহযোগিতা করা যাবে, কেননা উল্লেখিত কারণগুলো তা নিষেধ করে না। আপনি তাকে দাড়ি রাখার জন্য এবং ধূমপান ত্যাগ করার জন্য উপদেশ দিন। আশা করি তাকে আপনার বিবাহ করানোই সংশোধনের কারণ হতে পারে, কেননা ভাল কেবল ভালই বয়ে আনে। আল্লাহই তাওফীক দাতা। আল্লাহ আমাদের নবী মুহাম্মদ, তাঁর পরিবার-পরিজন ও সাহাবীগণের উপর সালাত ও সালাম পেশ করুন।[67]

১৮- কোনো ব্যক্তি তার ধূমপায়িনী স্ত্রীর সাথে কী ব্যবহার করবে?

প্রশ্ন/ এ প্রশ্নটি আল্লামা শাইখ ইবনে বায রহমাতুল্লাহ আলাইহিকে করা হয়েছিল: আমার স্ত্রী আল্লাহর ফরযকৃত দায়িত্ব যেমন নামায, রোজা .. ইত্যাদি পালন করে এবং স্বামীর হক্বও আদায় করে কিন্তু সে স্বামীর অজান্তে ধূমপান করে থাকে। যখন আমি জানতে পারলাম তখন তাকে কিছু শাসন করলাম এবং তা ত্যাগ করার জন্য নসিহত করলাম কিন্তু সে আমার নসিহত না মেনে ধূমপান করেই যাচ্ছে। এ স্ত্রীর ব্যাপারে আমি কি করতে পারি?
• তার এ কর্মের উপর আমি কি ধৈর্য ধারণ করব? অথচ অন্যায়কে প্রশ্রয় দেওয়াও অন্যায়?
• সে যদি আমার বাড়ীতে থাকে এবং ধূমপান করেই যায় তাহলে কি আমার পাপ হবে?
• পাপ থেকে দূরে থাকার জন্য তাকে তালাক দেওয়া আমার জন্য জায়েয হবে কি?
আশা করি অনুগ্রহ করে আমার এ সমস্যার বিস্তারিত সমাধান দিবেন, আল্লাহ আপনাকে উত্তম বদলা দিন এবং ইসলাম ও মুসলিমদের ভালোর জন্য আল্লাহ আপনাকে দীর্ঘজীবি করুন।
উত্তর: তাকে নসিহত করা, ধূমপানের ক্ষতিগুলো বর্ণনা করে যাওয়া এবং ধূমপান ও তার মধ্যে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া ওয়াজিব। এতে আপনি সাওয়াব পাবেন; কোনো পাপ হবে না, কারণ আপনি তার কাজে সন্তুষ্ট নন বরং আপনি এর প্রতিবাদ করেছেন এবং তাকে নসিহত করেছেন, সেই সাথে আপনার উচিত হলো এ ব্যাপারে তাকে নসিহত করে যাওয়া যদিও কিছু শাসন করে হয়, যে শাসন তাকে এ কাজ থেকে বিরত রাখবে। আল্লাহর নিকট তার হেদায়েতের জন্য প্রার্থনা করছি।[68]

১৯- ধূমপান কি রোজা ভঙ্গকারী বিষয়?

প্রশ্ন/ এ প্রশ্নটি আল্লামা শাইখ ইবনে উসাইমীন রহমাতুল্লাহ আলাইহিকে করা হয়েছিল: ধূমপান যদি খাবার ও পানীয় না হয় এবং পেটেও না যায় তাহলে কি তা রোজা ভঙ্গকারী বিষয় হবে?
উত্তর: আমি বলব: ধূমপান করা রমাযানে বা অন্যান্য সকল সময়েই হারাম, তা দিনের বেলায় হোক বা রাত্রেই হোক, আল্লাহকে ভয় করে চলুন এবং ধূমপান ত্যাগ করে আপনার সুস্থতা, দাঁত, সম্পদ, সন্তানাদি এবং পরিবারের সাথে শারীরিক প্রফুল্লতা রক্ষা করুন, যেন আল্লাহ আপনার উপর সুস্থতা ও সুস্বাস্থ্য রক্ষার নেয়ামত বর্ষণ করেন।
আর যেটা বলেছেন যে, তা পানীয় নয় আমি বলব: এ কথা কি বলা হয় যে, অমুক ধূমপান করে? হ্যাঁ, বলা হয়: অমুক ধূমপান করে। আর প্রত্যেক পানীয় বস্তুর পান করা সে বস্তুর প্রকৃতি অনুযায়ী হয়ে থাকে। সুতরাং এটি নিঃসন্দেহে পানীয়, তবে তা ক্ষতিকর হারাম পানীয়। তার জন্য এবং তার মত যারা আছে তাদের জন্য আমার উপদেশ হলো: তার নিজের, সম্পদের, সন্তানাদির এবং পরিবারের ব্যাপারে আল্লাহকে যেন ভয় করে চলে, কারণ এ সমস্ত ক্ষেত্রে ধূমপান ক্ষতি বয়ে আনে। আমি আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করছি তিনি যেন তাকে এবং সকল মুসলিম ভাইকে তাঁর অসন্তুষ্টি থেকে রক্ষা করেন। এ থেকে প্রতীয়মান হয় যে, ধূমপানে পাপ হওয়ার সাথে সাথে তা রোজা ভঙ্গকারী একটি বিষয়।[69]

২০- মাসজিদ ও মাসজিদ সংলগ্ন রুমে ধূমপান করার হুকুম:

প্রশ্ন/ এ প্রশ্নটি আল্লামা শাইখ ইবনে বায রহমাতুল্লাহ আলাইহিকে করা হয়েছিল: আমাদের এলাকায় একটি মাসজিদে সতর্ককারী একটি যন্ত্র রয়েছে। দিবা-রাত্রি চব্বিশ ঘন্টা এর তদারকি করছে অগ্নি নির্বাপক বাহিনীর কিছু লোক, তারা মাসজিদ সংলগ্ন একটি রুমে ধূমপান করছে। আপনার নিকট প্রশ্নকারী তাদের জন্য কিছু নসিহত চাচ্ছে।
উত্তর: মাসজিদ এবং মাসজিদ সংলগ্ন কোনো রুমেই ধূমপান করা যাবে না, কারণ তা হারাম এবং মাসজিদে পান করা আরও অধিক হারাম। অথচ পিঁয়াজ রসুন (হালাল জিনিস) খেয়ে মাসজিদে যেতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিষেধ করেছেন, সে জায়গায় ধূমপান করে যাওয়া কিভাবে সম্ভব?

প্রকাশ থাকে যে, পিঁয়াজ ও রসুন দু’টি হালাল জিনিস কিন্তু এর দুর্গন্ধ থাকার কারণে মাসজিদে যাওয়ার সময় তা খাওয়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিষেধ করেছেন যেন মুখে কোনো গন্ধ না থাকে। যদি পিঁয়াজ রসুন খেয়ে মাসজিদে না যেতে পারে তাহলে ধূমপান করে কিভাবে যাবে? অথচ তা হারাম ও অপবিত্র। তার পরিবার এবং যারা এর গন্ধ পাবে তাদের জন্য তা ক্ষতিকর। কাজেই তাদের উচিত হলো তা থেকে সতর্ক থাকা এবং মাসজিদ সংলগ্ন রুমে তা পান না করা। ধূমপান ত্যাগ করে সর্বাবস্থায় ও সকল স্থানে এ থেকে দূরে থাকা, কারণ তা হারাম ও অপবিত্র এবং এতে দ্বীনি, দুনিয়াবী, শারীরিক এবং আর্থিক ক্ষতিসহ সকল প্রকার ক্ষতি রয়েছে। আল্লাহ সকলকে হেদায়েত করুন।[70]

