বিশ্বকাপ ফুটবল: ইসলামী দৃষ্টিকোণ
কাতার ফুটবল বিশ্বকাপ ২০২২! যার জ্বরে কাঁপছে পুরো বিশ্ব। যে উন্মাদনায় উত্তাল এখন পুরো দেশ। বাংলাদেশ ৯০ ভাগ মুসলিমের দেশ হলেও, আমাদের ঈমান আকিদা এখনো পরিপূর্ণ ইসলামের ভিত্তিতে রূপান্তরিত হতে পারেনি। যেকারণে ইহুদী খ্রিস্টানদের উৎসব গুলোতে আমাদের অংশগ্রহণ আজ দূষণীয় কিছু নয়।
যদিও অধিকাংশেরই বেশী নামধারী মুসলমান এর সাথে একমত নন! তাদের আপত্তি হলো, যেখানে সেখানে ইসলামকে টেনে আনা একধরনের মৌলবাদী চিন্তাধারা। তাদের যুক্তি হলো খেলাধুলা একধরনের বিনোদন। সুতরাং এখানে ধর্মকর্ম টেনে আনা মানেই আমি ব্যাকডেট!
কিন্তু ইসলাম যদি তাঁর অনুসারীদের মৌলবাদী হতে শিক্ষা দেয়, তাহলে মৌলবাদী হওয়াটাই হচ্ছে ঈমান। আজ যারা এই খেলাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন দেশ জাতি ব্যক্তিকে সমর্থন, অনুকরণ, অনুসরণ এবং বন্ধুত্বের সম্পর্ক তৈরি করেছে ; তাদের জেনে রাখা উচিত বিধর্মীদের সমর্থন, অনুসরণ ও বন্ধুত্ব করা ইসলাম আসলেই সমর্থন করে কিনা?
আজ আমরা কুরআন এবং সহিহ হাদিসের আলোকে জানার চেষ্টা করবো, বিশ্বকাপে আমরা যাদের সমর্থন, অনুসরণ, অনুকরণ এবং বন্ধুত্ব করছি; তা কতটুকু জায়েজ এবং হালাল।
আল্লাহ্ পবিত্র কুরআনে অসংখ্য আয়াতে নির্দেশ দিয়েছেন, “তোমরা আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূল সা: এবং মুমিন ঈমানদারের সাথে বন্ধুত্ব করো।” একইসাথে এও বলা হয়েছে, কাদের এবং কার কার সাথে বন্ধুত্ব করা যাবেনা। যেমন: সূরা মায়েদার ৫১ নং আয়াতে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, “তোমরা ইুহুদী খ্রিস্টানদের বন্ধু রূপে গ্রহণ করিও না।” একইসাথে সূরা আল ইমরানের ২৮ নং আয়াতে বলা হচ্ছে “মুমিনগন যেন অন্য মুমিনকে ছেড়ে কোনো কাফেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ না করে। যারা এরূপ করবে আল্লাহর সাথে তাদের কেন সম্পর্ক থাকবে না।” একই সূরা ১১৮ নং আয়াতেও বলা হচ্ছে “হে ঈমানদারগণ! তোমরা মুমিন ব্যতীত অন্য কাউকে অন্তরঙ্গরূপে গ্রহণ করো না।” এছাড়াও সূরা আন-নিসা: ১৪৪ নং আয়াতেও বলা হচ্ছে “হে ঈমানদারগণ! তোমরা কাফেরদেরকে বন্ধু বানিও না মুসলমানদের বাদ দিয়ে।” সূরা মায়েদা ১৫৭ নং আয়াতে আল্লাহ্ বলেন। “হে মুমিনগণ, তোমরা তাদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না, যারা তোমাদের দীনকে উপহাস ও খেল-তামাশারূপে গ্রহণ করেছে“
উপরোক্ত আয়াত ছাড়াও অসংখ্য আয়াতে আল্লাহ্ সুস্পষ্টভাবে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন বিধর্মীদের ব্যাপারে। যাতে কোন ঈমানদার কখনোই তাদেরকে বন্ধু না বানায় কিংবা বন্ধুত্ব বা সমর্থন না করে। এখন অনেকেই প্রশ্ন করতে পারেন, দল সমর্থন করলেই কি তাদের সাথে বন্ধুত্ব হয়ে গেল! তাদের প্রতি জিজ্ঞাসা হলো, তাহলে কেন তাদের সমর্থন করছেন? উত্তরে তারা বলবে দলের খেলা সুন্দর তাই তাদের সমর্থন করি (যদিও খেলাধুলা নিয়ে ইসলামের নীতিমালা এখানে আলোচ্য বিষয় নয়)। একইসাথে খেলোয়াড়দের পছন্দ করি বলেই দল সমর্থন করি। দল এবং ব্যক্তির প্রতি এই সহমর্মিতা, হেরে গেলে সমবেদনা ইত্যাদিই হচ্ছে তাদের প্রতি সমর্থন ও ভালোবাসা। আর সমর্থন এবং ভালোবাস তখনই সৃষ্টি হয়, যখন তাদের সাথে বন্ধুত্বের সম্পর্ক সৃষ্টি হয়।
