যুগে যুগে বিভিন্ন ধর্ম ও সম্প্রদায়ে রোযা

সাওম বা রোযা নাম ও ধরণভেদে বিভিন্ন জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে বহুল প্রচলিত একটি ধর্মীয় বিধান, যা মুসলিমদের জন্য অবশ্য পালনীয় (ফরয) একটি ইবাদত। শেষ নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শরীয়তে যেমন আল্লাহর পক্ষ থেকে সাওমের বিধান দেওয়া হয়েছে, তেমনি সাওমের বিধান দেওয়া হয়েছিল পূর্ববর্তী নবীদের শরীয়তেও; পূর্ববর্তী জাতিগুলোর ধর্ম-কর্মেও। আসমানী ধর্ম ছাড়াও মানব রচিত বিভিন্ন ধর্ম ও সম্প্রদায়ে সাওমের বিধান রয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ كُتِبَ عَلَيۡكُمُ ٱلصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى ٱلَّذِينَ مِن قَبۡلِكُمۡ لَعَلَّكُمۡ تَتَّقُونَ ١٨٣﴾ [البقرة: ١٨٣]
“হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর সাওম ফরয করা হয়েছে। যেরূপ ফরয করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের ওপর। যেন তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পার।” [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৮৩]
এ আয়াত দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, পূর্ববর্তী প্রত্যেক নবী ও প্রত্যেক জাতির মধ্যেই প্রচলিত ছিল ‘সাওম’ বা রোযা নামের এই ধর্মানুষ্ঠান।

তাফসীরে কুরতুবীতে উক্ত আয়াতের ব্যাখায় বলা হয়েছে,
الْمَعْنَى:كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيامُ أَيْ فِي أَوَّلِ الْإِسْلَامِ ثَلَاثَةَ أَيَّامٍ مِنْ كُلِّ شَهْرٍ وَيَوْمَ عَاشُورَاءَ، كَما كُتِبَ عَلَى الَّذِينَ مِنْ قَبْلِكُمْ وَهُمُ الْيَهُودُ- فِي قَوْلِ ابْنِ عَبَّاسٍ- ثَلَاثَةَ أَيَّامٍ وَيَوْمَ عَاشُورَاءَ. ثُمَّ نُسِخَ هَذَا فِي هَذِهِ الْأُمَّةِ بِشَهْرِ رَمَضَانَ. وَقَالَ مُعَاذُ بن جبل: نسخ ذلك ب أَيَّامٍ مَعْدُوداتٍ ثُمَّ نُسِخَتِ الْأَيَّامُ بِرَمَضَانَ.
“আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমার মতে, ইসলামের প্রাথমিক যুগে প্রত্যেক মাসে তিন দিন ও আশুরার দিনে সাওম ফরয ছিল, যেমনিভাবে তোমাদের পূর্ববর্তী ইয়াহূদী সম্প্রদায়ের ওপর মাসে তিন দিন ও ‘আশুরার দিনে সাওম ফরয ছিল। পরবর্তীতে রমযান মাসের দ্বারা এ সাওম রহিত হয়। মু‘আয ইবন জাবাল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, উক্ত তিন দিনের সাওম নির্দিষ্ট কয়েক দিনের সাওমের দ্বারা রহিত হয়। অতঃপর উক্ত কয়েক দিনের সাওম আবার রমযানের সাওম দ্বারা রহিত হয়।

ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«صَامَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَاشُورَاءَ، وَأَمَرَ بِصِيَامِهِ فَلَمَّا فُرِضَ رَمَضَانُ تُرِكَ»، وَكَانَ عَبْدُ اللَّهِ لاَ يَصُومُهُ إِلَّا أَنْ يُوَافِقَ صَوْمَهُ»
“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘আশুরার দিন সাওম পালন করেছেন এবং এ সিয়ামের জন্য আদেশও পালন করেছে। পরে যখন রমযানের সাওম ফরয হলো তখন তা ছেড়ে দেওয়া হয়। ‘আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু এ সাওম পালিন করতেন না, তবে মাসের যে দিনগুলোতে সাধারন সাওম পালন করতেন, তাঁর সাথে মিল হলে করতেন।

আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«أَنَّ قُرَيْشًا كَانَتْ تَصُومُ يَوْمَ عَاشُورَاءَ فِي الجَاهِلِيَّةِ، ثُمَّ أَمَرَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِصِيَامِهِ حَتَّى فُرِضَ رَمَضَانُ، وَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ شَاءَ فَلْيَصُمْهُ وَمَنْ شَاءَ أَفْطَرَ»
“জাহেলী যুগে কুরাইশগন ‘আশুরার দিন সাওম পালন করত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও পরে এ সাওম পালনের নির্দেশ দেন। অবশেষে রমযানের সাওম ফরয হলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যার ইচ্ছা ‘আশুরার সাওম পালন করবে এবং যার ইচ্ছা সে সাওম পালন করবে না।”

এ সম্পর্কিত আরও পোস্ট

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to top button