প্রশ্ন/ এ প্রশ্নটি করা হয়েছিল ফাতাওয়ার স্থায়ী কমিটিকে: এক ব্যক্তি মাসজিদে – রাওজায়- নামায পড়ছে, এমতাবস্থায় তার পকেট থেকে সিগারেটের প্যাকেট পড়ে গেছে, এর হুকুম কি? মাসজিদে সিগারেট নিয়ে যাওয়া জায়েয আছে কি?
উত্তর: প্রশ্নের উদ্দেশ্য যদি তার কৃত কাজ হয় অর্থাৎ সিগারেট নিয়ে মাসজিদে যাওয়া, তবে এটা করো অজানা নয় যে, সিগারেট খারাপ ও অপবিত্র জিনিস। আর তা পান করা হারাম, কেননা এতে শারীরিক, আর্থিক এবং সামাজিক ক্ষতি রয়েছে সেই সাথে এতে কোনো উপকার নেই। যেহেতু তা অপবিত্র সেহেতু তা থেকে আল্লাহর ঘরকে রক্ষা করা বা সিগারেট মাসজিদে নিয়ে যাওয়াতে আল্লাহর ঘরের অবমাননা এবং অসম্মান করা হয় বিধায় তা জায়েয নেই।
কিন্তু প্রশ্নের উদ্দেশ্য যদি এই হয় যে, মুসল্লির পকেট থেকে সিগারেট পড়ে গেলে নামায বাতিল হয়ে যাবে কি না? এতে নামায বাতিল হবে না, নামায সহীহ হবে।
আল্লাহ আমাদের নবী মুহাম্মদ, তাঁর পরিবার-পরিজন ও সাহাবীগণের উপর সালাত ও সালাম প্রেরণ করুন।[71]

২১- ধূমপানের সময় কুরআন তেলাওয়াত শোনা:

প্রশ্ন/ ধূমপান অবস্থায় রেডিও বা টেলিভিশন অথবা কোনো ব্যক্তি থেকে কুরআন তেলাওয়াত শুনতে পারব কি?
প্রশ্ন/ জ্বলন্ত সিগারেট হাতে নিয়ে মাসজিদের বাহির গেটে প্রবেশ করা জায়েয আছে কি? নাকি গেটের ভিতরে অজু খানায় প্রবেশের পূর্বেই ফেলে দিতে হবে?
প্রশ্ন / সিগারেট হাতে নিয়ে কুরআন স্পর্শ করা বা পাঠ করা অথবা মুখস্ত থেকে পাঠ করা জায়েয আছে কি?
প্রশ্ন / সিগারেট হারাম না মাকরুহ?
প্রশ্ন/ কেউ কেউ বলেছে যে, সিগারেটটি আল্লাহর বাণী: (তোমাদের উপর মৃত বস্তু, রক্ত, শোকরের মাংস এবং যা আল্লাহ ব্যতীত অন্যের নামে জবাই হয় তা হারাম করা হয়েছে) এর অন্তর্ভুক্ত, অর্থাৎ তা (যা আল্লাহ ব্যতীত অন্যের নামে জবাই করা হয়) এর অন্তর্ভুক্ত। এটি কি সঠিক?
উত্তর: ফাতাওয়া কমিটি এ পাঁচটি প্রশ্নের উত্তর এক সাথে দিয়েছেন, কেননা সবগুলো প্রশ্নের বিষয়বস্তু এবং কিছু কিছু দিক দিয়ে প্রায় একই:
ধূমপান বিভিন্ন অপরাধের মধ্যে একটি অপরাধ, কারণ এতে শারীরিক ও আর্থিক ক্ষতি রয়েছে যা শরীয়ত হারাম করেছে এবং তা আল্লাহর বাণী:

﴿وَيُحِلُّ لَهُمُ ٱلطَّيِّبَٰتِ وَيُحَرِّمُ عَلَيۡهِمُ ٱلۡخَبَٰٓئِثَ﴾ [الاعراف: ١٥٧]

“এবং তিনি তাদের জন্য ভাল পবিত্র জিনিসকে হালাল করেন এবং অপবিত্র জিনিসকে তাদের উপর হারাম করেন”—এর অন্তর্ভুক্ত। তাছাড়া তা ভালো এবং পবিত্র জিনিস নয় বরং তা অপবিত্র। আর যেহেতু ধূমপান ও সিগারেট পান করা একটি অপরাধ, সেহেতু তা মাসজিদের ভিতর বা মাসজিদে প্রবেশের সময় বা কোনো ব্যক্তি থেকে সরাসরি অথবা রেডিও থেকে কুরআন তেলাওয়াত শুনার সময় হাতে সিগারেট রাখা বা পান করা অধিক এবং মারাত্মক অপরাধ। কারণ এতে ইবাদতের জায়গায় অন্যায় করার মাধ্যমে তার অবমাননা করা হয় এবং আল্লাহর বাণী যা ইসলামী শরীয়তের ভিত্তি, হিকমত, শিক্ষা এবং নসিহত গ্রহণের মূল তার সম্মানের কোনো খেয়াল করা হয় না। কোনো নেতা বা সম্মানিত লোকদের মিটিংয়ে এবং বক্তব্যের সময় যদি মানুষ আদব কায়দার খেয়াল করে থাকে তাহলে মুসলিমদের মাসজিদ যা ইবাদত ও আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য তৈরী করা হয়েছে সেখানে বা কুরআন পাঠ, তেলাওয়াত ও তেলাওয়াত শুনার সময় কি ভাবে অন্যায় করার সাহস করে? কাজেই ধূমপান একেবারেই পরিহার করতে হবে, বিশেষ করে যিকির, কুরআন তেলাওয়াত এবং তা শুনার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভের সময়।

আর পঞ্চম প্রশ্নে যা বলা হয়েছে যে, ধূমপান বা সিগারেট পান করা আল্লাহর বাণী: “যা আল্লাহ ব্যতীত অন্যের নামে জবাই করা হয়” এর অন্তর্ভুক্ত। এটি সঠিক নয়। বরং এ থেকে উদ্দেশ্য হলো: জবাই করার সময় আল্লাহ ব্যতীত অন্যের নাম স্মরণ করা বা এর দ্বারা অন্যের নৈকট্য লাভ করা। কারণ আলী ইবন আবু তালেব রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«لَعَنَ اللهُ مَنْ ذَبَحَ لِغَيْرِ اللهِ»

“যে ব্যক্তি আল্লাহ ব্যতীত অন্যের নামে পশু জবাই করবে আল্লাহ তাকে অভিশম্পাৎ করেছেন।”[72] সিগারেট হারামের জন্য এটিই যথেষ্ট যে, তা অপবিত্র এবং তা গ্রহণকারীর স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এবং অপব্যয় ও সম্পদ বিনষ্টকারী। অতএব, তা আল্লাহর বাণী: “তাদের উপর অপবিত্র জিনিসকে হারাম করা হয়েছে” এর অন্তর্ভুক্ত।

অনুরূপভাবে তা নিম্নোক্ত হাদীস,

«لا ضرر ولا ضرار»

“নিজের কোনো অনিষ্টতা বা ক্ষতি এবং অন্য কারো ক্ষতি করা যাবে না” এর অন্তর্ভুক্ত।[73]

তদ্রূপ অন্য হাদীসেরও অন্তর্ভুক্ত, যাতে এসেছে,

«مَلْعُونٌ مَنْ ضَارَّ مُؤْمِنًا»

“যে ব্যক্তি কোনো মুমিনকে কষ্ট দিবে সে অভিশপ্ত”।[74]

২২- যে ব্যক্তি ধূমপান ত্যাগ করার শপথ করেও আবার তা গ্রহণ করে তার কাফফারা বা জরিমানা:

প্রশ্ন/ এ প্রশ্নটি আল্লামা শাইখ ইবনে বায রহমাতুল্লাহ আলাইহিকে করা হয়েছিল: আমার স্বামী ধূমপানে আসক্ত এবং হাঁপানী রোগে আক্রান্ত, ধূমপানের ব্যাপারে আমাদের মধ্যে ঝগড়াও হয়েছে, তারপর সে দুই রাকাত নামায পড়ে ধূমপান করবে না বলে শপথ করেছে কিন্তু এক সপ্তাহ পর আবার ধূমপান শুরু করেছে ফলে আবারও আমাদের মধ্যে ঝগড়ার সৃষ্টি হয়েছে। এবার সে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করেছে যে, আর কখনো ধূমপান করবে না, কিন্তু আমি তা বিশ্বাস করতে পারছি না, এ ব্যাপারে আপনার মতামত কি? তার শপথ ভঙ্গ করার জরিমানা কি? এবং আমাদের কিছু উপদেশ দিন, আল্লাহ আপনাকে ভাল বদলা দিন।
উত্তর: ধূমপান অপবিত্র হারাম, এর বহু ক্ষতি রয়েছে। আল্লাহ তার কুরআনে বলেন:

﴿ يَسۡ‍َٔلُونَكَ مَاذَآ أُحِلَّ لَهُمۡۖ قُلۡ أُحِلَّ لَكُمُ ٱلطَّيِّبَٰتُ ﴾ [المائ‍دة: ٤]