আজ আমরা শুধু যে তাদের সমর্থন করছি তা নয়। বরং তাদেরকে অনুসরণ অনুকরণ করছি প্রতিটি পদে পদে। বিভিন্ন দেশের পতাকা জার্সি ইত্যাদি তৈরি করে পরিধান করছি। তাদের মতো করেই চুল থেকে শুরু করে পোশাক-আশাক চাল-চলন ইত্যাদিসহ সবকিছুতেই বিধর্মী কাফির মুশরিকদের ছায়া আমরা অবলম্বন করি। যা ইসলামে সুস্পষ্ট নাজায়েজ।
আল্লাহ্ বলেন, “তোমরা (মুসলমানগণ) কাফির ও মুনাফিকদের অনুসরণ-অনুকরণ করো না।” (আহযাব : ৪৮) এই আয়াত ছাড়াও আরো অসংখ্য আয়াতে আল্লাহ্ কাফির মুশরিক বিধর্মীদের অনুসরণ অনুকরণ করতে নিষেধ করেছেন। শুধু তাইনয় পবিত্র হাদিসে রাসুলুল্লাহ সা: স্পষ্ট করে বলে দিয়েছেন, “যে ব্যক্তি কোনো জাতির অনুকরণ, অনুসরণ ও সামঞ্জস্য বিধান করবে, সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত বলে গণ্য হবে”। (ইমাম আহমাদ, আল-মুসনাদ: ২/৫০; আবু দাউদ রহ. বর্ণনা করেছে উৎকৃষ্ট সনদে, হাদীস নং- ৪০৩১)
সুতরাং কোনো ঈমানদার যদি বিধর্মীদের অনুসরণ অনুকরণ করে তাহলে সে ঐ বিধর্মী জাতিরই অন্তর্ভূক্ত হবে। এছাড়াও আমাদের দেশে বিভিন্ন দলকে সাপোর্ট করতে গিয়ে এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে যে, ভাইয়ে ভাইয়ে মারামারি রক্তারক্তি পর্যায়ে পৌঁছে যায়। দলকে সমর্থন করতে গিয়ে তাদের এই ভালোবাসা তাদেরকে জাহান্নামে নিয়ে যাচ্ছে। তারা তা টেরই পাচ্ছে না।
মুসলিম হাদিসসহ আরো অসংখ্য সূত্রে এসেছে- আল্লাহর রাসুল সা: বলেছেন, “যার সাথে যার বন্ধুত্ব তার সাথে তার হাশর।” অর্থাৎ যে ব্যক্তি যাকে ভালোবাসবে তার সাথেই তার কিয়ামত হবে। যদি কেউ ভালো মানুষের সাথে সম্পর্ক করে এবং তাকে ভালোবাসে তাহলে ঐ ব্যক্তিও সেই ভালো মানুষের সাথেই থাকবে।
এখন আমরা যারা এইসব বেদ্বীন কাফির মুশরিকদের সমর্থন করছি, অনুকরণ অনুসরণ করছি ; আমাদের অবস্থা কী হবে? একবারও কি চিন্তা করেছি? রাসুল সা: জীবনী থেকে আমরা জানতে পারি, তিনি প্রতিনিয়তই বেদ্বীন কাফির মুশরিকদের থেকে দূরে থাকার এবং তাদের সাথে সাদৃশ্যে হয় এমন কাজ না করার তাগিদ দিয়েছেন।
শুধু তাইনয়, তিনি আগে থেকেই জানতেন যে আমাদের অবস্থা এমনই হবে যে, আমরা কাফির মুশরিকদের অনুসরণ অনুকরণসহ তাদের সাথে হৃদ্যতা পোষণে পিছপা হবো না। তাই তিনি আগেই উল্লেখ করে গেছেন যা বুখারী মুসলিমসহ অসংখ্য হাদিস গ্রন্থে উল্লেখ রয়েছে। আর তা হলো “তোমরা অবশ্যই তোমাদের পূর্ববর্তীদের (অর্থাৎ ইহুদী খ্রিস্টানদের) রীতিনীতি পুরোপুরি অনুসরণ করবে, প্রতি বিঘতে বিঘতে এবং প্রতি গজে গজে। এমনকি তারা যদি ষাণ্ডার গর্তেও প্রবেশ করে থাকে, তবে তোমরাও তাতে প্রবেশ করবে।
সুতরাং আমরা যারা বিশ্বকাপ নিয়ে এতো উল্লসিত এবং আনন্দিত, তাদের একবার হলেও চিন্তা করা উচিত আমরা আসলেই কী করছি? আমরা যা করছি তাতে কি আমাদের ঈমান আর অবশিষ্ট রয়েছে?