“হে নবী, তারা আপনাকে জিজ্ঞাসা করে যে, তাদের জন্য কি হালাল করা হয়েছে, আপনি বলুন: তাদের জন্য পবিত্র ভাল জিনিস হালাল করা হয়েছে।” [সূরা মায়েদা: ৪]

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ব্যাপারে সূরা আ‘রাফে আল্লাহ বলেন:

﴿ وَيُحِلُّ لَهُمُ ٱلطَّيِّبَٰتِ وَيُحَرِّمُ عَلَيۡهِمُ ٱلۡخَبَٰٓئِثَ ﴾ [الاعراف: ١٥٧]

“তিনি তাদের জন্য ভাল জিনিস হালাল করেছেন এবং তাদের উপর অপবিত্র জিনিস হারাম করেছেন।” [সূরা আ‘রাফ: ১৫৭]
এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, তামাক বা সিগারেট অপবিত্র, কাজেই আপনার স্বামীর উচিত হলো তা ত্যাগ করা এবং এ থেকে সতর্ক থেকে আল্লাহ ও তার রাসূলের আনুগত্য করা, আল্লাহর অসন্তুষ্টির কারণ থেকে সতর্ক থাকা, দ্বীন ও স্বাস্থ্য রক্ষা করা এবং আপনার সাথে ভাল ব্যবহার করা। আর তার শপথ ভঙ্গ করার কাফফারা বা জরিমানা হলো কাফফারা ইয়ামীন, সেই সাথে আল্লাহর নিকট তাওবা করা। কাফফারা হলো: দশজন মিসকীনকে খাবার খাওয়ানো, বা পরিধেয় কাপড় পরিধান প্রদান করা বা একজন ক্রীতদাস মুক্ত করা।[75]

তাদেরকে রাত্রে বা দুপুরে খাওয়ানো অথবা প্রত্যেককে অর্ধ সা অর্থাৎ: প্রায় দেড় কিলোগ্রাম স্বদেশী খাবার দিয়ে দেওয়াই যথেষ্ট। আপনার প্রতি উপদেশ হলো: সে যদি নামায পড়ে, তার চরিত্র ভালো হয় এবং ধূমপান ত্যাগ করে তবে আপনি তার নিকট তালাক চাইবেন না। কিন্তু যদি অন্যায় করেই যায় তবে তালাক চাওয়া নিষেধ করব না। আল্লাহ তাকে হেদায়েত দান করুন এবং তাওবার জন্য তাকে তাওফীক দান করুন।[76]

প্রশ্ন/ আমি ধূমপান করতাম, একদিন আমার মা এসে আমাকে এক হাজার টাকা দিলেন এই শর্তে যে, আমি যদি পূনরায় ধূমপান করি তাহলে আমার উভয় স্ত্রীকে তালাক দিয়ে দিব। আমি বললাম ঠিক আছে আমি আবার ধূমপান করলে তারা তালাক হয়ে যাবে এবং মাকে আমি তিন হাজার টাকা দিব। আমার অন্তরে কিন্তু তালাক ছিল না বরং মার নিকট থেকে টাকা নেয়া এবং ধূমপান ত্যাগ করা আমার উদ্দেশ্য ছিল। আমার এ ঘটনার ব্যাপারে আপনার নিকট ফাতাওয়া চাচ্ছি, অনুগ্রহ করে কিছু বলুন।
উত্তর: যদি শপথের উদ্দেশ্য ধূমপান ত্যাগ এবং টাকা নেওয়া হয় তাহলে পূনরায় ধূমপান করাতে স্ত্রী তালাক হবে না কিন্তু আপনার শপথ ভঙ্গ করার কারণে জরিমানা বা কাফফারা লাগবে, তা হলো: আপনার পরিবারকে যে খাবার খাওয়াচ্ছেন তার অনুরূপ (সাধারণ) খাবার দশজন মিসকিনকে দিতে হবে বা দশজনকে পোশাক দিতে হবে। আর তাদেরকে পাঁচ সা (প্রতি সা প্রায় আড়াই কিলোগ্রাম) গম বা খেজুর বা চাল বা যব যা আপনার পরিবারকে খাওয়ান তা দিলেই যথেষ্ট হবে, প্রত্যেককে আধা সা পরিমাণ করে। তাও যদি সামর্থ না রাখেন তাহলে তিন দিন রোজা রাখতে হবে, ধারাবাহিকভাবে রাখাই ভাল।
কিন্তু যদি আপনার শপথের উদ্দেশ্য হয় উভয় স্ত্রীকে তালাক দেওয়া এবং তাদেরকে ত্যাগ করা, তাহলে ধূমপানের কারণে উভয়ের এক তালাক করে পতিত হবে, এমতাবস্থায় দুইজন সাক্ষীর মোকাবেলায় তাদেরকে ইদ্দতের ভিতরেই ফিরিয়ে নিতে হবে।
আর আল্লাহর নিকট তাওফীক কামনা করছি। আল্লাহ সালাত ও সালাম পেশ করুন আমাদের নবী মুহাম্মাদ, তাঁর পরিবার-পরিজন ও সকল সঙ্গী-সাথীদের উপর।[77]

প্রশ্ন/ এ প্রশ্নটি আল্লামা শাইখ ইবনে উসাইমীন রহমাতুল্লাহ আলাইহি কে করা হয়েছিল: আমি একজন ধূমপায়ী, আমি মনে মনে বলেছিলাম যে যদি আমি পূনরায় ধূমপান করি তাহলে আমার স্ত্রী আমার উপর হারাম হয়ে যাবে, অতঃপর ভুলে গিয়ে আবার ধূমপান করি তারপর আমার প্রতিজ্ঞার কথা মনে পড়ল। এখন এ অবস্থায় আমি কি করতে পারি?
উত্তর: যেহেতু আপনি ধূমপান ত্যাগ করার জন্য এক মহা প্রতিজ্ঞার উপর আছেন কাজেই তা ত্যাগ করার জন্য আমি আল্লাহর নিকট দো‘আ করি, আল্লাহ আপনাকে সহযোগিতা করবেন এবং দৃঢ় সংকল্প বাস্তবায়নে ধৈর্যের তাওফীক দিবেন। আর আপনি হারামের ব্যাপারে যা বললেন তা যদি মুখে না বলে শুধু মনে মনে বলেন তাহলে কিছু হবে না। আর যদি মুখে উচ্চারণ করে থাকেন এবং শুধু ধূমপান ত্যাগ করা উদ্দেশ্য হয় তাহলে তা শপথের পর্যায়ে চলে যাবে এমতাবস্থায় যদি আপনি ইচ্ছা করে স্মরণ থাকাবস্থায় পান করে থাকেন তাহলে কাফফারা দিতে হবে আর যদি ভুলে পান করে থাকেন তাহলে কিছু লাগবে না কিন্তু কখনো স্মরণ থাকাবস্থায় পান করতে পারবেন না। অন্যথায় শপথের কাফফারা লাগবে যা দশজন মিসকিনকে খাবার দেওয়া বা পোশাক দেওয়া অথবা ক্রীতদাস মুক্ত করণ। আপনি তা আদায়ে স্বাধীন। তাদেরকে দুপুরে বা রাত্রে খাওয়াতে পারেন বা চাল ও মাংস মিলিয়ে প্রায় পনের কিলোগ্রাম পরিমাণ একই ঘরে বা বিভিন্ন ঘরে দিয়ে দিতে পারেন। ফকীর না পেলে আপনি ধারাবাহিকভাবে তিন দিন রোজা রাখবেন।[78]

প্রশ্ন/ এ প্রশ্নটি করা হয়েছিল ফাতাওয়ার স্থায়ী কমিটিকে: আমি একজন বিবাহিতা ধার্মিক মহিলা, আমার সন্তানাদি রয়েছে। আমার স্বামী হুক্কা পানে অভ্যস্ত, আমি তাকে বহু নসিহত করেছি কিন্তু কোনো কাজ হয়নি, সে তা ত্যাগ করার উপর আল্লাহর শপথ করে কিন্তু তারপরও তা ত্যাগ করে না, এ পর্যায়ে আমি শপথ করেছি যে, সে ধূমপান ত্যাগ না করলে আমি আমার বাবার বাড়ী চলে যাব তবুও সে তা ত্যাগ করেনি এবং আমি স্বামীর বাড়ীতেই রয়েছি। আমি কি করব? এবং আমার শপথের হুকুম কি এবং হুক্কা পানের হুকুম কি? আপনার নিকট বিনীত নিবেদন যে আমার প্রশ্নের উত্তরগুলো দিবেন।
উত্তর:
প্রথমত: হুক্কা পান করা হারাম, কারণ তা অপবিত্র এবং এতে বহু ক্ষতি রয়েছে।
দ্বিতীয়ত: আপনার স্বামীর উচিত হলো শপথ পুরা করা এবং হুক্কা পান ত্যাগ করা।
তৃতীয়ত: আপনি আপনার স্বামীকে হুক্কা পান ত্যাগে নসিহত করে ভাল করেছেন এবং নসিহত এবং তার হেদায়েতের জন্য দো‘আ করে যাবেন হয়তো আল্লাহ তাকে হেদায়েত করবেন।
আর আপনার শপথের ব্যাপার হলো: আপনি কাফফারা দিয়ে দিবেন, বাবার বাড়ী যাবেন না। কাফফারা হলো: দশজন মিসকীনকে খাবার দেওয়া বা পোশাক পরিধান করানো অথবা একজন মোমেন ক্রীতদাস মুক্ত করণ। তা যদি না পান তবে তিন দিন রোজা রাখবেন।[79]

২৩- ধূমপায়ীর গ্রহণযোগ্যতা:

প্রশ্ন/ এ প্রশ্নটি আল্লামা শাইখ ইবনে উসাইমীন রহমাতুল্লাহ আলাইহিকে করা হয়েছিল: আল্লাহর নিকট ধূমপায়ীর শাস্তি কি?
উত্তর: ধূমপায়ী হারাম চর্চা করে, কারণ বিড়ি-সিগারেট হারাম। এর দলীল পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে। অতএব, ধূমপায়ী যেহেতু জানে যে তা হারাম কাজেই এর দ্বারা সে ছোট অন্যায় করে যাচ্ছে, আর ছোট অন্যায়ই বড় অন্যায়ে পরিণত হয়। এর দ্বারা একজন ফাসেক হয়ে যায় এবং গ্রহণযোগ্যতা হারায়। হাম্বলী মাযহাবের প্রসিদ্ধ মত হল: যে ব্যক্তি ছোট পাপে জড়িত থাকবে সে ফাসেক, যে সমস্ত ব্যাপারে আদালত তথা গ্রহণযোগ্যতা ও সুনীতি থাকা শর্ত রয়েছে তাতে তার কথা ও কাজের কোনো গ্রহণযোগ্যতা নেই। প্রত্যেকের উচিত তার প্রভুকে ভয় করে চলা এবং আর্থিক, শারীরিক ও দ্বীনি ক্ষতিকর এ পানীয় থেকে বিরত থাকা।[80]

প্রশ্ন/ এক ব্যক্তি ধূমপান করে, তার সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য হবে কি?
উত্তর: কুরআন ও হাদীসের দলীলের ভিত্তিতে এবং বিশেষজ্ঞদের মতে স্বাস্থ্য, অর্থ এবং সমাজে এর কুপ্রভাবের কারণে ধূমপান নিঃসন্দেহে হারাম। কাজেই তা পানকারী, বিক্রেতা এবং প্রস্তুতকারক সকলেই আল্লাহ এবং তার রাসূলের অবাধ্য। কিন্তু তার সাক্ষ্য গ্রহণের ব্যাপারে তার এবং বাদী বিবাদীর অবস্থা বুঝে ক্ষেত্র ভিন্ন হতে পারে। আর তা নির্ভর করবে যার বিরুদ্ধে ধূমপায়ী সাক্ষ্য দিচ্ছে এবং যে বিষয়ে ধূমপায়ী সাক্ষ্য দিচ্ছে সেটার উপর। এ সবের মূল কথা হচ্ছে, যে ব্যক্তির নিকট ধূমপায়ী সাক্ষ্য দেবে সে ব্যক্তি তার গ্রহণযোগ্যতার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিবেন।
আর আল্লাহর নিকট তাওফীক কামনা করছি। আল্লাহ সালাত ও সালাম পেশ করুন আমাদের নবী মুহাম্মাদ, তাঁর পরিবার-পরিজন ও সকল সঙ্গী-সাথীদের উপর। [81]

২৪- ধূমপায়ীর জানাযার নামায:

প্রশ্ন/ কোনো ধূমপায়ী বা নেশাখোর যদি মারা যায় এবং সে যদি মাসজিদে জামাতে নামায না পড়ে থাকে তাহলে তার জানাযার নামায পড়া যাবে কি?
উত্তর: ঘটনা যদি এমন হয় যে, সে ধূমপান করত, নেশা করত এবং মাসজিদে জামাতে নামায পড়ত না তবে সে আল্লাহ ও তার রাসূলের নাফরমান বা অবাধ্য, কিন্তু তাতে সে কাফের হয়ে যাবে না যতক্ষণ না সে মাদককে হালাল মনে করবে এবং নামায ত্যাগ করবে। কারণ সে শুধু জামাতে নামায আদায় করা ত্যাগ করেছে। কাজেই মুসলিমগণ তার জানাযার নামায পড়বে এবং অন্যান্য মৃত মুসলমানের সাথে যা করে তার সহিতও তাই করবে অর্থাৎ: গোসল দিবে, কাফন পরাবে এবং মাটি দেবে ইত্যাদি।
আর আল্লাহর নিকট তাওফীক কামনা করছি। আল্লাহ সালাত ও সালাম পেশ করুন আমাদের নবী মুহাম্মাদ, তাঁর পরিবার-পরিজন ও সকল সঙ্গী-সাথীদের উপর।[82]

প্রশ্ন/ যে ব্যক্তি বলে যে, ধূমপায়ী মুমিন নয়, সে জান্নাতে যাবে না এবং তার সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য হবে না, তার হুকুম কি?
উত্তর: ধূমপান একটি পাপ, কেউ কোনো পাপের উপর মারা গেলে সে আল্লাহর ইচ্ছাধীন থাকবে, তিনি ইচ্ছা করলে শাস্তি দেওয়ার পর জাহান্নাম থেকে তাকে বের করে জান্নাত দিতে পারেন অথবা তাকে ক্ষমা করে জান্নাতে প্রবেশ করাতে পারেন। কিন্তু দুনিয়াতে তার হুকুম হলো: তার ঈমান থাকার কারণে সে মুমিন এবং অপরাধের কারণে সে ফাসেক। আর এটিই আহলে সুন্নাত ও জামাতের মত।[83]

২৫- ধূমপান ত্যাগের সহায়ক কিছু কারণ:

প্রশ্ন/ এ প্রশ্নটি আল্লামা ইবনে বায রহমাতুল্লাহ আলাইহিকে করা হয়েছিল: আমি সর্বদা মাসজিদে জামাতের সাথে নামায আদায় করার চেষ্টা করি, বাড়ী থেকে ভিডিও বের করেছি, ফিল্ম ও ছবিগুলো জ্বালিয়ে দিয়েছি এবং গানের ক্যাসেটে ইসলামি বক্তব্য রেকর্ড করেছি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সুন্নাতকে অনুসরণ করতে দাড়ী লম্বা করেছি ও জামা খাটো করেছি কিন্তু একটি জিনিস আমার জীবনকে ঘোলাটে করে দিচ্ছে আর তা হলো ধূমপান। অনেক চেষ্টার পরেও তা ত্যাগ করতে পারিনি। এমতাবস্থায় আমি কি করতে পারি? এ ব্যাপারে আমাকে কি উপদেশ দেন? আপনার নিকট বিনীত প্রার্থনা আপনি আমার জন্য আল্লাহর নিকট দো‘আ করবেন তিনি যেন আমাকে এ থেকে বিরত রাখেন। আল্লাহ আপনাকে ভাল বদলা দিন।
উত্তর: প্রশংসা সেই আল্লাহর যিনি আপনাকে হক্বের দিকে হেদায়েত করেছেন, তা শক্তভাবে ধরে রাখার সহযোগিতা করেছেন এবং তার অমান্য করা থেকে বিরত রেখেছেন। হক্বের উপর দৃঢ় থাকার সাথে সাথে দ্বীনের জ্ঞান অর্জনের জন্য আল্লাহর নিকট দো‘আ করি। আর ধূমপান ত্যাগ করা এবং এ থেকে দূরে থাকা আপনার উপর ওয়াজিব, কারণ এতে ক্ষতি রয়েছে। যখন আপনি দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করে ধূমপায়ীদের সংস্পর্শ ত্যাগ করবেন তখন আল্লাহ আপনাকে তা ত্যাগ করার জন্য এবং এর ক্ষতি থেকে রক্ষার জন্য সহযোগিতা করবেন। কাজেই আপনাকে উপদেশ দিচ্ছি যে, আপনি এ ব্যাপারে দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়ে সিজদায় এবং অন্যান্য সময়ে আল্লাহর নিকট দো‘আ করুন, সেই সাথে আপনার ধূমপায়ী বন্ধুদের সংস্পর্শ ত্যাগ করুন। আপনাকে কল্যাণ এবং ভাল প্রতিদানের সুসংবাদ দিচ্ছি। আল্লাহর বাণীকে স্মরণ করুন:

﴿ٱدۡعُونِيٓ أَسۡتَجِبۡ لَكُمۡۚ ﴾ [غافر: ٦٠]

“তোমরা আমাকে ডাক আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দিব।” [সূরা গাফির: ৬]

আল্লাহ অন্যত্র বলেছেন:

﴿وَمَن يَتَّقِ ٱللَّهَ يَجۡعَل لَّهُۥ مِنۡ أَمۡرِهِۦ يُسۡرٗا ﴾ [الطلاق: ٤]

“যে ব্যক্তি আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন করে তিনি তার প্রতিটি কাজকে সহজ করে দেন।” [সুরা তালাক: ৪]

আল্লাহ আপনাকে তাওফীক দিন, ধূমপান ত্যাগে সহযোগিতা করুন এবং হক্বের উপর দৃঢ় রাখুন। নিশ্চয়ই তিনি নিকটবর্তী শ্রবণশীল।[84]

প্রশ্ন/ এ প্রশ্নটি আল্লামা শাইখ ইবনে উসাইমীন রহমাতুল্লাহ আলাইহিকে করা হয়েছিল: প্রতিটি হারাম কাজে পতিত ব্যক্তির জন্য ইসলামে নির্ধারিত শাস্তি রয়েছে শুধু ধূমপান ব্যতীত। আল্লাহর তাওফীকে রাষ্ট্র সাধ্যানুযায়ী এ থেকে সতর্ক করে যাচ্ছে এবং তা হারামের উপর আলেমগণ একমত পোষণ করেছেন। এ ব্যাপারে কিছু দিক নির্দেশনা দেওয়ার সাথে সাথে ইহাও বলবেন কি যে, এর কোনো শাস্তি আছে কি না?
উত্তর: ধূমপান শেষ যামানায় বা বহু পরে আবির্ভাব হয়েছে, এর আবির্ভাবের ফলে আলেমদের মধ্যে বিভিন্ন মতভেদ দেখা দিয়েছিল কিন্তু বর্তমান যুগে প্রতিটি সুস্থ জ্ঞানের অধিকারী নিঃসন্দেহে বলবে যে, এটি হারাম। কারণ এতে শারীরিক, আত্মিক এবং আর্থিক ক্ষতি রয়েছে।
আত্মিক ক্ষতি হলো: এতে আসক্ত ব্যক্তি যখন তা না পায় তখন সে চিন্তায়, দুর্ভাবনায়, ক্লান্তিতে পড়ে এবং তার বক্ষ সংকীর্ণ হয়ে আসে যতক্ষণ না সে তা গ্রহণ করে। কাজেই তা না পাওয়ায় সে নিজের শাস্তির কারণ হয়ে দাড়ায়।
শারীরিক ক্ষতি হলো: শরীরে বহু রোগের জন্ম দেয়। তার মধ্যে ক্যান্সার অন্যতম, আল্লাহ আমাদেরকে এ ব্যাধি থেকে বাঁচিয়ে রাখুন। এমনিভাবে দাঁত ও ফুসফুস নষ্ট হয়ে যায় এবং শারীরিক শক্তি কমে যায়।
আর্থিক ক্ষতি হলো: এতে অর্থ নষ্ট হয়। উল্লেখিত তিনটি কারণের যে কোনো একটি কারণেই বলা যায় যে তা হারাম। অতএব, এতে প্রতিটি আসক্ত ব্যক্তির প্রতি আমার উপদেশ হলো: এ থেকে নিজেকে বিরত রাখার জন্য প্রত্যেকের সাধ্যমত চেষ্টা করা উচিৎ। আর যারা আসক্ত নয় তারা যেন এর উপর আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে, এর উপর দৃঢ় ও প্রতিষ্ঠিত থাকে এবং অধিকাংশ লোককে এতে আসক্ত দেখে যেন ধোঁকায় না পড়ে। কারণ অধিকাংশ লোক কোনো বাতিলকে সত্য বানাতে পারবে না এবং কোনো হারামকে হালাল করতে পারবে না। ধূমপানে আসক্ত ব্যক্তি যেন একটু যাচাই করে দেখে যে, ধূমপান ত্যাগ করার ফলে তার সুস্থতা, সবলতা এবং উদ্দম ফিরে আসে কি না।
এ থেকে বিরত থাকার কিছু উপায় নিম্নরূপ:
১- বিশ্বাস রাখতে হবে যে তা হারাম। তা শুধু পাপই বয়ে আনবে এবং আল্লাহ ও তার রহমত থেকে দূরে রাখবে।
২- তা ত্যাগের দ্বারা আল্লাহর ইবাদত হয়। কেননা আল্লাহর নিষিদ্ধ কোনো হারাম পরিত্যাগ করাই ইবাদত। কাজেই বিশ্বাস রাখবেন যে, তা ত্যাগে আল্লাহর ইবাদত হচ্ছে।
৩- দিনের পর দিন আস্তে আস্তে কমিয়ে আনতে আনতে একেবারেই ত্যাগ করে ফেলবেন। ধীরে ধীরে অভ্যাস করলে তা ত্যাগ করা সম্ভব হবে।
৪- ধূমপায়ীদের সংস্পর্শ ত্যাগ করবেন, কারণ এদের থেকে দূরে থাকলে অবশ্যই এ থেকে বিরত থাকতে পারবেন এবং তা পান করাও কম হবে। কিন্তু তাদের সংস্পর্শে থাকলে তাদের ধূমপান দেখে ধৈর্য ধরতে পারবেন না। আল্লাহই তাওফীক দাতা।[85]

২৬- ধূমপানের ব্যাপারে কিছু বানোয়াট হাদীস:

প্রশ্ন/ এ প্রশ্নটি করা হয়েছিল ফাতাওয়ার স্থায়ী কমিটিকে: জানি না এ হাদীসটি সহীহ কি না। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: হে আবু হুরাইরা রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু শেষ যামানায় এমন এক জাতি আসবে যারা ধূমপানে অভ্যস্ত হবে। তারা বলবে: আমরা উম্মতে মোহাম্মদী অথচ তারা আমার উম্মত নয় এবং আমি তাদেরকে উম্মত বলব না বরং তারা অধিকাংশ সাধারণ লোক। আবু হুরাইরা বললেন: আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করেছি এটা কিভাবে উৎপন্ন হবে? তিনি বললেন: এটা ইবলিসের (শয়তানের) প্রশ্রাব থেকে উৎপন্ন হয়। তাহলে যারা শয়তানের প্রশ্রাব পান করে তাদেরকে এবং এর উৎপন্নকারী, সাপ্লাইদাতা এবং বিক্রেতাকে অভিসম্পাত করা হয়েছে এমতাবস্থায় তাদের অন্তরে কি ঈমান স্থির থাকবে? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: তাদেরকে আল্লাহ জাহান্নামে দিবেন এবং এটি একটি অপবিত্র বৃক্ষ।
উত্তর: হাদীসের গ্রন্থগুলোতে এ হাদীসের কোনো ভিত্তি নেই, বরং তা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর মিথ্যারোপ করা হয়েছে। বরং তাঁর থেকে যা সাব্যস্ত আছে তা হলো: মদ এবং তা পানকারী, যে পান করাবে, ব্যবস্থাপক, যার জন্য ব্যবস্থা করা হবে, তা বহনকারী, যার জন্য বহন করা হবে, বিক্রেতা, ক্রেতা এবং এর মূল্য ভক্ষকের উপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অভিশম্পাত করেছেন। আর তামাক তথা বিড়ি-সিগারেট হলো হারাম। তা পান করা আল্লাহ ও রাসূলের অবাধ্যতা, আর তা পানের মাধ্যমে এ অপরাধের দ্বারা সে ইসলাম থেকে বের হয়ে যাবে না। আর আল্লাহর নিকট তাওফীক কামনা করছি। আল্লাহ সালাত ও সালাম পেশ করুন আমাদের নবী মুহাম্মাদ, তাঁর পরিবার-পরিজন ও সকল সঙ্গী-সাথীদের উপর।[86]