অতএব আমাদের এখনই উচিত বিধর্মী কাফের মুশরিকদের সাথে বন্ধুত্ব ছিন্ন করা। কেননা এই বন্ধুত্বই আমাদের তাদের সাথে জাহান্নামে নিয়ে যাবে। এতো দলিল প্রমাণাদি পাওয়ার পরও যদি কোনো মুসলিম ভাই তাদের সমর্থন অনুসরণ অনুকরণ করেন। তাহলে তাদের জন্য রয়েছে পবিত্র কুরআনের একটি আয়াত। আল্লাহ্ বলেন, “আর কারো নিকট সৎপথ প্রকাশ হওয়ার পর সে যদি রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ করে এবং মুমিনদের পথ ছাড়া অন্য পথ অনুসরণ করে, তবে যেদিকে সে ফিরে যায়, সে দিকেই তাকে আমরা ফিরিয়ে দেব এবং তাকে জাহান্নামে দগ্ধ করাব, আর তা কতই না মন্দ আবাস!” (সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১১৫)
অর্থাৎ যারাই উপরোক্ত দলিলাদি পাওয়ার পরও আল্লাহ্, রাসুল সা: এবং মুমিনদের পথ অনুসরণ না করে বিধর্মীদের দিকে ফিরে গিয়ে তাদের সাথে হৃদ্যতা করবে। আল্লাহ্ তাদেরকে সেদিকেই ব্যস্ত রাখবেন এবং কাফির মুশরিকদের সাথে জাহান্নামে প্রেরণ করবেন।
ভাবতে অবাক লাগে, গত কয়েকদিন আগে এই বাংলাদেশেই লক্ষ লক্ষ আশেকে রাসুল দাবিদারেরা রাসুল সা: এর জন্মবার্ষিকী পালন করেছে তাও বিধর্মীদের অনুসরণে! এই সেই আমরা যারা রাসুলের প্রতি কৃত্রিম ভালোবাসা দেখাতে গিয়ে রাস্তায় রাস্তায় লক্ষ লক্ষ আশেক নেমে মিছিল করছি! অথচ রাসুলের জীবনাদর্শের কোনো ছিটেফোঁটাও আমাদের মাঝে নেই।
আরও দেখুন: পাবলিক প্লেসে মোবাইল ব্যবহারের শালীনতা
যে রাসুল সা: বিধর্মীদের সাথে বন্ধুত্ব অনুসরণ অনুকরণ ইত্যাদি করতে নিষেধ করে দিয়েছেন। সেই রাসুলেরই আশেক দাবিদারেরা আজ বিধর্মীদের জয় পরাজয়ে আনন্দ, উল্লাস, হাসি, কান্না, বেদনা, শত্রুতা এবং হিংস্রতা করতেও দ্বিধা করছি না। এই হচ্ছে আমাদের ঈমানের অবস্থা!
আসুন আমরা কুরআন হাদিসের আলোকে জীবনযাপন করি এবং বিধর্মীদের অনুসরণ অনুকরণ সমর্থন এবং বন্ধুত্ব না করি। যাতে আমরা আল্লাহ্ আযাব থেকে মুক্তি পেতে পারি। আল্লাহ্ আমাদের হিদায়াত দান করুন আমিন।
সাখাওয়াতুল আলম চৌধুরী।