উপসংহার:

প্রথমত: আল্লাহ তা‘আলার প্রশংসা ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি যিনি এ গুরত্বপূর্ণ ফাতাওয়াসমূহ একত্রিত করার তাওফীক দান করেছেন, তিনি এক ও অদ্বিতীয়, তার কোনো শরীক নেই।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাণী: “যে ব্যক্তি মানুষের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না সে আল্লাহরও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না।”[87]—এর প্রতি খেয়াল করে নিম্নে বর্ণিত সংগঠন ও ব্যক্তিদের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয় কর্তৃক মাদকদ্রব্য প্রতিরোধ প্রোগ্রামের পরিচালক ডক্টর আব্দুল্লাহ ইবন মোহাম্মদ আল বাদাহ এবং মাদকদ্রব্য প্রতিরোধ কল্যাণ পরিষদের চেয়ারম্যান জনাব সুলাইমান ইবন আব্দুর রহমান আস-সবী এর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি এ জন্য যে তারা এ বইটি তাদের প্রকাশনার অন্তর্ভুক্ত করেছেন।
আল বায কোম্পানীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি এ জন্য যে, তারা আমার এ বইটিতে আল্লামা শাইখ আব্দুল আযীয ইবন আব্দুল্লাহ ইবন বায (র:) এর ফাতাওয়া যুক্ত করার অনুমতি দিয়েছেন।
এমনিভাবে আল্লামা শাইখ মোহাম্মদ ইবন সলেহ আল উসাইমীন (র:) কল্যাণ পরিষদের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি যে, আমার বইয়ে মাদকদ্রব্য বিষয়ক তাঁর ফাতাওয়াসমূহ যুক্ত করতে তারা অনুমতি দিয়েছেন।
দ্বিতীয়ত: নর-নারীর মধ্যে মাদকদ্রব্যের সাথে যাদের সম্পর্ক রয়েছে তা ক্রয়-বিক্রয় বা উপহার অথবা তা প্রচারের যে কোনো মাধ্যম হোক না কেন তাদেরকে আল্লাহর নিকট তাওবা করার উপদেশ দিচ্ছি।
তৃতীয়ত: সম্মানিত পাঠকবৃন্দের নিকট আমার আবেদন হল:
1. এ বইয়ের ব্যাপারে যদি কারো নিকট কোনো পরামর্শ, পর্যালোচনা অথবা কোনো মন্তব্য থাকে তাহলে মনে কোনো সংকোচ না করে আমাকে সরাসরি বা ই-মেইলে জানালে খুশী হব।
2. আমার জন্য এবং যাদের সহযোগিতায় এ বইটি প্রকাশ পেয়েছে তাদের সকলের জন্য দো‘আ চাই, আল্লাহ যেন সকলকে তার দ্বীনের উপর দৃঢ় থাকার তাওফীক দান করেন।

سبحان ربك رب العزة عما يصفون وسلام على المرسلين والحمد لله رب العالمين.

লেখক: আমের সালেহ নাজী
সৌদী আরব, পূর্ব এলাকা
পো: বক্স ৬০২৯৭, দাম্মাম ৩১৫৪৫

ধূমপানের ক্ষতিসমূহ: [88]

শারীরিক সুস্থতা ঠিক রাখতে ইসলাম আপনাকে ভালো ভালো খাবার ও পানীয় গ্রহণ করতে নির্দেশ দিয়েছে। পক্ষান্তরে যে সকল খাবার ও পানীয় গ্রহণ করলে আপনার স্বাস্থ্যের ক্ষতি হবে সে সকল জিনিস গ্রহণ করতে নিষেধ করেছে। যেহেতু ধূমপান আপনার স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর; সেহেতু আল্লাহ তা হারাম করেছেন এবং তা পরিহার করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। কারণ ধূমপান সার্বিক দিক দিয়ে ক্ষতি বয়ে আনে, বিশেষ করে শারীরিক, আর্থিক, সামাজিক এবং চারিত্রিক ক্ষতির দিক হল অন্যতম যা নিম্নে সংক্ষিপ্তাকারে বর্ণনা করা হলো:

প্রথমত: শারীরিক ক্ষতি।
1. ধূমপানের ফলে গলায় এবং ফুসফুসে ক্যান্সারের সৃষ্টি হয়, প্যারালাইসিস হওয়ার সম্ভাবনা থাকে বেশী এবং যক্ষায় আক্রান্ত হয়। কারণ এতে নিকোটিন জাতীয় এক প্রকার বিষ রয়েছে।
2. মেডিক্যাল কলেজের একজন প্রফেসর ডক্টর কেনান আল জানী এক জনসভায় তার ভাষণে বলেন: ‘‘আমি প্রায় পঁচিশ বৎসর যাবৎ ক্যান্সারের চিকিৎসা করছি, তন্মধ্যে অধিকাংশ রোগী হচ্ছে ধূমপায়ী।
3. অন্য একজন বক্ষ বিশেষজ্ঞ বলেন: প্রায় নব্বই শতাংশ ক্যান্সার রোগী পাচ্ছি ধূমপায়ীদের মধ্যে।
4. ছাত্র এবং খেলোয়াড়দের জন্য ধূমপান ক্ষতিকর, ফলে দেখা যাচ্ছে অধূমপায়ীদের রেজাল্ট অধিক ভাল।
5. ধূমপানের কারণে ফুসফুসের ছিদ্রগুলো ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে আসে ফলে শ্বাস প্রশ্বাসে কষ্ট হয়।
6. ধূমপানের ফলে বক্ষে ময়লার পর্দা জমে থাকে। তা যাচাই করতে আপনি একটি সিগারেট লক্ষ্য করুন। সিগারেটের সামনের দিকে সাদা যে তুলাটি থাকে সেটির কি অবস্থা হয়! সিগারেটটি পান করা শেষ হতেই সেটি সাদা থেকে লাল অতঃপর কালো আকার ধারণ করে। এ ভাবে যারা দিনের পর দিন সিগারেট পান করে যাচ্ছে তাদের কি অবস্থা হবে?

দ্বিতীয়ত: সামাজিক ক্ষতি:
1. ধূমপানের ফলে আবহাওয়া দূষিত হয়, বিশেষ করে ঘরে বা গাড়িতে থাকলে অধিক হয়, এতে আশে-পাশের লোক, নিজের ছেলে-মেয়ে এবং স্ত্রী ক্ষতির সম্মুখীন হয়।
2. ধূমপান করার পর মাসজিদে গেলে সেখানে অধূমপায়ী মুসল্লি এবং ফেরেশ্তামণ্ডলী কষ্ট পায়। যার কারণে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হালাল জিনিস (কাঁচা পিয়াজ এবং রসুন) খেয়ে মাসজিদে যেতে নিষেধ করেছেন, কেননা এর মধ্যে দুর্গন্ধ রয়েছে। আর সে জায়গায় হারাম জিনিস সিগারেট পান মাসজিদে যাওয়া?

তৃতীয়ত: আর্থিক ক্ষতি:
1. এতে টাকা পয়সা অপচয় করা হয়। বরং বহু দরিদ্র শ্রেনীর লোক মাদকদ্রব্য ক্রয় করতে গিয়ে ছেলে-মেয়েদেরকে সঠিক লালন পালন করতে পারে না, যে টাকা তাদের উপর খরচ করতো সে টাকা দিয়ে মাদকদ্রব্য ক্রয় করে তা সেবন করছে। আমাদের মধ্যে কেউ যদি দৈনিক একটি করে টাকা নদীতে ফেলে দেয় তাহলে মানুষ তাকে পাগল বলবে অথচ সে জায়গায় দৈনিক কত টাকা সিগারেটের মাধ্যমে আগুনে জ্বালিয়ে দিয়ে নিজের শরীরে কত ধরনের রোগ বয়ে আনছে! আমরা তা কিছু মনে করছি না।
2. সিগারেট কিনতে গিয়ে বহু টাকা ব্যয় করতে হচ্ছে এবং তা পান করার ফলে শরীরে যে রোগ হচ্ছে তার চিকিৎসা করতে আরও বহুগুণ টাকা ব্যয় করতে হচ্ছে।
3. এ সিগারেটই অনেক সময় জামা-কাপড় পুড়ে যাওয়ার কারণ হয়ে দাঁড়ায় এমনকি পেট্রোল পাম্প এবং এর দ্বারা প্রিন্টিংপ্রেসে আগুন লাগারও কিছু প্রমাণ রয়েছে।
ফায়ার সার্ভিসের তথ্যানুযায়ী ঘর-বাড়ী, দোকান-পাট, কল-কারখানা ইত্যাদিতে আগুন লাগার প্রায় ৭০% সিগারেটের আগুন থেকে হয়ে থাকে।

চতুর্থত: চারিত্রিক ক্ষতি:
1. ডক্টর জন ষ্টোন বলেন: ধূমপানের কারণে সাধারণত মেজাজ কর্কশ হয়ে থাকে, ফলে দেখতে পাবেন যারা অধিক ধূমপান করে তাদের মেজাজ কর্কশ, মুখে অকথ্য ভাষায় গালি-গালাজ, লেনদেনে দুর্ব্যবহার এবং স্ত্রীর সাথে ঝগড়া-ঝাটি ইত্যাদিতে লিপ্ত।
2. ধূমপায়ী কখনো কখনো সামান্য একটি সিগারেট বা বিড়ির জন্য অন্যের নিকট হাত বাড়িয়ে থাকে ফলে কখনো খালি হাতে ফিরতে হয়, বিষয়টি লজ্জার হলেও সে এটি লজ্জা মনে করে না অথচ তাকে হয়তো এক লোকমা খাবারের জন্য কখনো কারো নিকট হাত বাড়াতে দেখা যায়নি যদিও ঘরে কোনো খাবার না থেকে থাকে।
3. মহিলাদের ক্ষেত্রে ধূমপানে মুখের সৌন্দর্য নষ্ট হয় এবং মুখ দুর্গন্ধ হয়।

পরিশেষে বলব: সার্বিক দিক থেকে ধূমপান আপনার জন্য ক্ষতিকর। আপনার জীবন, স্বাস্থ্য, ধন-সম্পদ সব কিছুই আপনার নিকট রাখা আল্লাহর আমানত, তা রক্ষা করা আপনার একান্ত কর্তব্য। আপনি ইচ্ছা করলে অতি সহজেই তা ত্যাগ করতে পারেন। মানুষ পারে না এমন কোনো কাজ নেই, কথায় আছে না ‘‘সাধ্য থাকলে উপায় হয়’’ আপনার সাধ্যকেও কাজে লাগিয়ে দেখুন না একবার। যদি কাজ হয় তবে আমার জন্য দো‘আ করতে ভুলবেন না কিন্তু।

প্রমাণপঞ্জি:

১- আল কোরআন
২- বুখারীর শারহ ফাতহুল বারী, দারুস সালাম প্রকাশনী
৩- সহীহ মুসলিম নববীর শারহসহ, দারুল খাইর প্রকাশনী
৪- সহীহ জামে সগীর ও যিয়াদাহ, আল-মাকতাবুল ইসলামী প্রকাশনী
৫- মাসায়েল আনিস সিয়াম, দারু ইবনুল জাওযী প্রকাশনী
৬- তাযকীরুন নুফূসীন নাবীলাহ বি আদরারিশ শীশাহ…, দারুস সুমাই‘য়ী প্রকাশনী
৭- ফাতওয়া ও বিভিন্ন প্রবন্ধ, মাকতাবুল মাআরেফ প্রকাশনী
৮- ফাতাওয়া ইসলামিয়া, দারুল ওয়াতান প্রকাশনী
৯- স্থায়ী কমিটির ফাতাওয়া, দারু বালান্সিয়া, আসেমা প্রকাশনী
১০- ছুটি ও ভ্রমণ সম্পর্কে দিক-নির্দেশনা ও ফাতওয়া, দারু ইবনে খুযাইমা প্রকাশনী
১১- উন্মুক্ত সাক্ষাত, দারুল ওয়াতান প্রকাশনী
১২- ধূমপান ও তামাকের ক্ষেত্রে শরীয়তের ভূমিকা, দারুস সৌদীয়া প্রকাশনী
১৩- শাইখ সালেহ আল ফাউযানের নির্বাচিত ফাতাওয়া, মুআস্ সাসাতুর রিসালা প্রকাশনী
১৪- শাইখ সালেহ আল ফাউযানের সাপ্তাহিক সাক্ষাত নং ৪ তাসজীলাতুত তাক্বওয়াল ইসলামিয়া প্রকাশনী, রিয়াদ
১৫- ফাতাওয়া ও প্রবন্ধ সমষ্টি, দার সুরাইয়্যা প্রকাশনী
১৬- দঈফ জামে সগীর ও যিয়াদাহ, আল-মাকতাবুল ইসলামী প্রকাশনী
১৭- শাইখ আব্দুল্লাহ ইবন হুমাইদের ফাতাওয়া, দারুল কাসেম প্রকাশনী।

সূচীপত্র:

ভূমিকা:

1. ধূমপান ও হুক্কা পান এবং এ জাতীয় জিনিসের হুকুম
2. তামাক চাষ করা
3. তামাক দ্বারা চিকিৎসা করা
4. তামাক বিক্রি করা ও তামাক কোম্পানীতে কাজ করার হুকুম কী?
5. ব্যবসার অন্যান্য জিনিস থেকে তামাক জাতীয় জিনিস পৃথক করা
6. তামাক বিক্রির উপার্জন দ্বারা সদকা, হজ্জ এবং ভাল কাজ করার হুকুম কী?
7. তামাক বিক্রেতা ও তা পানকারীকে সহযোগিতা করা
8. ধূমপান থেকে নিষেধ করার সরকারী নির্দেশনা অমান্য করার বিধান কী?
9. ধূমপায়ীদেরকে উপদেশ দেওয়া এবং তাদের প্রতিরোধ করা
10. তামাক কোম্পানী এবং কারখানাগুলো বন্ধ করার কথা বলার হুকুম কী?
11. কারো আওতাধীন ধূমপায়ী কর্মচারীদের উপর নীরব থাকার হুকুম কী?
12. ধূমপায়ীদের সাথে উঠা বসা
13. ধূমপানের বাকী থাকা ঋণ পরিশোধ করার হুকুম
14. ধূমপান কি অযু ভঙ্গের কারণ?
15. ধূমপায়ীর আযান ও ইমামতির হুকুম
16. ছাত্রদের সামনে শিক্ষকের ধূমপান করার হুকুম
17. ধূমপায়ীর নিকট বিবাহ দেওয়া ও তার থেকে তালাক নেওয়া সংক্রান্ত বিধান
18. কোনো ব্যক্তি তার ধূমপায়িনী স্ত্রীর সাথে কী ব্যবহার করবে?
19. ধূমপান কি রোজা ভঙ্গকারী বিষয়?
20. মাসজিদ ও মাসজিদ সংলগ্ন রুমে ধূমপান করা
21. ধূমপানের সময় কুরআন পাঠ শুনা
22. যে ব্যক্তি ধূমপান ত্যাগ করার শপথ করেও আবার তা গ্রহণ করে তার কাফফারা বা জরিমানা
23. ধূমপায়ীর গ্রহণযোগ্যতা
24. ধূমপায়ীর জানাযার নামায
25. ধূমপান ত্যাগের সহায়ক কিছু কারণ
26. ধূমপানের ব্যাপারে কিছু বানোয়াট হাদীস
27. উপসংহার
28. ধূমপানের ক্ষতিসমূহ
29. প্রমাণপঞ্জি
30. সূচীপত্র

তথ্যসূত্র:

[1] মুসনাদে আহমদ, আলবানী হাদীসটি সহীহ বলেছেন , সহীহ জামে ৭৫১৭।
[2] বুখারী হাদীস নং ২৪০৮, মুসলিম হাদীস নং ১৭১৫।
[3] স্থায়ী কমিটির ফাতাওয়া (২২/২০৮)।
[4] উন্মুক্ত সাক্ষাৎকার। (৬৯/২০৬-২০৭)
[5] ফাতাওয়া ইসলামীয়্যা (৩/৪৪২-৪৪৩)
[6] ফাতাওয়া ইসলামিয়া (৩/৪৪৩)
[7] স্থায়ী কমিটির ফাতাওয়া- (১৩/৬৫)
[8] বুখারী: ১৪৭৭।
[9] ফাতাওয়া ইসলামিয়া – ৩/৪৪৩-৪৪৪ ।
[10] ইহা সূরা ইসরার ২৬ও ২৭ নং আয়াতের দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে
[11] ফাতাওয়া ইসলামিয়া: (৩/৪৪৬)
[12] স্থায়ী কমিটির ফাতাওয়া – ২২/২০৪-২০৫।
[13] স্থায়ী কমিটির ফাতাওয়া- ২২/১৪০-১৪১।
[14] স্থায়ী কমিটির ফাতাওয়া – ২২/১৪১-১৪২।
[15] স্থায়ী কমিটির ফাতাওয়া – ২২/ ১৯৯।
[16] স্থায়ী কমিটির ফাতাওয়া – ১৩/ ৬২।
[17] স্থায়ী কমিটির ফাতাওয়া – ২২/২০৩-২০৪।
[18] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১০১৫, ফাতাওয়া ইসলামিয়া ৪/৩১০-৩১১।
[19] ফাতাওয়া ইসলামিয়্যাহ ৪/৩১০-৩১১।
[20] ফাতাওয়া নং ১৮৪৪১, ২৫/১২/১৪১৬ হি।
[21] মুসনাদে আহমাদ ২/২৫।
[22] স্থায়ী কমিটির ফাতাওয়া – ১৪/৪৬০-৪৬১।
[23] স্থায়ী কমিটির ফাতাওয়া ২২/ ৩৪২।
[24] ইবন মাজাহ: ৭৯৩।
[25] আবু দাউদ: ৫১১।
[26] মুসলিম: ৬৫৩।
[27] স্থায়ী কমিটির ফাতাওয়া – ১৩/৬৩-৬৪।
[28] বুখারী: ১৩৬৩; মুসলিম: ১০৯।
[29] মুসলিম: ১০১৫।
[30] তাবারানী, মু‘জামুল আওসাত্ব: ৫২২৮।
[31] ফাতওয়া নং ৮৭২ প্রথম প্রশ্ন, ১৯৯৯ ইং। তবে এর সনদ খুবই দুর্বল।
[32] ফাতাওয়া নং (৮৭২) প্রশ্ন ৫।
[33] স্থায়ী কমিটির ফাতাওয়া – ১৩/ ৫৯-৬২।
[34] মুসলিম: ১০১৫।
[35] ফাতাওয়া ইসলামিয়া ২/৩৬৯, ও স্থায়ী কমিটির ফাতাওয়া ১৩/ ৫৫।
[36] উন্মুক্ত সাক্ষাৎ নং ১৯ পৃ : ৫৪-৫৫।
[37] নাসাঈ: ৪২০৫ ও অন্যান্যগণ, আলবানী সহীহ জামেতে এটাকে সহীহ বলেছেন হা: ৭৫১৯।
[38] আহমাদ ও হাকেম, আলবানী সহীহ জামেতে এটিকে সহীহ বলেছেন। হা: ৭৫১৯। আরও দেখুন, শারহুস সুন্নাহ ১০/৪৪।
[39] স্থায়ী কমিটির ফাতাওয়া – ২২/ ১৮৬-১৮৭।
[40] ফাতাওয়া নং ৮৭২, প্রশ্ন ৩।
[41] ফাতাওয়া ইসলামিয়া ৪/ ৫২১।
[42] স্থায়ী কমিটির ফাতাওয়া – ১৪/ ৪৪৯-৪৫০।
[43] স্থায়ী কমিটির ফাতাওয়া – ২২/ ১৪৬-১৪৭।
[44] স্থায়ী কমিটির ফাতাওয়া – ২২/ ২০৬।
[45] ফাতাওয়া ও দিক নির্দেশনা পৃ: নং ৯১।
[46] ফাতাওয়া নং ৮৭২ প্রশ্ন নং ৮।
[47] আহমাদও অন্যান্যগণ, আলবানী সহীহ বলেছেন, জামে সহীহ – ৬০৪৪।
[48] ফাতাওয়া ইসলামিয়া ৪/ ৩১৯।
[49] মুসলিম: ৫৫।
[50] দেখুন: সাপ্তাহিক সাক্ষাৎ চতুর্থ ক্যাসেট প্রথম পৃষ্টা।
[51] ফাতাওয়া ইসলামিয়া ৩/ ৪৭৬।
[52] মুসলিম: ৫৫।
[53] ফাতাওয়ার দ্বিতীয় প্রশ্ন নং ৭৮২।
[54] স্থায়ী কমিটির ফাতাওয়া ১২/৩৪১-৩৪২।
[55] আল মুনতাকা ২/ ২৬৪।
[56] স্থায়ী কমিটির ফাতাওয়া ১৪/ ৬৯-৭০।
[57] স্থায়ী কমিটির ফাতাওয়া ৫/২৮৫।
[58] স্থায়ী কমিটির ফাতাওয়া ১৩/৫৭।
[59] ফাতাওয়া ইসলামিয়া ১/৩৯১-৩৯২।
[60] মাজমুয়া ফাতাওয়া ও প্রবন্ধ ১২/১৬৭।
[61] হাদিসটি তাবরানী তাঁর মু‘জামুল কাবীরে বর্ণনা করেছেন, অনুরূপ আবু নুয়াইম তাঁর হিলিয়া গ্রন্থে। তবে তা দ্বয়ীফুল জামেতে রয়েছে, নং ৩৪৮৩।
[62] ফাতাওয়া ইবনে হুমাইদ পৃ : ১২।
[63] ফাতাওয়া ইবনে হুমাইদ পৃ : ১২৭-১২৮।
[64] মুসলিম: ১০১৭।
[65] ফাতাওয়া নং ৮৭২ প্রশ্ন নং ৪।
[66] ধূমপান ও তামাকের ব্যাপারে শরীয়তের ভূমিকা পৃ : ১৩২-১৩৩।
[67] স্থায়ী কমিটির ফাতাওয়া ১৮/১৮৮।
[68] ফাতাওয়া ইসলামিয়া ৩/২১৮।
[69] মাজমুয়া ফাতাওয়া ও প্রবন্ধ ১৯/ ২০২-২০৩।
[70] মাজমুয়া ফাতাওয়া ও বিভিন্ন প্রবন্ধ ৬/১৬২-১৬৩।
[71] স্থায়ী কমিটির ফাতাওয়া ২২/১৮৩-১৮৪।
[72] মুসলিম: ১৯৭৮।
[73] মুসনাদে আহমদ, আলবানী হাদীসটি সহীহ বলেছেন, সহীহ জামে ৭৫১৭।
[74] তিরমিযী: ১৯৪১; এটি আবু বাকরা রাদিয়াল্লাহু আনহুর মাধ্যমে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করছেন। তবে এটি দুর্বল হাদীস। [সম্পাদক]
[75] সূরা মায়েদার ৮৯ নং আয়াতের দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে।
[76] ফাতাওয়া ইসলামিয়্যাহ ৩/২১৭-২১৮।
[77] স্থায়ী কমিটির ফাতাওয়া ২০/১৮২-১৮৩।
[78] ফাতাওয়া ইসলামিয়া: ৩/৪৭৬।
[79] স্থায়ী কমিটির ফাতাওয়া ২৩/১৫৬-১৫৭।
[80] ফাতাওয়া ও দিক নির্দেশনা পৃ: ৯১।
[81] স্থায়ী কমিটির ফাতাওয়া ২৩/৫১৬।
[82] স্থায়ী কমিটির ফাতাওয়া ৮/৪১২।
[83] স্থায়ী কমিটির ফাতাওয়া ২২/১৭৭-১৭৮।
[84] ফাতাওয়া ইসলামিয়া ৪/৪৫৭-৪৫৮।
[85] ফাতাওয়া ও দিকনির্দেশনা পৃ:৮৯-৯০।
[86] স্থায়ী কমিটির ফাতাওয়া ২২/ ১৯৮।
[87] মুসনাদে আহমাদ, তিরমিযী ও জিয়াউল মাকদেসী, জামে সহীহতে আলবানী সহীহ বলেছেন নং ৬৫৪১।
[88] এই “ধূমপানের ক্ষতিসমূহ” ‘মোহাম্মদ জামীল যায়নু’—এর “ইসলামিক দিক নির্দেশনা” নামক বই থেকে কিছু কম-বেশী করে সংকলন করা হয়েছে।
_________________________________________________________________________________

সংকলন: ‘আমের সালেহ আলাওয়ী নাজী
অনুবাদ: মোহাম্মদ ইদরীস আলী মাদানী
সম্পাদনা: ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া
সূত্র: ইসলামহাউজ

এ সম্পর্কিত আরও পোস্ট

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to top button